ময়ূর নদী বাঁচাও

শেখ আবু হাসান, খুলনা
 | প্রকাশিত : ৩১ জানুয়ারি ২০১৯, ০৮:৫১

খুলনার ধমনিস্বরূপ ময়ূর নদীতে এখন আর কোনো নাইওরি নাও ভাসে না। জলকে চলে না কোনো পল্লীবালা। পণ্য ও যাত্রীবোঝাই করে কোনো নৌকা বা লঞ্চ ঘাটে ভেড়ে না। হয় না নৌকাবাইচও। ময়ূর নদীর এসব ঐতিহ্য হারিয়ে এখন শুধুই স্মৃতি আর ইতিহাস।

বর্ষায় দুই পাড়ের মানুষ নদীর ভেতর বাঁশের মাচার পায়খানা তৈরি করেন। শৈবাল বাসা বেঁধেছে, মহানগরীর যাবতীয় তরল ও কঠিন বর্জ্য নিষ্কাশনও হচ্ছে। প্রতিদিন টনকে টন ময়লা-আর্বজনা ফেলায় পানি সম্পূর্ণ দূষিত ও ভরাট, পরিবেশ দুর্গন্ধময় আর্বজনাবৃত, নোংরা বদ্ধ জলাশয় ও ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে ময়ূর। সুন্দর এই নদীটি এভাবেই তিলে তিলে মরছে।

মূল নদী ভৈরবের শাখা এই নদীটির দৈর্ঘ্যে ১৫-২০ কিলোমিটার, প্রস্থে ৬০-১২০ ফুট। একদা ময়ূরের গভীরতা ছিল ৫ থেকে ৭ মিটার, আবহমানকাল ধরে প্রাকৃতিক নিষ্কাশন হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছিল। শহরের অসংখ্য খালের মাধ্যমে অতিরিক্ত পানি ¯্রােতস্বিনী এই নদীতে গিয়ে পড়ত। নিয়মিত জোয়ার-ভাটায় পানি আসা-যাওয়ার মধ্যে শহরের জলাবদ্ধতা ও দূষণমাত্রা শূন্যের কোটায় থাকত।

প্রবীণরা বলছেন, নি¤œভূমি উদ্ধারের নামে ষাটের দশকের গোড়ার দিকে পানি উন্নয়ন বোর্ড বটিয়াঘাটা উপজেলার তেঁতুলতলায় ময়ূর নদীর শহরের প্রবেশমুখে ১০ গেটের স্লুইস গেট নির্মাণ করে। এর ফলে ¯্রােতস্বিনী নদীটি জলাশয়ে পরিণত হয়, হারিয়ে যায় ¯্রােতস্বিনী রূপ, রুদ্ধ হয় গতিপথ। দুই তীরে বসতি স্থাপনকারী লক্ষাধিক মানুষের পয়ঃনিষ্কাশনের সহজ স্থানে পরিণত হয় সুন্দর নদীটি। গড় ওঠে অসংখ্য কাঁচা পায়খানা, কিছু কিছু কলকারখানা ও একটি ট্যানারি। বিপুল বর্জ্যরে ভারে নুয়ে পড়ে ময়ূর নদী।

সরেজমিন দেখা গেছে, গল্লামারী ব্রিজলাগোয়া খুলনা সিটি করপোরেশনের বৃহত্তম কসাইখানায় প্রতিদিন কয়েক শ জবাই করা পশুর যাবতীয় বর্জ্যও এই নদীতে ফেলা হচ্ছে। স্থানীয় বাসিন্দা এবং করপোরেশনের ফেলা বর্জ্যে ইতোমধ্যে গল্লামারী ব্রিজের আশপাশে ও গোড়ায় নদী ভরাট হয়ে গিয়েছে। নতুন করে পুরনো ব্রিজলাগোয়া আরেকটি অপরিকল্পিত ব্রিজ নির্মাণ করায় নদীর পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে।

এলাকার পরিবেশ উন্নয়ন, ময়ূর নদী রক্ষা ও নগরীর ২২টি খালের অবৈধ দখল উচ্ছেদ করে নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে দীর্ঘদিন ধরে ‘ময়ূর নদী বাঁচাও’ আন্দোলন করে আসছে বৃহত্তর খুলনা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটি। গত ২১ জানুয়ারি নগর ভবনের সামনে অবস্থান ধর্মঘট করে সিটি মেয়রকে ও ২২ জানুয়ারি খুলনার জেলা প্রশাসককে স্মারকলিপি দেয়।

সমন্বয় কমিটির মহাসচিব শেখ আশরাফ-উজ-জামান বলেন, নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে অবিলম্বে ময়ূর নদী খনন করে দুই পাড়ে হাঁটার পথ (ওয়াকওয়ে) নির্মাণ করতে হবে। বর্জ্য ফেলা বন্ধ ও দূষণমুক্ত করে নদীর এবং অবৈধ দখলমুক্ত করে সব খালের স্বাভাবিক প্রবাহ ফিরিয়ে আনতে হবে।

খুলনা সিটি করপোরেশনের চিফ প্লানিং অফিসার আবির উল জব্বার জানান, ‘শহরের জলাবদ্ধতা দূরীকরণে ড্রেনেজ ব্যবস্থা উন্নয়ন’ প্রকল্পের আওতায় ময়ূর ও খুদে নদী খনন করে পানিপ্রবাহ সচলের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। অনুমোদন পাওয়া এই প্রকল্পের কাজ খুব শিগগিরই শুরু হবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসন ছাড়াও মূয়র নদীর প্রবাহ স্বাভাবিক হয়ে আসবে।

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বাংলাদেশ এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :