ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কষ্ট শেষ হবে জুনে

প্রকাশ | ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ১৫:৩৫ | আপডেট: ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ১৭:০৪

শেখ আদনান ফাহাদ

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যাত্রীদের কষ্ট আগামী জুন নাগাদ সম্পূর্ণভাবে শেষ হতে যাচ্ছে বলে আশ্বাস দিচ্ছে কর্তৃপক্ষ। মেঘনা ও গোমতী সেতুকে ঘিরে মানুষের দুর্ভোগ চলছে দীর্ঘদিন থেকে। অথচ ইতোমধ্যেই শেষ হয়েছে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক চার লেনে উন্নীতকরন প্রকল্প। কিন্তু ঢাকা থেকে কুমিল্লা পার হতেই চলে যাচ্ছে ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময়। চট্টগ্রাম থেকে পুরো রাস্তা আরামে এসে কুমিল্লার পার হতে গিয়ে আটকে যাচ্ছে গাড়িগুলো। এই কষ্ট আসছে জুনে শেষ হবে বলে গণমাধ্যমে খবর এসেছে।  

বন্দর নগরী চট্টগ্রাম আর রাজধানী ঢাকার মধ্যে সংযোগকারী এই মহাসড়ক দেশের অর্থনীতির অন্যতম মূল শক্তি। কিন্তু উন্নয়ন যজ্ঞ শুরু হওয়ার পর থেকে কুমিল্লার নিকট মেঘনা ও গোমতী সেতুকে ঘিরে যানজট যেন স্থায়ী রূপ নেয়। পরিস্থিতি এমনই গুরুতর হয়েছে যে, মাঝে মাঝে কুমিল্লা থেকে ঢাকায় আসতেও ৭/৮ ঘণ্টা সময় লেগে যাচ্ছে। বহুদিন থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক ছিল দুই লেন বিশিষ্ট। তবে শেখ হাসিনার সরকার ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ককে চার–লেনে উন্নীত করতে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে।

২০১৬ সালের ২ জুলাই তারিখে আওয়ামী লীগ সরকারের বড় মেগাপ্রকল্প ঢাকা-চট্টগ্রাম এবং জয়দেবপুর-ময়মনসিংহ চার লেন মহাসড়কের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত  অনুষ্ঠানে সুইচ টিপে দুই মহাসড়কে যান চলাচলের জন্য খুলে দেন সরকার প্রধান শেখ হাসিনা।

চার লেন প্রকল্পের উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান ঘটবে এ আশায় বুক বাধে এ দুই মহাসড়ক ব্যবহারকারীরা। কথা ছিল ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম পৌঁছতে লাগবে মাত্র সাড়ে ৪ ঘণ্টা। জয়দেবপুর থেকে ময়মনসিংহ পৌঁছতে লাগবে মাত্র এক ঘণ্টা। দেশের অর্থনীতির লাইফলাইন হিসেবে পরিচিত ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের চার লেন প্রকল্পের কাজ শেষ হতে লেগেছে প্রায় ছয় বছর। ১৯২ কিলোমিটার ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক চার লেন প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছিল ২০১০ সালের জানুয়ারিতে। এতে ব্যয় হয়েছে ৩ হাজার ৭৯০ কোটি টাকা। 

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক চার লেনে উন্নীতরকণ প্রকল্পটি জাতীয় জনগুরুত্বপূর্ণ অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত একটি প্রকল্প। বন্দরনগরী চট্টগ্রামের সঙ্গে রাজধানী ঢাকার সড়কপথে যোগাযোগ যুগোপযোগী, সহজতর, দ্রুত, যানজটমুক্ত ও উন্নততর করার লক্ষ্যে বিদ্যমান ঢাকা-চট্টগ্রাম জাতীয় মহাসড়ক চার লেনে উন্নীতকরণ প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়।

প্রকল্পের আওতায় যেসব নির্মাণকাজ করা হয়েছে তা হলো, ২৩টি সেতু, ২৪২টি কালভার্ট, ৩টি রেলওয়ে ওভারপাস, ১৪টি সড়ক বাইপাস, ২টি আন্ডারপাস, ৩৪টি স্টিল ফুটওভার ব্রিজ এবং ৬১টি বাস-বে নির্মাণ। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের যাত্রাবাড়ী থেকে কাঁচপুর অংশ ইতিমধ্যে আটলেনে উন্নীত করা হয়েছে। দেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড গতিশীল হওয়ায় এ সড়কের ওপর যানবাহন এবং পণ্যবাহী পরিবহনের চাপ ক্রমশ বাড়ছে। এ মহাসড়কে বিদ্যমান কাঁচপুর, মেঘনা ও গোমতী সেতু তিনটি বাড়তি যানবাহনের চাপ মোকাবিলা করতে পারছে না। এ বাস্তবতায় সরকার জাইকার অর্থায়নে বিদ্যমান তিনটি সেতুর পাশে আরও নতুন তিনটি সেতুর নির্মাণকাজ শুরু করে। ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বিবেচনায় নিয়ে সরকার সদ্যসমাপ্ত চারলেন মহাসড়কের পাশাপাশি ঢাকা-চট্টগ্রাম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের প্রস্তুতিমূলক কাজ শুরু করে।

গাড়িগুলো রাজধানীর সুন্দর ফ্লাইওভার পার হয়ে কাঁচপুর পর্যন্ত দ্রুত গিয়ে থেমে যাচ্ছে। অন্যদিকে চারলেন রাস্তা ফাঁকা পেয়ে চট্টগ্রাম থেকে গাড়িগুলো কুমিল্লা পর্যন্ত বেশ দ্রুত গতিতে আসে। কিন্তু কুমিল্লা পার হতে পারছে না। ফলে যেখানে মাত্র ৪/৫ ঘণ্টা সময় লাগার কথা, ইদানিং সেখানে সময় লাগছে ১০/১২ ঘণ্টা। এই সমস্যা জুন নাগাদ শেষ হবে বলে বলা হচ্ছে ।  সাধারণ সময়েই এমন অবস্থা। ঈদের মত বড় উৎসবে মানুষ কী যে কষ্ট হয় সেটি বর্ণনাতীত।

আসছে ঈদুল ফিতরে মানুষ ঢাকা থেকে কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, ফেনি, নোয়াখালীসহ সব পার্বত্যজেলায় খুব আরামে চলে যাবেন। কারণ নির্মাণাধীন চার-লেন সেতুগুলো খুলে দেয়া হবে আসছে জুনে। চার –লেন বিশিষ্ট রাস্তার সাথে মিল রেখে সেতুগুলো বানানো হচ্ছে। এতে আর দুই পাশে অসম্ভব জ্যাম তৈরি হবে না। জাপানের প্রতিষ্ঠান নির্মাণ করছে এই সেতুগুলো।

ইতোমধ্যে দ্বিতীয় কাঁচপুর সেতুর নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে বলে জানিয়েছে সেতু কর্তৃপক্ষ। আশা করা হচ্ছে ফেব্রুয়ারির কোনো একদিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দ্বিতীয় কাঁচপুর সেতু উদ্বোধন করবেন।  এপ্রিলে শেষ হতে যাচ্ছে নতুন মেঘনা সেতুর। অন্যদিকে নতুন গোমতী সেতুর নির্মাণ শেষ হবে জুনের মধ্যে। কাঁচপুর সেতুর পূর্ব পাশের ওভারপাস নির্মাণের কাজ শেষ হবে মার্চ মাসে।

তিন সেতু প্রকল্পের পরিচালক সালেহ মোঃ নুরুজ্জামান গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, এই তিন সেতুর কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। আগামী ঈদের আগেই এই তিন সেতু খুলে দেয়া হবে।

বিস্ময়কর তথ্য হচ্ছে এই তিন সেতু নির্মাণ করতে গিয়ে নির্ধারিত সময়ের আগেই কাজ শেষ হতে যাচ্ছে। এমনকি যে ব্যয় ধরা হয়েছিল, সেটিও কম হয়েছে বলে জানিয়েছেন সেতু কর্তৃপক্ষ। নতুন তিনটি সেতু চালু হয়ে গেলে, পুরনো কাঁচপুর সেতুর সংস্কার কাজে হাত দিবে সরকার।

এখন সবাই কল্পনা করুন। আপনি চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় বাসে করে চলে আসলেন ৪/৫ ঘণ্টায়। কল্যাণপুর বা যাত্রাবাড়ী নেমে কাছের মেট্রোরেল স্টেশনে গিয়ে রেলে উঠে ২০/৩০ মিনিটে চলে গেলেন আপনার গন্তব্যে! অবিশ্বাস্য মনে হয় ? কিন্তু এটাই সত্য। কারণ ঢাকায় মেট্রোরেল নির্মাণ প্রকল্প ইতোমধ্যেই অনেকখানি এগিয়ে গেছে।    

ঢাকার উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত দেশের প্রথম মেট্রো রেলের নির্মাণ কাজ ২০২০ সালের মধ্যেই শেষ করা সম্ভব হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।

মন্ত্রী জানিয়েছেন, মেট্রোরেল এমআরটি-লাইন ৬ এর কাজ পুরোদমে চলছে। হলি আর্টিজান ট্র্যাজেডির জন্য প্রকল্প ছয় মাস পিছিয়ে গিয়েছিল। তবে জাপানিজ কোম্পানি ও জাইকা এবং সরকারের অদম্য মনোভাবের জন্য সরকার সময় কাভার করে ফেলেছে।

সড়ক পরিবহন মন্ত্রী গণমাধ্যমকে ইতোমধ্যেই আরও বলেছেন যে, ২০১৯ সালের মধ্যে উত্তরা থেকে আগারগাঁও এবং ২০২০ সালে মতিঝিল বাংলাদেশ ব্যাংক পর্যন্ত পুরো মেট্রোরেলের কাজ শেষ করা সম্ভব হবে।

প্রায় বিশ কিলোমিটার দীর্ঘ মেট্রোরেল প্রকল্পের পুরো কাজ হচ্ছে আটটি প্যাকেজে ভাগ করে। বর্তমানে তৃতীয় ও চতুর্থ প্যাকেজের আওতায় উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত প্রায় ১২ কিলোমিটার পথে ভায়াডাক্ট ও নয়টি স্টেশন নির্মাণের কাজ চলছে।

আর পঞ্চম প্যাকেজের আওতায় আগারগাঁও থেকে কারওয়ান বাজার পর্যন্ত  ৩ দশমিক ২ কিলোমিটার  ভায়াডাক্ট ও তিনটি স্টেশন এবং ষষ্ঠ প্যাকেজের আওতায় কারওয়ান বাজার থেকে মতিঝিল পর্যন্ত প্রায় ৪ দশমিক ৯ কিলোমিটার ভায়াডাক্ট ও চারটি স্টেশন নির্মাণ করা হবে।

এক হাজার ৮৫৫ কোটি টাকা ব্যয়ে পঞ্চম প্যাকেজ বাস্তবায়িত হবে। আর  ষষ্ঠ প্যাকেজের কাজের জন্য ডিএমটিসিএল চুক্তি করেছে সুমিটোমো মিটসুই কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেড ও আইটিডির যৌথ কোম্পানির সঙ্গে। প্রকল্পের এই অংশের ভায়াডাক্ট ও স্টেশন নির্মাণে ব্যয় হবে ২ হাজার ৩৩২ কোটি টাকা।

ঢাকার সাধারণ মানুষ কি বুঝতে পারছে, তাঁদের শহরে কী হতে যাচ্ছে? এই লেখায় শুধু ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক ব্যবহারকারীদের কষ্ট আর কষ্টলাঘবের কথা বলা হয়েছে। শেখ হাসিনার সরকার সারাদেশেই উন্নয়নকর্ম চালাচ্ছে। ইতোমধ্যেই বাংলাদেশ অনেক বদলে গেছে। উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে বাংলাদেশ। উন্নত দেশও হবে একদিন। তবে শর্ত হল বর্তমান উন্নয়ন প্রকল্পগুলো শেষ হতে দিতে হবে। এর জন্য জাতীয় ঐক্যের ডাক ইতোমধ্যেই দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

লেখকঃ শিক্ষক ও সাংবাদিক।