‘আইফেল টাওয়ার’ বারিক্কা টিলা

সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি
 | প্রকাশিত : ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ০৮:৪০

হাওরকন্যা সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার উত্তর বড়দল ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী বারেকটিলা। ৩৬৫ একর জায়গাজুড়ে রয়েছে রঙ-বেরঙের গাছপালা। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আর সম্পদে ভরা বারেক টিলার চারপাশ।

টিলায় ছোট ছোট আঁকাবাঁকা মেটোপথ যে কাউকে নিয়ে যাবে এক অন্য জগতে। মনে হবে হাত বাড়ালেই ছোঁয়া যাবে সেই সৌন্দর্য।

সেই সৌন্দর্য দেখতে হলে আপনাকে যেতে হবে সুনামগঞ্জ জেলা শহর থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দূরে তাহিরপুর উপজেলায় শাহ আরেফিন (রা.) আস্তান ও মেঘালয় পাহাড় থেকে নেমে আসা জাদুকাটা নদীসংলগ্ন বারিক্কা টিলায়। বারিক্কার টিলা স্থানীয়ভাবে ‘আইফেল টাওয়ার’ নামে খ্যাত। অনেক উঁচু এই টিলার ওপর দাঁড়ালে পাশের গ্রামগুলো সমতল ভূমির মতো মনে হয়।

এর পাশ দিয়ে বয়ে চলেছে অপরূপা সীমান্ত নদী জাদুকাটা। এই নদীর পানি এমনই স্বচ্ছ, নিচের বালি স্পষ্ট দেখা যায়। যেন বালি ও পানি খেলা করছে।

বর্ষায় উত্তর দিকে মেঘালয় পাহাড়ে মেঘগুলো মনে হয় হাত বাড়ালেই ধরা যাবে। পাহাড়ের গায়ে নানা রঙের মেঘের খেলা। মেঘ কখনো সবুজ পাহাড়কে ডেকে দিচ্ছে, আবার কখনো বৃষ্টি হয়ে ভিজিয়ে দিচ্ছে তার আপন ভালোবাসায়। পাহাড় আর মেঘের সম্মিলনে এক অপরূপ শোভা। দেখা যায়, মেঘালয় পাহাড়ের আঁকাবাঁকা সড়কপথে চলাচল করছে ভারতীয় বিভিন্ন যানবাহন।

টিলায় দাঁড়িয়ে সূর্যোদয় বা সূর্যাস্ত দেখে মনে হবে আপনার জীবনের শ্রেষ্ঠ একটা দিন, যা আপনাকে বারবার স্মৃতির পাতায় নিয়ে যাবে।

এই বারিক্কা টিলা বাংলাদেশের মানচিত্রে যেন স্বর্গের অংশ। একদিকে সবুজ পাহাড়, হাওরে মনোমুগ্ধকর পরিবেশ। প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর বিল, নদী। বর্ষায় পাহাড়ি রূপবতী জাদুকাটার বুকে স্রোতধারা। আর হেমন্তে শুকিয়ে যাওয়া জাদুকাটার বুকজুড়ে ধুধু বালুচর। আইফেল টাওয়ার খ্যাত বারিক্কা টিলা থেকে ১২ মাস বিভিন্ন রূপবৈচিত্র্য উপভোগ করা যায়।

পাশে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের সারি সারি উঁচুনিচু খাসিয়া পাহাড়, সবুজ বনায়ন ও মাটিয়া পাহাড় যা প্রতিনিয়ত ছুটে আসা লোকজনের দৃষ্টি কাড়ে। এখানে রয়েছে হরেক রকম গাছগাছালি; রয়েছে বিশাল বনভূমিতে নিজস্ব ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতিতে বলীয়ান আদিবাসী ও বাঙালি বসতি। রয়েছে তাদের নিজেদের গোছানো বাড়িঘর ও ফসলি জমি।

আদিবাসীদের পাহাড়ি আঁকাবাঁকা পথ বেয়ে আপনি যখন বারিক্কা টিলায় উঠবেন তখন আপনার মনে হবে আপনি বাংলার আইফেল টাওয়ার থেকে পুরো তাহিরপুর উপজেলাকে দেখছেন। একদিকে পাহাড়, অন্যদিকে গ্রামগুলো দাঁড়িয়ে আছে। সবকিছু তখন আপনার চোখের সামনে অপার্থিব সহয়ে উঠবে।

বারিক্কা টিলায় গেলে পাবেন সীমান্ত পিলার। দেখতে পাবেন দুই দেশের মধ্য দিয়ে বয়ে চলা নদীতে হাজার হাজার শ্রমিকের কর্মব্যস্ত জীবন। নদী থেকে বালু-পাথর তোলার এক নয়নাভিরাম দৃশ্য।

পর্যটনশিল্পের সম্ভাবনাময় ৩৬৫ একর জায়গার বারেক টিলার সম্পদ ভূমিখেকো চক্র, গাছ চোর আর পাথর উত্তোলনকারীদের দখলে চলে যাচ্ছে।

আম, জাম, কাঁঠল, জলপাই, লিচুসহ নানা ধরনের গাছ টিলা থেকে কেটে বাজারে বিক্রি ও জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। একসময় বারেকটিলায় স্থানীয় আদিবাসী গারো সম্প্রদায়ের নিয়ন্ত্রণে ছিল। তখন আনারস, লেবু, কমলা, পানিজাম, বেল, কমলালেবু, টিলাজুড়ে বেত উলুবন ও কাশবনের বাগান শোভা পেত।

বর্তমানে বৃক্ষহীন বারেকটিলায় পাথর উত্তোলনের জন্য আবাধে যত্রতত্র মাটি খোঁড়াখুঁড়ি, গাছ কেটে ফেলার কারণে টিলাগুলো দেখতে এখন কবরস্থানের মতো মনে হয়।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১০ সালের ১০ নভেম্বরে তাহিরপুরে বিশাল জনসভায় টাংগুয়ার হাওর, বারেকটিলা, টেকেরঘাটকে পর্যটনশিল্প গড়ার প্রতিশ্রুতি দেন। কিন্তু আট বছরেও তা বাস্তবায়িত হয়নি। স্থানীয় লোকজনকে প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতির প্রতি কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বাংলাদেশ এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :