‘দুদকের ডিজি বলছি, দ্রুত টাকা পাঠান’

প্রকাশ | ০২ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ১৭:০৮ | আপডেট: ০২ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ২১:১৯

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

‘আমি দুদকের ডিজি বলছি। আপনার বিরুদ্ধে দুর্নীতির ব্যাপক অভিযোগ। আপনার নামে কেস ফাইল হয়েছে। দ্রুত দুর্নীতি দমন কমিশন অফিসে যোগাযোগ করুন, না হয় আমাদের এই নাম্বারে কিছু খরচ পাঠিয়ে দিন। না হলে চাকরিতে সমস্যা শুরু হয়ে যাবে।’

এভাবে দুদকের কর্মকর্তা পরিচয়ে সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ফোন করত একটি চক্র। এ যাবত তারা পাঁচ শতাধিক মোবাইলফোন কল করেছে। অনেক দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারী তাদের পাতা ফাঁদে পা দিয়ে মোটা অঙ্কের টাকাও দিয়েছেন। চক্রটি এভাবে প্রায় ৪০ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। স্বল্প শিক্ষিত হলেও তাদের মোবাইলে কথা বলার ধরণ দুদুকের পরিচালক, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের মতোই ছিল।

শুক্রবার রাজধানীর হাজারীবাগ এলাকায় অভিযান চালিয়ে এই চক্রের দুই সদস্যকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব। তারা হলেন- আনিছুর রহমান ও বিকাশ এজেন্ট ইয়াছিন তালুকদার। এর মধ্যে আনিছুরের কাছ থেকে তিনটি মোবাইল ফোন ও প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত ভুয়া রেজিস্ট্রেশন করা ১৪টি সিম এবং ইয়াছিনের কাছ থেকে বিকাশ এজেন্টের ভুয়া রেজিস্ট্রেশন করা ১২টি সিম ও ১৮টি মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়েছে।

শনিবার দুপুরে রাজধানীর কাওরান বাজারে র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র‌্যাব-২ এর পুলিশ সুপার (এসপি) মহিউদ্দিন ফারুকী।

২৭ জানুয়ারি দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) থেকে র‌্যাব বরাবর একটি চিঠি আসে। সেখানে বলা হয়- দুদকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা পরিচয়ে বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মোবাইলে দুর্নীতি মামলার ভয় দেখিয়ে মোটা অঙ্কের অর্থ আদায় ও হয়রানি করা হচ্ছে। এমন চিঠির পর র‌্যাব অভিযানে নেমে দুজনকে গ্রেপ্তার করে।

মহিউদ্দিন ফারুকী বলেন, ‘এই চক্রটি ২০১৪ সাল থেকে এই পেশার সঙ্গে জড়িত। সারা দেশে চক্রের দশজনের মতো সদস্য আছে। আনিছুর রহমান এই চক্রের প্রধান হিসেবে এখন কাজ করেন। মাদারীপুরের রাজৈর এলাকার এক প্রতারকের কাছ থেকে প্রতারণা শিখে তিনি এই পেশায় আসেন। পরে নিজেই গ্রুপ খুলে শুরু করেন প্রতারণা। আনিছুর মূলত বিভিন্ন সময় সরকারি অফিসের ‘টেলিফোন ডিরেক্টরি’ কিনে এনে দুদকের ডিজি পরিচয় বা দুদকের কর্মকর্তার পরিচয় দিয়ে তিতাস গ্যাস, বিআরটিএ, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের ফোন করতেন। এমনকি পুলিশের অনেক কর্মকর্তাকে তারা ফোন দেয়। মূলত যারা দুর্নীতিবাজ সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী তারা এই চক্রের পাতা ফাঁদে পা দিতেন।’

র‌্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘তাদের কাছ থেকে জব্দ করা হয়েছে অনেকগুলো ভুয়া রেজিস্ট্রেশন করা মোবাইল সিম ও বিকাশ এজেন্ট সিম। তারা নি¤œবিত্ত লোকজন, দিনমজুর, গার্মেন্টস কর্মী বা গৃহ পরিচারিকাদের ফিঙ্গার প্রিন্ট ও ছবি ব্যবহার করে অধিক সিম রেজিস্ট্রেশন করিয়েছিল। সেই সিম ব্যবহার করে বিকাশ এজেন্ট সিম চালু করত।’ এই চক্রের বাকি সহযোগীদের গ্রেপ্তারে র‌্যাবের অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলে জানান র‌্যাবের এই কমকর্তা।

বিআইডব্লিউটিএ কর্মকর্তাকে ফোন

নারায়ণগঞ্জের বিআইডব্লিউটিএ’র এক যুগ্ম-পরিচালকের মোবাইলে দুদক কর্মকর্তার পিএস পরিচয়ে একটি ফোন আসে। ফোনে তার কাছে দুই লাখ টাকা দাবি করা হয়। টাকা দেওয়া না হলে তার কাছে থাকা সব তথ্য প্রকাশ করে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়। পরে প্রতিকার চেয়ে বিআইডব্লিউটিএ’র ওই কর্মকর্তা দুদকে একটি চিঠি পাঠান, যা ঢাকা টাইমসের কাছে এসেছে।

চিঠিতে জানানো হয়, ১০ জানুয়ারি দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা প্রণব ভট্টাচার্যের পিএস পরিচয় দিয়ে বিআইডব্লিউটিএ’র কর্মকর্তাকে ফোন ও মোবাইলে ম্যাসেজ পাঠানো হয়। এরপর নদীবন্দরের এই কর্মকর্তা দুদকে একটি অভিযোগ করেন। সেই চিঠিতে তিনি বলেন, তার কাছে (জনসংযোগ কর্মকতার পিএস) আমার দুর্নীতির অনেক তথ্য, অডিও, ভিডিও আছে। তিনি দেখা করতে চান এবং দুই লাখ টাকা ঘুষ দাবি করেন। এই নিয়ে প্রতিদিনই নদীবন্দরের এই কর্মকর্তাকে ফোন ও ম্যাসেজ দিয়ে হুমকি দেওয়া হতো। পরে এই বিষয়টি তদন্তের জন্য তিনি দুদকের শরণাপন্ন হয়ে চিঠি দেন।

(ঢাকাটাইমস/০২ফেব্রুয়ারি/এসএস/জেবি)