হাসপাতালে যান না তিন বছর, তবু আছে চাকরি

জাহাঙ্গীর হোসেন, মির্জাপুর (টাঙ্গাইল)
| আপডেট : ০২ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ১১:৪৪ | প্রকাশিত : ০২ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ১১:৪১

টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে একটি সরকারি হাসপাতালে তিন বছর ধরে অনুপস্থিত এক চিকিৎসক। তবু তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। বরং প্রমাণ মিলেছে স্থানীয় চিকিৎসা প্রশাসন ওই চিকিৎসকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতেই রাজি নন।

তিন বছর চাকরি না করলেও তার বেতন পাঠানো বন্ধ হয়নি। ফলে জনগণের সেবা না করে তাদের করের টাকায় ঠিকই নিজের পকেট ভরছেন ওই চিকিৎসক।

কাজে ফাঁকি দেওয়া ওই চিকিৎসকের নাম রেজুয়ানা ইসলাম। ২০১৩ সালের ১৪ আগস্ট তিনি মির্জাপুর উপজেলার তরফপুর ইউনিয়ন উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রে যোগ দেন। ২০১৬ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি থেকেই তিনি কর্মস্থলে অনুপস্থিত।

চিকিৎসকদের কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকার এই প্রবণতা নতুন নয়। দিনের পর দিন তারা কাজে আসেন না, এই তথ্য এখন আর গোপন নয়। কিন্তু কারও বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার উদাহরণ নেই বললেই চলে।

বিষয়টি জানানো হলে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সাবেক চেয়ারম্যান গোলাম রহমান ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘এমনটা হয়ে থাকলে সেটা অবশ্যই দুর্নীতি। ওই চিকিৎসক একটা চেইনের মধ্যে থেকে এ দুর্নীতি করার সুযোগ পেয়েছেন। এ রকম দুর্নীতি যে বা যারাই করুক, তার বা তাদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া উচিত। নইলে এ প্রবণতা বাড়তেই থাকবে। আরও অনেকে এ রকম দুর্নীতি করতে উৎসাহ পাবে।’

সম্প্রতি দুর্নীতি দমন কমিশন দেশের ১১টি সরকারি হাসপাতালে অভিযান চালিয়ে ঢাকার বাইরে ৬০ শতাংশ চিকিৎসককে কর্মস্থলে পায়নি। এরপর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অনুপস্থিত চিকিৎসক ও নার্সদের চাকরি থাকবে না বলে সতর্কতা দিয়েছেন। তবে তারা কাজে ফিরেছেন এমন প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে না।

সম্প্রতি ময়মনসিংহের গফরগাঁও হাসপাতালের এক চিকিৎসকের তিন দিনের ছুটি নিয়ে তিন বছর ধরে অনুপস্থিতির তথ্য প্রকাশ পেয়েছে। এর মধ্যে আড়াই বছরে তিনি মোট ১৩ লাখ টাকার বেতন-ভাতা তুলেছেন।

একই ঘটনা ঘটেছে রেজুয়ানা ইসলামের ক্ষেত্রে। তিন বছর ধরে কর্মস্থলে অনুপস্থিত থেকেও তিনি বেতন-ভাতা পাচ্ছেন। আর জনগণের করের টাকায় তার পকেটেও ঢুকেছে ১৪ লাখ টাকার বেশি।

চিকিৎসকদের দেখভাল ও তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা যারা নেন তারাও চিকিৎসক। আর অভিযোগ আছে, চিকিৎসকরা একই পেশার অন্যদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে চান না। একজন আরেকজনকে বাঁচাতে চান আর এর ফেরে পড়ছেন রোগীরা।

একজন চিকিৎসক কাজে আসছেন না, আর এই তথ্যটি সিভিল সার্জন কার্যালয়ে পাঠাতেই সাত মাস সময় নিয়েছেন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা শাহরিয়ার সাজ্জাদ। ওই বছরের ২০ অক্টোবর এই তথ্য জানানোর পরও অবশ্য সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি, যদিও এর মধ্যে প্রায় আড়াই বছর পেরিয়ে গেছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মির্জাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা শাহরিয়ার সাজ্জাদ ঢাকা টাইমসকে বলেন, অনুপস্থিত থাকার পর ২০ অক্টোবর রেজওয়ানাকে কারণ দর্শানোর চিঠি দেওয়া হয়। কিন্তু তিনি জবাব দেননি আর তার কোনো হদিসও নেই।

আপনার ব্যক্তিগত প্রতিষ্ঠান হলে ওই চিকিৎসককে ছাড় দিতেন কি না এমন প্রশ্নে সরাসরি জবাব না দিয়ে শাহরিয়ার সাজ্জাদ বলেন, ‘আসলে ওই সময় দায়িত্বে ছিলাম না। আমি ছিলাম রংপুরে।’

অনুপস্থিত একজন চিকিৎসকের চাকরি এতদিনেও কেন যায়নি- এমন প্রশ্নে স্বাস্থ্য কর্মকর্তা শাহরিয়ার বলেন, ‘এ বিষয়ে মামলা হয়েছে। রায় হওয়ার আগ পর্যন্ত চাকরি যাওয়ার সুযোগ নেই। আর চাকরি যেহেতু আছে, তাই বেতন তো যাবেই।’

এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে টাঙ্গাইলের সিভিল সার্জন শরীফ হোসেন খানের জবাব দায়সারা গোছের। বলেন, ‘রেজুয়ানা ইসলামের অননুমোদিতভাবে কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকার বিষয়টি লিখিতভাবে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে।’

জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ঢাকা বিভাগের বিভাগীয় পরিচালক (স্বাস্থ্য) নিতীশ কান্তি দেবনাথ ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘অননুমোদিতভাবে অনুপস্থিত থাকার বিষয়ে মহাপরিচালক স্বাস্থ্য অধিদপ্তর মহাখালী শৃঙ্খলা শাখা থেকে তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

আর কবে ব্যবস্থা নেবেন- এমন প্রশ্নে এই কর্মকর্তা বলেন, ‘টাঙ্গাইলের সিভিল সার্জন অনুপস্থিতির বিষয়টি লিখিতভাবে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করে থাকলে অবশ্যই তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।’

সংবাদটি শেয়ার করুন

স্বাস্থ্য বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

স্বাস্থ্য এর সর্বশেষ

গরমে স্বাস্থ্যঝুঁকি সম্পর্কে সচেতনতা অত্যন্ত জরুরি

ঔষধি গাছ থেকে তিন শতাধিক ওষুধ তৈরি হচ্ছে ইরানে

কণ্ঠের সব চিকিৎসা দেশেই রয়েছে, বিদেশে যাওয়ার প্রয়োজন নেই: বিএসএমএমইউ উপাচার্য 

এপ্রিল থেকেই ইনফ্লুয়েঞ্জা মৌসুম শুরু, মার্চের মধ্যে টিকা নেওয়ার সুপারিশ গবেষকদের

স্বাস্থ্য খাতে নতুন অশনি সংকেত অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স: স্বাস্থ্যমন্ত্রী

ভাতা বাড়লো ইন্টার্ন চিকিৎসকদের

বিএসএমএমইউ বহির্বিভাগ ৪ দিন বন্ধ, খোলা থাকবে ইনডোর ও জরুরি বিভাগ

তৃণমূল পর্যায়ে স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে চিকিৎসক-স্বাস্থ্যকর্মীদের কাজ করতে বললেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী

বিএসএমএমইউতে বিশ্বের সর্বোৎকৃষ্ট মানের চিকিৎসা নিশ্চিত করা হবে: ভিসি দীন মোহাম্মদ

ঈদের ছুটিতে স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে যেসব নির্দেশনা মানতে হবে হাসপাতালগুলোকে

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :