নিত্যদিন মারামারিতে জগন্নাথ ছাত্রলীগ

ইসরাফিল হোসাইন
 | প্রকাশিত : ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ০৮:৪৫

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) শাখা ছাত্রলীগের শৃঙ্খলা অনেকটাই ভেঙে পড়েছে। সংগঠনের নবীন কর্মীরা নানা বিরোধে প্রায়শ নিজেদের মধ্যে মারামারিতে জড়িয়ে পড়ছেন। অভিযোগ উঠেছে তারা জ্যেষ্ঠ নেতাদেরও মানতে চাইছেন না।

বিভিন্ন সময় ছাত্রলীগের নবীন কর্মীরা আধিপত্য বিস্তার, র‌্যাগিং, প্রেমঘটিত বিভিন্ন বিরোধে শাখা ছাত্রলীগ সভাপতি তরিকুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক শেখ জয়নুল আবেদীন রাসেলের সামনেই সংঘর্ষে জড়িয়েছেন।

নিজেদের মধ্যে সংঘর্ষের পাশাপাশি আশপাশের এলাকাতেও বিশৃঙ্খলায় জড়াচ্ছেন ছাত্রলীগের কর্মীরা। এমনকি অপহরণ করে টাকা আদায়ের মতো ঘটনাতেও নাম এসেছে তাদের। এ নিয়ে মামলাও হয়েছে। গ্রেপ্তার হয়েছেন একাধিক কর্মী।

এসব বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি তরিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা ছাত্রলীগের কোনো কর্মীকে অপরাধ করতে উৎসাহিত করি না। যদি কেউ অপরাধ করে ছাত্রলীগের নাম ব্যবহার করে, তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ জয়নুল আবেদিন রাসেল বলেন, ‘জামায়াত-বিএনপির একটি চক্র ক্যাম্পাস অস্থিতিশীল করতে ছাত্রলীগে ঢুকে অপরাধমূলক কাজ করছে। কেন্দ্রীয় সংগঠনের সঙ্গে কথা বলে আমরা তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেব।’

যত সংঘর্ষ

গত সোমবার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে ক্যাম্পাসের প্রধান ফটকের বিপরীতে কথা-কাটাকাটির জেরে এক ঘোড়ার গাড়ির চালককে পিটিয়ে মাথা ফাটিয়ে দেন শাখা ছাত্রলীগের কর্মীরা। এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ১২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী নুরে আলম, হিমু, আশিক, গৌরব জড়িত বলে অভিযোগ আছে। এ ঘটনায় তাদের বিরুদ্ধে কোতোয়ালি থানায় একটি মামলা হয়েছে।

২২ অক্টোবর বিশ্ববিদ্যালয় দিবস উদযাপনের দিন আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের সামনে দুই পক্ষের কর্মীরা দফায় দফায় সংঘর্ষে জড়ান। এ ঘটনায় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নির্দেশনাও তারা মানেননি।

পরে বিশ্ববিদ্যালয়ে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হলে পরিস্থিতি শান্ত হয়। এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ১১তম ব্যাচের শিক্ষার্থী সাদেক, নাঈম, অভি, ১২তম ব্যাচের সুফিয়ান, শাকিল ও ১৩তম ব্যাচের হাসান, উম্মি, এহসান, শান্ত সক্রিয়ভাবে জড়িত বলে অভিযোগ আছে।

৭ অক্টোবরে বিশ্ববিদ্যালয়ের মানবিক শাখার ভর্তি পরীক্ষার্থীকে র‌্যাগিং দেয়াকে কেন্দ্র করে নবীন কর্মীদের দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ সময় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে গেলে তাদের সামনে আবার সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন তারা। এ সময় তারা শহীদ মিনারের পাটাতনও খুলে নেন।

১৩ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয় বাসে তাস খেলার জায়গা না দেয়ায় গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের পাঁচজন শিক্ষার্থীকে বেধড়ক মারধর করেন ছাত্রলীগের কর্মীরা। এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ১২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী আদর, মেহেদী, অর্ণব, পার্থ, শিবলী, ফুয়াদ জড়িত বলে অভিযোগ আছে। এ ঘটনায় আদর ও মেহেদীকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়।

এর আগে ৩ সেপ্টেম্বর ‘সিনিয়র-জুনিয়রের’ কথা-কাটাকাটির জেরে ১৩তম ব্যাচের লিমনকে বেধড়ক মারধর করার অভিযোগ ওঠে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি গ্রুপের ১২তম ব্যাচের মেহেদী ও অভিজিতের বিরুদ্ধে।

৯ আগস্ট জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটকের সামনে থেকে সাহেদ নামের এক দোকান কর্মচারীকে অপহরণ করে ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবির অভিযোগ ওঠে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় কোতোয়ালি থানার পুলিশ আটক করে জবি ছাত্রলীগের কর্মী নবম ব্যাচের গণিত বিভাগের রাকিবুল ইসলাম রিয়াদ ও দশম ব্যাচের ছাত্র নূর-ই-আলম নিশানকে।

অভিযোগ আছে, এ ঘটনায় সহযোগী হিসেবে ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের অষ্টম ব্যাচের ইংরেজি বিভাগের ছাত্র মঞ্জুর আহমেদ মিলন, দশম ব্যাচের ফিন্যান্স বিভাগের মোবারক হোসেন ও গণিত বিভাগের আকাশ এবং ১২তম ব্যাচের উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের সৌরভ। এ নিয়ে কোতোয়ালি থানায় একটি অপহরণ মামলা হয়।

২২ জুলাই ছাত্রলীগের নবীন কর্মীরা সংঘর্ষে জড়ান। বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি তরিকুল ইসলাম সংঘর্ষ থামাতে গেলে তাকেও লাঞ্ছিত করা হয়। সেদিন বাসায় ফেরার পথে দৈনিক ইনকিলাবের বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি নাইমুর রহমান নাবিলের ওপর হামলা চালান ছাত্রলীগের কর্মীরা।

এ দুই ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ১১তম ব্যাচের শিক্ষার্র্থী পরাগ, সাজেদুল নাইম, ১২তম ব্যাচের আশিক, নুরে আলম, অর্ণব, কৌনিক, মারুফ জড়িত ছিলেন বলে অভিযো আছে।

৮ জুলাই কোটা সংস্কার আন্দোলনের সংবাদ সংগ্রহ করতে গেলে বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত সাংবাদিকদের ওপর হামলা চালান ছাত্রলীগ কর্মীরা। এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের নবম ব্যাচের রিয়াজ, ১০ম ব্যাচের কামরুল, রাশেদ রাসু, ১১তম ব্যাচের পরাগ, ১২তম ব্যাচের নুরে আলম, সাইমুুম, সাইফুল্লাহ বিজয়, সাজু জড়িত বলে তথ্য আছে। পরাগ ও নুরে আলমকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়।

এ নিয়ে বিভিন্ন ঘটনায় সংগঠন ও বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার হন যুগ্ম সম্পাদক রিশাদ, সাংগঠনিক সম্পাদক আকিব, ছাত্রলীগ কর্মী শান্ত, শাকিল, রাজিবসহ ১৫ জনের বেশি।

সংবাদটি শেয়ার করুন

শিক্ষা বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিক্ষা এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :