উপকূলের মাটি খুঁড়ে ধ্বংস করা হচ্ছে বন

প্রকাশ | ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ০৮:৫২

চট্টগ্রাম ব্যুরো

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে রাতের আঁধারে এস্কাভেটর দিয়ে মাটি খুঁড়ে অন্য এলাকায় পাচার করা হচ্ছে উপকূলীয় মাটি। রাতের আঁধারে সহস্রাধিক গাড়ি করে মাটি নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এরই মধ্যে নষ্ট হয়ে গেছে প্রায় ১০ একর উপকূলীয় সবুজ বনায়ন ও আবাদি জমি। পরিবেশগত ঝুঁকি ও আইনকে তোয়াক্কা না করে বাড়বকুণ্ড বেড়িবাঁধের পশ্চিম পাশ থেকে বালিমাটি তুলে নিচ্ছে স্বার্থান্বেষীরা। সাগরপাড়ের মাটি খুঁড়ে নিয়ে উপকূলের বনায়ন ধ্বংস করায় হুমকির মুখে পরিবেশ। প্রশাসনের কোনো পদক্ষেপ না থাকায় স্থানীয়দের মধ্যে ছড়িয়েছে ক্ষোভ।

শিল্প ও বাণিজ্যের জন্য চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের কথা এসে যায়। গত কয়েক বছর ধরে শিল্পপতিরা সীতাকুণ্ডের সাগরপাড়ে নতুন নতুন শিল্প-কারখানা গড়ে তোলার লক্ষ্যে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামে প্রচুর পরিমাণ সম্পদ ক্রয় করেন। এতে হাতেগোনা কয়েকটি প্রতিষ্ঠান স্থাপিত হলেও প্রস্তাবিত আছে অনেক প্রতিষ্ঠান। এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে কিছু স্বার্থানেষী মহল নানাভাবে তাদের স্বার্থ হাসিল করেই চলছে।

জানা যায়, বাড়বকুণ্ড ইউনিয়নের সমুদ্র উপকূলের স্লুইস গেট সংলগ্ন এলাকায় এস্কেভেটর দিয়ে সবুজ বনায়ন ও মাটি খুঁড়ে সমতল ভূমিকে গভীর গর্তে পরিণত করে চলছে স্থানীয় প্রভাবশালী একটি মহল। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে আঁতাত করে এই প্রভাবশালী মহল রাতারাতি সবুজ চর ও সবুজ বনায়ন দুটিই বিলীন করে দিচ্ছে।

পরিবেশ রক্ষার্থে সরকার বারবার বনায়ন সৃষ্টির জন্য বিভিন্ন প্রকার বিজ্ঞপ্তি ও প্রচারণা চালালেও তাতে কোনো কর্ণপাত করছেন না স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা। এ অবস্থায় সীতাকুণ্ডের সাগর তীরের সৌন্দর্য ও পরিবেশ নষ্টের ফলে তীরবর্তী অংশ ভেঙে কৃষিজমি ও বসতবাড়ি সমুদ্রগর্ভে বিলীন হয়ে যাওয়ার আশংকা তৈরি হয়েছে বলে জানান স্থানীয়রা।

সরেজমিন দেখা গেছে, গত কয়েক দিন ধরে বাড়বকুণ্ডের মোটরভিটা এলাকার পশ্চিম দিক থেকে সারারাত পর্যন্ত এস্কেভেটর মেশিন দিয়ে মাটি খুঁড়ে ড্রামট্রাক ভর্তি করে অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছে কতিপয় লোকজন। উপকূলীয় তীর থেকে ভূমিখেকোরা যে হারে মাটি খোঁড়াখুঁড়ি শুরু করেছে তার ফলে অচিরেই ভেঙে পড়বে সাগরের তীরবর্তী অংশ।

এদিকে সবুজ বনায়নে বাস করা বণ্যপ্রাণী হরিণ, বানার, চিতাবাঘ বিলুপ্তি হয়ে যাবে,  আর নদীর তীরবর্তী অংশের পাশাপাশী ক্ষতির সম্মুখীন হবে কৃষি জমি ও লোকালয়ও ক্ষতির মুখে পড়েছে।

সীতাকুণ্ড উপকূলীয় বনকর্মকর্তা, মো. কামাল উদ্দিন বলেন, ‘উপকূলের সৌন্দর্য ও পরিবেশ রক্ষার্থে অতীতে ব্যাপকহারে গাছের চারা রোপণ করে আমরা সবুজ বনায়ন সৃষ্টি করেছি, কিছু অসাধু লোকের কারণে বনায়ন ধ্বংসের ফলে পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে। বর্তমানে সাগর তীরে ব্যাপকহারে শিল্প-কারখানা, এ অবস্থায় সাগর তীর থেকে যে হারে মাটি উত্তোলন করা হচ্ছে তাতে পরিবেশ ধ্বংস হয়ে মারাত্মক ঝুঁকির মুখে পড়বে উপকূলীয় বন ও বনে বসবাস করা বন্য প্রাণীরা।’

সীতাকুণ্ড উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মিণ্টন রায় বলেন, সাগর তীর থেকে মাটি উত্তোলনের বিষয়টি আমার জানা ছিল না। তদন্ত করে দ্রুত ব্যবস্থা নিচ্ছি।’

সীতাকু- উপজেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-প্রকৌশলী আব্দুল আজিম বলেন, ‘সমুদ্রের তীর থেকে এভাবে মাটি উত্তোলন সম্পূর্ণ আইনের পরিপন্থী। অপরিকল্পিতভাবে মাটি উত্তোলনের ফলে পানি রক্ষা বাঁধের মারাত্মক ঝুঁকি হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে। এতে পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে।’

চট্টগ্রাম জেলা পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক ফেরদৌস আনোয়ার বলেন, ‘সাগর তীরের মাটি উত্তোলন ও বনায়ন ধ্বংসের বিষয়টি আমার জানা ছিল না। এটি হয়ে থাকলে পরিবেশের ব্যাপক ক্ষতি হতে পারে।

অন্যদিকে স্থানীয় চেয়ারম্যান ছাদাকাত উল্ল্যাহ মিয়াজীকে এ বিষয়ে জানতে বারবার তার মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।