খুলল মাসব্যাপী বইমেলার দুয়ার

নিজস্ব প্রতিবেদক
 | প্রকাশিত : ০১ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ১৮:২৩

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে যাত্রা শুরু হলো অমর একুশে গ্রন্থমেলার। ভাষা আন্দোলনের মাসে এই মেলা বাংলা একাডেমি চত্বরের পাশাপাশি হবে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানেও।

শুক্রবার বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে মাসব্যাপী এই মেলার উদ্বোধন করেন সরকার প্রধান। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে একে ‘প্রাণের মেলা’ সম্বোধন করে প্রধানমন্ত্রী মেলার গুরুত্বের পাশাপাশি ভাষা আন্দোলন এবং বাঙালির মুক্তি সংগ্রামের বিষয়টিও তুলে ধরেন।

এবারের বইমেলার প্রতিপাদ্য ঠিক হয়েছে ‘বিজয়: ১৯৫২ থেকে ১৯৭১ নবপর্যায়’।

উদ্বোধনের পর পর মেলায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বেশ কিছু স্টল ঘুরে দেখেন। তিনি বইও কেনেন।

বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে পাকিস্তান আমলের গোয়েন্দা প্রতিবেদন সংকলন করে লেখা ‘সিক্রেট ডকুমেন্টস অব ইনটেলিজেন্স ব্রাঞ্চ অন ফাদার অফ দা নেশন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান’ বইয়ের দ্বিতীয় খ-ের মোড়কও উন্মোচন করেন শেখ হাসিনা।

বইমেলায় শুধু ‘বই কেনা বেচা না’ উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘বই মেলা হচ্ছে আমাদের বাঙালির প্রাণের মেলা।

‘যতই আমরা যান্ত্রিক হই না কেন, বইয়ের চাহিদা কখনো শেষ হবে না। নতুন বইয়ের মলাট, বই শেলফে সাজিয়ে রাখা, বইয়ের পাতা উল্টে পড়ার মধ্যে যে আনন্দ আছে, আমরা সবসময় তা পেতে চাই।”

‘যখন ক্ষমতায় ছিল না তখনও এই বইমেলায় আসতাম। অনবরত ঘুরে বেড়াতাম’- এই কথা বলার পর সরকার প্রধান হিসেবে তার নিরাপত্তার কারণে এখন নিয়মিত আসতে না পারার আক্ষেপের কথা বলেন শেখ হাসিনা।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এখন বলতে গেলে একরকম বন্দী জীবন যাপন করতে হয়। আসার সুযোগ হয় না। আসতে গেলে অন্যের অসুবিধা হয়। নিরাপত্তার কারণে মানুষের যে অসুবিধা গুলো হয় সেটা বিবেচনা করে আর আসার ইচ্ছাটাও হয় না। কারণ আমার জন্য কেউ কষ্ট পাবে... তবুও মনটা পড়ে থাকে এই বইমেলায়।’

অনলাইনে বই থাকলে তা বিশ্বের সবার কাছে দ্রুত পৌঁছে যায় উল্লেখ করে ‘ডিজিটাল লাইব্রেরি’ করার অনুরোধও করেন প্রধানমন্ত্রী। দেশের স্বাধীনতা, রাষ্ট্রভাষা আর ইতিহাস নিয়ে আরও বেশি বই প্রকাশেরও আহ্বান জানান তিনি।

বাংলা ভাষার প্রচার এবং বিকাশে তার ও তার বাবা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সরকাররে উদ্যোগের কথাও তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, ‘স্বাধীনতার পর জাতির পিতা জাতিসংঘে ভাষণ দিয়েছিলেন বাংলা ভাষায় তিনি ভাষণ দিয়েছিলেন। আমিও সরকার গঠন করার পর থেকে যতবার জাতিসংঘে ভাষণ দিয়েছি বাংলা ভাষায় ভাষণ দিয়েছি।’

উদ্বোধনের আগে প্রধানমন্ত্রী এবারের বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার পাওয়া চারজনের হাতে সম্মাননা তুলে দেন। এরা হলেন কবিতায় কবি কাজী রোজী, কথাসাহিত্যে মনোরোগ চিকিৎসক মোহিত কামাল, প্রবন্ধ ও গবেষণায় বাংলা একাডেমির সাবেক মহাপরিচালক সৈয়দ মোহাম্মদ শাহেদ এবং মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক সাহিত্যের জন্য গবেষক-কলাম লেখক আফসান চৌধুরী।

এবারের মেলায় ৪৯৯টি প্রতিষ্ঠানকে ৭৭০টি ইউনিট এবং বাংলা একাডেমিসহ ২৪টি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানকে ২৪টি প্যাভিলিয়ন বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ৬২০টি ইউনিট নিয়ে বসেছে ৩৯৫টি প্রতিষ্ঠানের স্টল।

মেলার বাংলা একাডেমি অংশ একজন ভাষা শহীদের নামে, এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে চারজন ভাষা শহীদের নামে পাঁচটি চত্বর রয়েছে। এছাড়া বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ এবং স্বাধীনতা স্তম্ভ¢ নিয়ে বিভিন্ন তথ্য সম্বলিত প্ল্যাকার্ড বসানো হয়েছে মেলায়।

মেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে রয়েছে ‘শিশু চত্বর’। এই কর্নারকে শিশুকিশোর বিনোদন ও শিক্ষামূলক অঙ্গসজ্জায় সাজানো হয়েছে।

ছুটির দিন ছাড়া প্রতিদিন বিকাল ৩টা থেকে রাত ৯টা মেলা সবার জন্য উন্মুক্ত। শুক্র ও শনিবার সাপ্তাহিক ছুটির দিন বেলা ১১টা থেকে রাত ৯টা এবং ২১ ফেব্রুয়ারি সকাল ৮টা থেকে রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত মেলা চলবে।

মেলায় বই, সাহিত্য ও সংস্কৃতি নিয়ে আলোচনার পাশাপাশি প্রতি সন্ধ্যায় থাকবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, কবিতা পাঠ। শিশু-কিশোর চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, সাধারণ জ্ঞান ও উপস্থিত বক্তৃতা এবং সংগীত প্রতিযোগিতারও মেলার আকর্ষণে থাকছে।

নাট্যকার রামেন্দু মজুমদারের সঞ্চালনায় বইমেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান। বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক হাবিবুল্লাহ সিরাজী, সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ বাবুও এ সময় বক্তব্য রাখেন।

প্রতিবারের মতো এবারের মেলাতেও বেশ কয়েকজন বিদেশি লেখক গবেষক উপস্থিত ছিলেন উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে। এদের মধ্যে আছেন ভারতীয় কবি শঙ্খ ঘোষ, মিশরীয় লেখক-গবেষক মুহসেন আল আরিসি।

সংবাদটি শেয়ার করুন

জাতীয় বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :