এমপিপুত্রের খুন

ঋণের চাপে জর্জর স্বামীহারা সালমা

আশিক আহমেদ
 | প্রকাশিত : ৩১ জানুয়ারি ২০১৯, ০৮:৪৪
ইস্কাটনে জোড়া খুনের আসামি এমপিপুত্র রনি

স্বামী হত্যার মামলা চালাতে গিয়ে ঋণে জর্জরিত সালমা বেগম। কোনোভাবে খেয়ে না খেয়ে অসহায় দিন কাটাচ্ছেন তিনি। সালমা রাজধানীর নিউ ইস্কাটনে জোড়াখুনে নিহত রিকশাচালক ইয়াকুব আলীর স্ত্রী। ওই জোড়া খুনের দায়ে সাবেক সাংসদ পিনু খানের ছেলে বখতিয়ার আলম রনির যাবজ্জীবন কারাদ-ের আদেশ দিয়েছে আদালত। তবে চাঞ্চল্যকর এ মামলায় নিহত দুজনের পরিবার রায় ঘোষণার বিষয়ে জানত না। গতকাল রায় ঘোষণার সময় তাদের কেউ আদালতেও ছিলেন না।

২০১৫ সালের ১৩ এপ্রিল মধ্যরাতে নিউ ইস্কাটনে মদ্যপ রনির গুলিতে মারা যান নিরীহ দুই ব্যক্তি। তাদের একজন রিকশাচালক ইয়াকুব আলী। তার মৃত্যুর পর দিশেহারা জীবন কাটছে স্ত্রী সালমা বেগমের। সবুজবাগের নন্দীপাড়ায় খেয়ে না খেয়ে কোনোভাবে দিন কাটাচ্ছেন মধ্যবয়সী এই নারী।

গতকাল রায় ঘোষণার পর সালমা বেগমের সঙ্গে ফোনে কথা হয় এ প্রতিবেদকের। রায়ের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, রায় হবে তিনি জানতেন না। প্রতিবেদকের কাছে রনির যাবজ্জীবন সাজার খবর শুনে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। জানান, এই রায়ে তিনি সন্তুষ্ট নন।

সালমা বেগম বলেন, ‘আমার স্বামীর উপার্জনেই সংসার চলত। একমাত্র মেয়ের বিয়ে হয়েছে। তারাও আমার খোঁজ নেয় না। আগে কোনোভাবে মানুষের বাসায় কাজ করে জীবন চালাতাম। এখন অসুস্থ হয়ে কাজও করতে পারছি না।’

‘এভাবে আমার নিরীহ স্বামীর প্রাণ গেল। মামলা চালাতে ধারদেনা করে দুই লাখ টাকার বেশি ঋণ হয়েছে। এই টাকা কীভাবে ফেরত দেব? রায় হয়েছে জানলামও না। আপনার কাছে শুনলাম। এ রায়ে আমি খুশি নই। এতদিন কষ্ট করলাম আর রায়ের দিন আদালতে যেতে পারলাম না।’

আসামিপক্ষ থেকে মামলার বিষয়ে কোনো ধরনের হুমকি এসেছিল কি না জানতে চাইলে সালমা বেগম বলেন, ‘আাসামিপক্ষ থেকে কেউই আমাকে কোনো ধরনের হুমকি দেয়নি। তবে আসামির বড় ভাই মামলার রায় হওয়ার পর আমাকে আর্থিকভাবে সহযোগিতা করবে বলেছিলেন। কিন্তু এখনো একটি টাকাও পাইনি। অসুস্থ শরীর নিয়ে আমি এখন অসহায় জীবনযাপন করছি।’

উল্লেখ্য, ইস্কাটনে গাড়ি থেকে মদ্যপ রনির এলোপাতাড়ি ছোড়া গুলিতে রিকশাচালক আবদুল হাকিম ও অটোরিকশাচালক ইয়াকুব আলী গুরুতর আহত হন। পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২০১৫ সালের ১৫ এপ্রিল হাকিম এবং ২৩ এপ্রিল ইয়াকুব মারা যান। এ ঘটনায় হাকিমের মা মনোয়ারা বেগম ওই বছরের ১৫ এপ্রিল রমনা থানায় রনিকে একমাত্র আসামি করে মামলা করেন।

সূত্রবিহীন এই মামলায় তথ্যপ্রযুক্তি ও দৈনিক জনকণ্ঠ পত্রিকার ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরার (সিসি) সহায়তায় সাংসদ-পুত্রের প্রাডো গাড়ি এবং তার অবস্থান সম্পর্কে নিশ্চিত হয় পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)। গাড়ির সূত্র ধরে একই বছরের ৩০ মে এলিফ্যান্ট রোডের বাসা থেকে রনিকে গ্রেপ্তার করে ডিবি পুলিশ। এরপর থেকে তিনি কারাগারে আছেন।

গতকাল ঢাকার দ্বিতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ মঞ্জুরুল ইমাম এ রায় ঘোষণা করেন। রায়ে যাবজ্জীবনের পাশাপাশি ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেছে আদালত এবং অনাদায়ে আরও ছয় মাসের কারাদ-ের আদেশও দিয়েছে।

সংবাদটি শেয়ার করুন

জাতীয় বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

জাতীয় এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :