বাগেরহাটে ‘চিকিৎসককে মারধরে’ দুইজন গ্রেপ্তার

বাগেরহাট প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ১৯:১৩

বাগেরহাট সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক শেখ ইমরান মোহাম্মদকে মারধর করার অভিযোগ উঠেছে রোগীর দুই স্বজনের বিরুদ্ধে। রবিবার রাত আটটার দিকে সদর হাসপাতালের গেটে এই মারধরের ঘটনা ঘটে। পুলিশ অভিযোগ পেয়ে রাতেই ওই দুইজনকে গ্রেপ্তার করে।

মারধরের শিকার চিকিৎসক শেখ ইমরান মোহাম্মদ বাদী হয়ে দুই ব্যক্তির বিরুদ্ধে সরকারি কর্তব্যকাজে বাধা দেয়ার অভিযোগ এনে বাগেরহাট মডেল একটি মামলা করেছেন।

সোমবার সকালে পুলিশ তাদের আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠিয়েছে।

হাসপাতালে ভর্তি মিলন খানের স্ত্রী সেলিনা পারভীন ডাক্তারের সাথে তার স্বামী ও ভাইয়ের ঘটে যাওয়া ঘটনার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছেন। তবে ঘটনার পর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ওয়ার্ডে বসে আমাকে, আমার স্বামী, ননদ ও ভাইকে মারধর করেছে বলে অভিযোগ করেছেন।

তার স্বামী ও ভাইকে পুলিশ যেমন আটক করেছে, তেমনি তিনিও তার স্বামী ও ভাইকে যারা মারধর করেছেন তাদের বিচার কে করবে বলে প্রশ্ন রাখেন। তিনি তাদেরও বিচার দাবি করেন।

এদিকে, হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ইমরানকে মারধরের খবর পেয়ে রাতেই সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ও সিভিল সার্জন ডা. জি কে এম সামসুজ্জামান ছুটে যান। চিকিৎসককে মারধরের খবর সহকর্মী চিকিৎসক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়লে তারা ক্ষোভে ফেটে পড়েন। তারা এই ঘটনার নিন্দা এবং দোষীদের কঠোর শাস্তির দাবি জানান।

গ্রেপ্তাররা হলেন, বাগেরহাট পৌরসভার খারদ্বার এলাকার মিলন খান এবং হাড়িখালী এলাকার মাসুম বিল্লাহ।

জানা গেছে, শহরের খারদ্বার এলাকার বাসিন্দা মিলন খানের আড়াই মাস বয়সী শিশু সোলায়মান খানের শ্বাসকষ্ট বাড়লে রবিবার সন্ধ্যায় তাকে চিকিৎসা দিতে হাসপাতালে ভর্তি করেন। মিলন খান ও তার পরিবারের সদস্যরা তার ছেলের চিকিৎসা নিয়ে দুশ্চিন্তায় ছিলেন। মিলন খান তার ছেলেকে হাসপাতালে ভর্তি করে তার বোন আঁখি, শ্যালক মাসুম বিল্লাহকে নিয়ে হাসপাতালের বাইরে যাচ্ছিলেন। এসময় জরুরি বিভাগের গেট দিয়ে বের হওয়ার সময় চিকিৎসক শেখ ইমরান মোহাম্মদের সাথে তুচ্ছ বিষয় নিয়ে মারধরের ঘটনা ঘটে।

সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক শেখ ইমরান মোহাম্মদ বলেন, রবিবার রাত আটটার দিকে হাসপাতালে কর্তব্য শেষ করে অন্য আরেকজনকে দায়িত্ব বুঝে দিয়ে বাসায় ফেরার উদ্দেশ্যে জরুরি বিভাগের গেটের সামনে যাই। গেটে ঢোকার সময় আমার সাথে হাসপাতালে ভর্তি এক শিশু রোগীর দুইজনের গায়ে সামান্য ধাক্কা লাগে। এসময় হাসপাতালের কয়েকজন ইন্টার্নি চিকিৎসক ওই রোগীর স্বজনদের আমার পরিচয় বললে তারা তা শুনে ক্ষিপ্ত হয়ে আমাকে প্রথমে রুঢ় ভাষায় গালাগাল করে। আমি তাদের কথার প্রতিবাদ করলে তারা চাড়াও হয়ে আমাকে চর থাপ্পড় ও লাথি মারে।

হাসপাতালে ভর্তি মিলন খানের স্ত্রী সেলিনা পারভীন বলেন, ডাক্তারের সাথে তার স্বামী ও ভাইয়ের ঘটে যাওয়া ঘটনার জন্য দুঃখ প্রকাশ করছি। তবে ঘটনার পর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ওয়ার্ডে বসে আমাকে, আমার স্বামী মিলন, ননদ আঁখি ও ভাই মাসুমকে মারধর করেছে। তার স্বামী ও ভাইকে পুলিশ যেমন আটক করেছে, তেমনি তিনিও তার স্বামী ও ভাইকে যারা মারধর করেছেন, তাদের বিচার কে করবে বলে প্রশ্ন রাখেন। তিনি তাদেরও বিচার দাবি করেন।

ইন্টার্নি চিকিৎসক রাকিবুল ইসলাম অভিযোগ করে বলেন, হাসপাতালের ভর্তি হওয়া এক রোগীর বিষয়ে করণীয় সম্পর্কে পরামর্শ দিয়ে জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ইমরান মোহাম্মদ বাসায় ফিরছিলেন। এসময় গেট থেকে ঢোকার সময় স্যারের সাথে দুই বহিরাগতের ধাক্কা লাগে। এতে তারা ক্ষুব্ধ হয়, আমরা তাদের ইমরান স্যারের পরিচয় বলার পরেও তারা স্যারকে মারধর করে। এই ঘটনার পর এখানে কর্মরতরা এক ধরনের নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। আমাদের নিরাপত্তা দিতে স্থানীয় সাংসদ ও প্রশাসনের কাছে দাবি জানান।

রোগীর স্বজনদের মারধর করার অভিযোগ অস্বীকার করে বাগেরহাট সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ও সিভিল সার্জন ডা. জি কে এম সামসুজ্জামান বলেন, হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক বাইরের লোকের দ্বারা আঘাতপ্রাপ্ত হোক- এটা আমরা চাই না। এই ঘটনায় আইন যেটা বলে আমরা তার শান্তিপূর্ণ সমাধান চাই। হাসপাতালে চিকিৎসককে মারধরের ঘটনাটি খুবই দুঃখজনক। হাসপাতালে ভবিষ্যতে এধরনের ঘটনা ঘটুক তা আমরা চাই না।

বাগেরহাট মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহাতাব উদ্দিন এই প্রতিবেদককে বলেন, হাসপাতালের জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক শেখ ইমরান মোহাম্মদকে মারধর করার অভিযোগ পেয়ে দুই ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে সরকারি কর্তব্য কাজে বাধা দানের অভিযোগে মামলা হয়েছে। সোমবার সকালে তাদের আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

(ঢাকাটাইমস/৪ফেব্রুয়ারি/এলএ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :