‘সততা স্টল’ এবার বইমেলায়

আল আমিন রাজু, বইমেলা থেকে
| আপডেট : ০২ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ১৪:০৫ | প্রকাশিত : ০২ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ১৩:৫৮

সততা স্টল এবার চালু হয়েছে অমর একুশে বই মেলায়। স্টলটিতে নেই কোনো বিক্রেতা। ক্রেতা-বিক্রেতাদের মধ্যে যে দর-কষাকষির চিরাচরিত নিয়ম সেটিও নেই এ স্টলটিতে। আপন মনে বই কিনে বইয়ের মূল্য পরিশোধ করে বই নিয়ে যাচ্ছেন ক্রেতারা। ব্যতিক্রমী এ স্টলটিতে জমেছে ক্রেতাদের ভিড়। কৌতুহল জাগিয়েছে মেলায় আগুন্তুকদের।

রাজধানীর বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গন ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে গতকাল থেকে শুরু হয় অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০১৯। প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধনের পর থেকেই চলছে বইয়ের বেচাকেনা।

মেলায় বিভিন্ন স্টলে প্রকাশকরা তাদের বইয়ের পসরা সাঁজিয়েছেন। বিক্রেতারা সেগুলো বিক্রিও করছেন। কিন্তু এবারের ব্যতিক্রমী সততা স্টল মেলায় আগতদের মনোযোগ কুড়িয়েছে।

সরেজমিনে দেখা গেল, এ স্টলটিতে কোনো বিক্রেতা নেই। ক্রেতারা বই কিনে নিজেই টাকা রেখে যাচ্ছেন নির্ধারিত বাক্সে।

বাংলা একাডেমি চত্বরের পুকুরে পাড়ে এই স্টলটির অবস্থান। স্টলটি বিদ্যানন্দ প্রকাশনা থেকে বিভিন্ন বই বিক্রির জন্য প্রদর্শন করছে। স্টলটিতে সাজানো বইয়ের মূল্য তালিকা দেয়া আছে। এখান থেকে কিভাবে বই কেনা যাবে তার নিয়মও লেখা আছে।

অনেকেই এখান থেকে বই কিনছেন। বাক্সে রেখে যাচ্ছেন বইয়ের মূল্য। এমনই একজন শাহ জামাল উদ্দিন।

তিনি ঢাকাটাইমসকে বলেন, আমি গত বিশ বছর ধরে নিয়মিত বইমেলায় আসি। কিন্তু এবার প্রথম এই রকম ভিন্ন একটি উদ্যোগ দেখলাম। স্টলে বই সাজানো আছে কিন্তু বিক্রেতা নেই। এটি আমাকে ভীষণ আলোড়িত করেছে। এই সততা স্টল থেকে আমি একটি বইও কিনেছি। এমন উদ্যোগ সারা বাংলাদেশে ছড়িয়ে পড়ুক।

সরেজমিনে জানা গেছে, স্টলটিতে একপাশে রয়েছে টাকার রাখার জন্য একটি খোলা বাক্স, ভাউচার, বুকলেট, এবং বই নেয়ার জন্য ব্যাগ। আর এগুলো রাখা হয়েছে ক্রেতাদের জন্য। বই পছন্দ থেকে শুরু করে বই কেনার পরে টাকা জমা দেয়া, বই কেনার ভাউচার লেখা এবং সর্বশেষ বই নেয়ার জন্য প্যাকেট করা সবই করতে হবে ক্রেতাকে।

বই কিনতে ক্রেতাকে কি করতে হবে সে নির্দেশিকাও লেখা রয়েছে একটি কাগজে।

যেখানে লেখা রয়েছে, কীভাবে কিনবেন আপনার বইটি?

পছন্দের বইট নিবার্চন করুন, বইয়ের মূল্য বের করুন এবং বক্সে টাকা জমা দিন। রশিদ কাটুন। পাশেই লেখা রয়েছে স্টলের বই বিক্রি থেকে প্রাপ্ত অর্থ পথশিশুদের আহারে ব্যয় করা হবে।

বিদ্যানান্দ একটি সামাজিক সংগঠন। রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে ৮ টি শাখার মাধ্যমে তারা ১ টাকার বিনিময়ে পথশিশুদের খাদ্য দেয়াসহ বিভিন্ন কার্যক্রম সামাজিক কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে।

তাদের কার্যক্রমের মধ্যে রয়েছে সুবিধাবঞ্চিতদের জন্য বিনামূল্যে শিশু শ্রেণি থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে পর্যন্ত ভর্তি কোচিং। এছাড়া প্রথম থেকে চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত বিদ্যানন্দ শিশু নিকেতন নামে দেশের বিভিন্ন জেলায় স্কুল পরিচালনা করছে।

বিক্রেতাহীন স্টল সম্পকে বিদ্যানন্দ স্টলের তত্ত্বাবাধায়ক আরাফাত ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘আমরা বিদ্যানন্দের পক্ষ থেকে পথশিশুদের ১ টাকায় খাবার দিয়ে থাকি।

আমরা এ কাজ করতে গিয়ে একটা বিষয় দেখেছি এই সকল বাচ্চাদের মধ্যে সততার অভাব। প্রথম দিকে এরা খাবার নিয়ে চলে যেত টাকা দিত না। কিন্তু আমরা ধারাবাহিকভাবে তাদের নিয়ে কাজ করায় তাদের মধ্যে ধীরে ধীরে মূল্যবোধ তৈরি হচ্ছে। এখন তারা খাবার খেয়ে চলে যায় না| নিজের থেকে টাকা দিয়ে যায়।

এছাড়াও এই পথশিশুরা টাকা না থাকলে বাকিতে খাবার খায়, পরে আবার এসে নিজের থেকে টাকা দিয়ে যায়।

আমরা এই বিষয়টিকে আরও ভালোভাবে শিশুদের মাঝে ছড়িয়ে দিতে আমাদের প্রতিটি স্কুল এবং কোচিংয়ে এ সততা স্টোর চালু করেছি। যেখান থেকে শিশুরা নিজেরাই টাকা জমা দিয়ে প্রয়োজনীয় খাতা, কলম নিয়ে যায়।

এরই ধারাবহিকতায় আমরা আমাদের সমাজে এই বার্তাটি পৌছে দিতে চাই। যার কারণে আমরা এবারের বই মেলায় বিক্রেতাহীন স্টল চালু করেছি।

অনেক মানুষ আসেছে কিন্তু অনেকে বিষয়টি বুঝতে পারছে না।

(ঢাকাটাইমস/২ফেব্রুয়ারি/এজেড/ওআর)

সংবাদটি শেয়ার করুন

ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতি বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :