একুশে গ্রন্থমেলার পর্দা উঠবে আজ

প্রকাশ | ০১ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ০৮:৪১ | আপডেট: ০১ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ১১:৩১

নিজস্ব প্রতিবেদক
ফাইল ছবি

বাঙালির সংস্কৃতিতে এরই মধ্যে একাকার হয়েছে অমর একুশে গ্রন্থমেলা। এই মহা আয়োজনের জন্য অপেক্ষা থাকে সারা বছরের। বছর ঘুরে আবার এসেছে ফেব্রুয়ারি মাস। এ মাসের প্রথম দিনে আজ অবসান ঘটবে সেই অপেক্ষার। তারপর মাসজুড়ে জমে ওঠে শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতির এই মহাসম্মিলন। নতুন নতুন বইয়ের সঙ্গে দর্শনার্থী-ক্রেতা-কবি-লেখকদের ভরপুর আড্ডায় মুখর থাকবে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ এবং মেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের অংশ। শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতির নানা বিষয়ে বিনিময় হবে ভাবের। আজ বিকেল তিনটায় এই মহাযজ্ঞের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

গতকাল বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলা একাডেমির সদ্যনিযুক্ত মহাপরিচালক কবি হাবিবুল্লাহ সিরাজী মেলার প্রস্তুতি নিয়ে সার্বিক চিত্র তুলে ধরেন। এবারের মেলার মূল প্রতিপাদ্য ‘বিজয়’: ১৯৫২ থেকে ১৯৭১, নবপর্যায়। নতুন প্রজন্মের কাছে স্বাধীনতার চেতনাকে ছড়িয়ে দেওয়ার উদ্দেশ্যেই এই প্রতিপাদ্য।

হাবিবুল্লাহ সিরাজী বলেন, ‘বাঙালি জাতিসত্তা ও বুদ্ধিবৃত্তিক উৎকর্ষের প্রতীক বাংলা একাডেমি গত তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে উদ্্যাপন করে আসছে বিশ্বের দীর্ঘ সময়ব্যাপ্ত অমর একুশে গ্রন্থমেলা। নতুন প্রজন্মকে স্বাধীনতার চেতনায় উজ্জীবিত করতে পারলে শতবর্ষ পরে হয়তো দেখা যাবে সফল এক বাংলাদেশ গড়ে উঠেছে। বই সেই সুন্দর সফল বাংলাদেশ গড়ার অন্যতম উপাদান।’

‘বাংলা একাডেমি এবং বইমেলা এমন একটি চেতনা, যা বাঙালি জাতি হৃদয়ে ধারণ করে। এই এক মাসের বইমেলা এই ক্ষণিক সময় যেন অনন্ত প্রসারিত হয়।’

উদ্বোধনী অনুষ্ঠান

আজ শুক্রবার বিকেল তিনটায় বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে অমর একুশে গ্রন্থমেলার উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি থাকবেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ বাবু, ভারতীয় কবি শঙ্খ ঘোষ, মিসরীয় লেখক-গবেষক মোহসেন আল আরিশি। স্বাগত ভাষণ দেবেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক হাবিবুল্লাহ সিরাজী।

৩ লাখ বর্গফুটের মেলায় অংশ নিচ্ছে ৪৯৯ প্রতিষ্ঠান

সংবাদ সম্মেলনে বইমেলার সার্বিক চিত্র তুলে ধরেন মেলা কমিটির আহ্বায়ক জালাল আহম্মেদ। তিনি জানান, এবারই প্রথমবারের মতো গ্রন্থমেলার স্টল বরাদ্দের ক্ষেত্রে অনলাইনে আবেদনপ্রক্রিয়া চালু হয়, এ ধারা ভবিষ্যতে আরও বিস্তৃত হবে। একাডেমি প্রাঙ্গণ এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের অংশ মিলিয়ে প্রায় ৩ লাখ বর্গফুট জায়গায় এবার মেলার আয়োজন করা হয়েছে।

সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশের মেলাকে চারটি চত্বরে বিন্যস্ত করা হয়েছে। মেলায় ৪৯৯টি প্রতিষ্ঠানকে মোট ৭৭০টি ইউনিট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে একাডেমি প্রাঙ্গণে ১০৪টি প্রতিষ্ঠানকে ১৫০টি এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে ৩৯৫টি প্রতিষ্ঠান ৬২০টি ইউনিট বরাদ্দ পেয়েছে। এ ছাড়া বাংলা একাডেমিসহ মোট ২৪টি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের প্যাভিলিয়ন থাকছে মেলায়।

শিশুপ্রহর ও কবি-লেখকদের সরাসরি প্রশ্ন করার সুযোগ

গেলবারের মতো এবারও শিশুচত্বর থাকবে মেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে। এই কর্নারকে শিশু-কিশোর বিনোদন ও শিক্ষামূলক অঙ্গসজ্জায় সজ্জিত করা হবে। এবারও ‘শিশুপ্রহর’ ঘোষণা করা হবে মেলায়।

এ ছাড়া সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে নতুন বইয়ের মোড়ক উন্মোচন মঞ্চ থাকবে। বইমেলার তথ্যকেন্দ্র থাকবে প্রতিবারের মতো বর্ধমান হাউসের উত্তর-পশ্চিম বেদিতে। আরেকটি প্রচারকেন্দ্র থাকবে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে। সাংবাদিকদের অবাধ তথ্য আদান-প্রদানের সুবিধার্থে গ্রন্থমেলায় মিডিয়া সেন্টার থাকবে একাডেমির মূল প্রাঙ্গণে।

এ ছাড়া এবারই প্রথমবারের মতো দর্শনার্থী-ক্রেতারা সরাসরি কবি-লেখকদের প্রশ্ন করার সুযোগ পাবেন। আর নানা প্রশ্নের উত্তর দেবেন কবি-লেখকরা। এ ছাড়া নিজের প্রকাশিত বই নিয়ে বলার সুযোগ থাকবে নবীন লিখিয়েদের। মেলায় আসা মানুষের বিশ্রামের জন্য বসার জায়গা রাখা হচ্ছে এবার। থাকছে নান্দনিক ফুলের বাগানও।

সরাসরি সম্প্রচারিত হবে মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠান

‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ ধারণার অংশ হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এটুআই প্রকল্পের আওতায় গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন, তথ্যকেন্দ্রের সর্বশেষ খবরাখবর এবং মেলার মূল মঞ্চের সেমিনার প্রচারের ব্যবস্থা করা হবে। এ ছাড়া গোটা মেলাজুড়ে ওয়াইফাই ইন্টারনেট সুবিধা থাকবে।

মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠান সরাসরি সম্প্রচার করবে বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বাংলাদেশ বেতার। এ ছাড়া মেলা প্রাঙ্গণ থেকে বিভিন্ন বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল মেলার তথ্যাদি প্রতিদিন সরাসরি সম্প্রচার করবে।

প্রবেশ ও বাহিরে মূল ২টিসহ ৯ পথ

মেলায় প্রবেশ ও বাহিরে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের টিএসসি ও দোয়েল চত্বর উভয় দিকে প্রতিবারের মতো দুটি মূল প্রবেশপথ থাকবে। এ ছাড়া বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে প্রবেশ ও বাহিরে তিনটি পথ এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে প্রবেশ ও বাহিরের মোট ছয়টি পথ থাকবে। আর বিশেষ দিনগুলোতে লেখক, সাংবাদিক, প্রকাশক, বাংলা একাডেমির ফেলো এবং রাষ্ট্রীয় সম্মাননাপ্রাপ্ত নাগরিকদের জন্য প্রবেশের বিশেষ ব্যবস্থা করা হবে।

গ্রন্থমেলার সময়সূচি

মাসব্যাপী বইমেলার ছুটির দিন ব্যতীত প্রতিদিন বিকেল তিনটা থেকে রাত নয়টা পর্যন্ত খোলা থাকবে। ছুটির দিন বেলা ১১টা থেকে রাত ৯টা এবং ২১ ফেব্রুয়ারি সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত মেলা চলবে।

বাংলা একাডেমির আব্দুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে সকালে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বাংলা একাডেমির কর্মকর্তারা ছাড়াও মেলা স্পনসর প্রতিষ্ঠান বিকাশের সিএমও মীর সওগত আলী, নিরাপদ মিডিয়া ও কমিউনিকেশনের চেয়ারম্যান ইলিয়াস কাঞ্চন, বাংলা একাডেমির সচিব আব্দুল মান্নান ইলিয়াস, বাংলাদেশ জ্ঞান ও সৃজনশীল পুস্তক প্রকাশনা সমিতির নেতারা উপস্থিত ছিলেন।