সন্তানদের মেডিকেলে অবৈধ ভর্তির চেষ্টায় দুই চিকিৎসক

আরিফিন তুষার, বরিশাল
 | প্রকাশিত : ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ০৯:০২

বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজের দুই চিকিৎসকের বিরুদ্ধে তাদের সন্তানদের অবৈধভাবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটিতে ভর্তির চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে। প্রাপ্ত তথ্যমতে, ভর্তি পরীক্ষায় না টেকার পরও ৪০ লাখ টাকার ঘুষ দিয়ে তাদের ভর্তির চেষ্টা করেন ওই দুই চিকিৎসক।

তবে টাকা নিয়েও ভর্তি করাতে পারেনি প্রতারক চক্র। এখন তারা টাকা ফেরত চাইছেন। এবং এ নিয়ে সেখানে বেশ তোলপাড় হচ্ছে। একজন চিকিৎসক বিষয়টি স্বীকারও করেছেন। যদিও তার দাবি, ফলাফল পুনঃনিরীক্ষা করতেই টাকা দিয়েছিলেন। তবে এ জন্য ২০ লাখ টাকা কেন লাগবে, সে প্রশ্নের জবাব মেলেনি।

এই ঘটনায় মেডিকেল কলেজের চতুর্থ শ্রেণির এক কর্মচারীর বিরুদ্ধে ইতিমধ্যে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তবে দুই চিকিৎসকের বিষয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করছে না। অভিযোগ রয়েছে, ৪০ লাখ টাকা ঘুষের মধ্যস্থতাকারীকে সামনে এনে দুই চিকিৎসককে বাঁচানোর চেষ্টা চলছে।

তদন্ত কমিটির তথ্য অনুযায়ী দুই চিকিৎসকের মেয়ে ২০১৭ সালে মেডিকেলে ভর্তি পরীক্ষায় অকৃতকার্য হন। পরে মেডিকেলের কর্মচারী জাহাঙ্গীরের মধ্যস্থতায় একটি চক্রের সঙ্গে ৪০ লাখ টাকায় চুক্তি করেন ওই দুই চিকিৎসক।

প্রথমে শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আলী হাসানের পরিবারের কাছ থেকে ১০ লাখ টাকা নেয় ওই চক্র। চেকের মাধ্যমে এই অর্থ প্রিমিয়ার ব্যাংকের ঢাকার ধানমন্ডি শাখা থেকে তোলা হয়েছে। পরে আরও তিন লাখ টাকা একই ব্যাংকের বরিশাল শাখা থেকে তোলা হয়। অপর একজন চিকিৎসক সাইফুল ইসলামের কাছ থেকে তার মেয়ের জন্য একবারেই নেওয়া হয় ২০ লাখ টাকা।

কিন্তু দুই ছাত্রীর একজনকেও ভর্তি করাতে পারেনি ওই চক্রটি। এ নিয়ে জাহাঙ্গীরের সঙ্গে চিকিৎসক আলী আহসানের দ্বন্দ্ব তুঙ্গে ওঠে। পরে বিষয়টি ফাঁস হয়ে যায়। পরে জানা যায়, সাইফুল ইসলামের বিষয়টিও।

সাইফুল ইসলাম বর্তমানে ইনস্টিটিউট অফ হেলথ অ্যান্ড টেকনোলজি অর্থ্যাৎ নার্সিং ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষের দায়িত্বে আছেন। ঘটনার সময় তিনি শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজের সহকারী পরিচালক হিসেবে দায়িত্বে ছিলেন।

অবৈধ পন্থায় মেয়েদের কলেজে ভর্তি করতে এই বিপুল পরিমাণ টাকা ঘুষ হিসেবে দেওয়ায় নৈতিকতার পাশাপাশি তাদের টাকার উৎস নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। আলী হাসানের স্ত্রী হামিদা খানম জানিয়েছেন, এখানে টাকা দিয়েও ভর্তি করাতে না পেরে পরে তার মেয়েকে হলি ফ্যামিলি মেডিকেল কলেজে ভর্তি করিয়েছেন। সেখানে আরও ১৬ লাখ ৭০ হাজার টাকা জমা দেওয়া হয়েছে।

শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ সৈয়দ মাকসুমুল হক এই তথ্যকে বিস্ময়কর বলেছেন। বিষয়টি প্রকাশ পাওয়ায় গত ১৬ জানুয়ারি ঘুষের মধ্যস্থতাকারী জাহাঙ্গীরের বিষয়ে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয় বরিশালের সিভিল সার্জনকে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক আবুল কালাম আজাদ স্বাক্ষরিত চিঠিতে এই দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তবে দুই চিকিৎসকের বিরুদ্ধে কেন ব্যবস্থা নেওয়া হবে না, এই প্রশ্নের কোনো জবাব দিচ্ছেন না কেউ।

তবে তদন্ত এখনো শুরু হয়নি। এর কারণ হিসেবে সিভিল সার্জন মনোয়ার হোসেন বলেন, চিঠিতে অভিযোগের কপি সংযুক্ত না করাই এর কারণ।

অভিযোগ রয়েছে, ওই দুই চিকিৎসকের আয়ের সঙ্গে পারিবারিক ব্যয় অসামঞ্জস্যপূর্ণতার উদাহরণ হিসেবে ৩২ লাখ টাকা লেনদেনের বিষয়টি দুদক খতিয়ে দেখতে পারে আশঙ্কায় গোটা তদন্ত প্রক্রিয়া থমকে দাঁড়িয়েছে। কারণ, এখানে আরও কারও ফেঁসে যাওয়ার ভয় আছে।

অভিযোগের বিষয় শিশু বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আলী হাসান বলেন, ‘ভর্তির জন্য নয়, টাকা দিয়েছি আমার মেয়ের ভর্তি পরীক্ষার ফল পুনঃনিরীক্ষণের জন্য।’

ফল পুনঃনিরীক্ষণের জন্য এত টাকা লাগবে কেন, এই প্রশ্নে এই চিকিৎসক দাবি করেন, ‘মন্ত্রণালয়ের কিছু খরচের বিষয় থাকায় ২০ লাখ টাকায় চুক্তি করেছিলাম।’

অভিযুক্ত অপর চিকিৎসক সাইফুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘আমি না, আরেক সাইফুল ছিলেন মেডিকেলের উপপরিচালক। তিনি এই টাকা দিয়েছেন।’

তবে এই চিকিৎসক নিজেই তখন ছিলেন ওই পদে। এই নিয়ে জানতে চাইলে তিনি আর কথা বাড়াতে চাননি।

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :