বন্ধের পথে ঠাকুরগাঁওয়ের পাঁচ শতাধিক তাঁত

প্রকাশ | ৩১ জানুয়ারি ২০১৯, ১১:৩৯

বদরুল ইসলাম বিপ্লব, ঠাকুরগাঁও

এক সময় পাঁচ শতাধিক তাঁতের খটখট শব্দে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার কেশুরবাড়ি এলাকা মুখরিত হলেও এখন পুঁজির অভাবে তা প্রসারিত হচ্ছে না। পৈত্রিক পেশা ছাড়তে না পারায় ধার দেনা করে কোনোমতে টিকে রয়েছেন তাঁতিরা। অনেকে লোকসানে মহাজনের ভয়ে সংসার ছেড়ে পালিয়ে হয়েছেন এলাকা ছাড়া। কেউ আবার অন্যত্র আয় করে বাড়িতে পাঠিয়ে কমাচ্ছেন ধার দেনা। কিছু তাঁতি পরিবারের সদস্য বিভিন্ন বেসরকারি এনজিও থেকে ঋণ ও স্থানীয় মহাজনদের কাছে সুদের টাকা নিয়ে দিন-রাত শীতের কম্বল তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করলেও এ পেশায় আগ্রহ কমে যাচ্ছে অনেকের।

গত বছর গ্রামটিতে এই সময়ে কম্বল কিনতে পাইকাররা ভিড় জমালেও এ বছর তেমন খবর নেই। ফলে ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন তাঁতিরা। তারপরেও স্বল্প লাভে কিছু বিক্রি করলেও পুঁজির অভাবে কম্বল তৈরি করে মজুদ করতে পারছেন বলে জানান তারা।

সরেজমিনে জানা যায়, নানা প্রতিকূলতা সত্ত্বেও এখানকার পাঁচ শতাধিক পরিবারের প্রায় ১২শ মানুষ বংশানুক্রমে তাঁত শিল্পের সঙ্গে জড়িত। তারা আগে শাড়ি-লুঙ্গি তৈরি করলেও বর্তমানে শুধু কম্বল তৈরি করে জীবিকা নির্বাহ করছেন। গ্রামের প্রতিটি বাড়িতেই দুই-তিনটি করে তাঁত রয়েছে। এর কোনোটা চাকাওয়ালা, আবার কোনোটা একেবারেই বাঁশ-কাঠ দিয়ে তৈরি। কম্বল তৈরি করায় কারও তাঁত সচল আর কোনোটা অচল হয়ে পড়েছে।

কেশুরবাড়ি তাঁতপল্লীর ছত্রমহন নামে এক তাঁতি বলেন, সুতার দাম এখন অনেক বেশি। শীত কম থাকায় কম্বলও বেশি বিক্রি হয় না। এই কম্বল বিক্রির টাকায় সুদের টাকা পরিশোধ করে ধার দেনার মধ্যে কোনোমতে চলছে সংসার। ছোট থেকেই এই কাজ করে আসছি। এখন ছেলে-মেয়েরাও এ কাজ করছে। বংশের সবাই এই কাজের সঙ্গে জড়িত। আমাদের নিজের কোনো পুঁজি নাই। অর্থনৈতিকভাবেও আমরা এখনও সচ্ছল নয়। সুদের টাকা নিয়ে সুতা কিনে কম্বল তৈরি করছি। সরকারিভাবে আর্থিক সহযোগিতা পেলে এই শিল্পকে টিকিয়ে রাখা সম্ভব বলে মনে করেন তিনি।

একই এলাকার কুথু দেবনাথ বলেন, প্রতি তিন দিনে একজন তাঁতি ১৬টির মতো কম্বল তৈরি করতে পারেন। পাইকারিভাবে সর্বনি¤œ ১৮০ থেকে সর্বোচ্চ ২৫০ টাকা পর্যন্ত আমরা কম্বল বিক্রি করতে পারি। এই শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে স্বল্প সুদে ঋণ পেলে ভাল হয়। না হলে আস্তে আস্তে সকল তাঁত বন্ধ হয়ে যাবে।

মালী রানী নামে এক নারী বলেন, অনেক পরিশ্রম করতে হয়। কিন্তু সঠিক মজুরি পাচ্ছি না। অন্য কাজ করতে পারি না। সেজন্য খায় না খায় কম্বল তৈরি করি।

ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসক কে এম কামরুজ্জামান সেলিম ঢাকা টাইমসকে বলেন, ঐতিহ্যবাহী তাঁত শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে ও তাঁতিদের জীবনমান উন্নয়নে সরকারিভাবে সুযোগ-সুবিধা দেওয়াসহ তাদের কম্বল বাজারজাতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

(ঢাকাটাইমস/৩১জানুয়ারি/জেবি)