কারামুক্ত জাহালম, বিচার চাইলেন দুদকের
গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছেন দুদকের দায়ের করা ৩৩ মামলার ভুল আসামি জাহালম। রবিবার দিবাগত রাত একটার দিকে কাশিমপুর কারাগার পার্ট-২ থেকে মুক্তি পান তিনি। এ সময় কারাফটকে জাহালমের ভাই সাহানুর মিয়া উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) করা মামলার ভুল আসামি জাহালমকে সব অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেয় হাইকোর্ট। একইসঙ্গে তাকে তাৎক্ষণিকভাবে মুক্তির নির্দেশ দেয়া হয়।
কাশিমপুর কারাগারের জেল সুপার সুব্রত কুমার বালা জানান, রাতে জাহালমের মুক্তি সংক্রান্ত কাগজপত্র আদালত থেকে কাশিমপুর কারাগারে এসে পৌঁছে। পরে যাচাই-বাছাই ও আনুষ্ঠানিকতা শেষে তাকে কারাগার থেকে মুক্তি দেওয়া হয়।
মুক্তি পাওয়ার পর এক প্রতিক্রিয়ায় জাহালম বলেন, দুদকের ভুলে তিনি বিনা কারণে তিন বছর জেল খেটেছেন। তাই দুদকের কঠিন বিচার দাবি করেন তিনি। সঠিক তদন্ত করে যেন আসামি ধরা হয় এই আহবান জানান তিনি।
জাহালমের ভাই সাহানুর মিয়া বলেন, ‘যাদের ভুলের কারণে তার ভাই জেল খেটেছে আমরা তাদের বিচার। এবং ক্ষতিপূরণ চাই।’
কারাফটক থেকে জাহালম বেরিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে খুশিতে কান্নায় ভেঙে পড়েন তাদের স্বজনরা। পরে একটি মাইক্রোবাসে করে কারা এলাকা ত্যাগ করেন তারা।
উল্লেখ্য, গতকাল রবিবার হাইকোর্টের বিচারপতি এফআরএম নাজমুল আহসান ও বিচারপতি কেএম কামরুল কাদেরের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ জাহালমকে সব অভিযোগ থেকে অব্যাহতির আদেশ দেন। নিরীহ শ্রমিক জাহালমকে গ্রেপ্তার ও কারাগারে রাখার ঘটনায় দুদকের তদন্ত নিয়ে প্রশ্ন তোলেন আদালত। আদালত বলেন, বিনা দোষে জাহালামকে কারাগারে রাখা আরেকটি জজ মিয়ার নাটকের মতো ঘটনা।
গত ২৮ জানুয়ারি দেশের শীর্ষ স্থানীয় একটি দৈনিকে সোনালী ব্যাংকের প্রায় সাড়ে ১৮ কোটি টাকা জালিয়াতির ৩৩টি মামলায় নিরপরাধ জাহালমের জেলখাটা নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।
‘৩৩ মামলায় ‘ভুল’ আসামি জেলে: ‘স্যার, আমি জাহালম, সালেক না’ শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদটির তথ্য অনুযায়ী, আবু সালেকের (মূল অপরাধী) বিরুদ্ধে সোনালী ব্যাংকের সাড়ে ১৮ কোটি টাকা জালিয়াতির ৩৩টি মামলা হয়েছে। কিন্তু আবু সালেকের বদলে জেল খাটছেন, আদালতে হাজিরা দিয়ে চলেছেন জাহালম। তিনি পেশায় পাটকল শ্রমিক।
দৈনিকে প্রকাশিত প্রতিবেদনটি আদালতের নজরে আনেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অমিত দাসগুপ্ত। এর পরিপ্রেক্ষিতে রবিবার দুদকের মহাপরিচালক (আইন) মইনুল ইসলাম, দুদকের মামলার বাদী পরিচালক আব্দুল্লাহ আল জাহিদ, আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিবের একজন প্রতিনিধি ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের সচিবের মনোনীত প্রতিনিধিকে আদালত তলব করে। গতকাল সকালে ওই চারজন হাইকোর্টে হাজির হন।
উল্লেখ্য, দুদকের করা মামলার পর ২০১৬ সালের ৬ জুন জাহালমকে নরসিংদী থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে ওই বছরের ২৭ মে তাকে কাশিমপুর কারাগারে স্থানান্তর করা হয়।
ঢাকা টাইমস/৪ফেব্রুয়ারি/প্রতিনিধি/এমআর