দুদকের ভুলে জাহালমের কারাভোগ

লাপাত্তা সালেকের শাস্তি চান মা-বাবা

প্রকাশ | ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ১৮:৫৯ | আপডেট: ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ২২:২৯

বদরুল ইসলাম বিপ্লব, ঠাকুরগাঁও
মামলার প্রকৃত আসামি আবু সালেক। ফাইল ছবি

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) ভুলে যেসব মামলায় নিরপরাধ জাহালম তিন বছর কারাগারে ছিল, সেসব মামলার আসল আসামি আবু সালেকের শাস্তি চান তার মা-বাবা। জালিয়াতি করে অর্থ আত্মসাতের পর লাপাত্তা সালেক। যোগাযোগ নেই তার পরিবারের সঙ্গেও।  প্রথম স্ত্রীর সঙ্গে বিচ্ছেদের পর দ্বিতীয় বিয়ে করেছেন সালেক। আর সেই স্ত্রী নিয়ে সালেক কোথায় আছেন জানেন না কেউ।

সোনালী ব্যাংকের প্রায় সাড়ে ১৮ কোটি টাকা জালিয়াতির ৩৩টি মামলায় দুদকের ভুলে টাঙ্গাইলের নিরপরাধ পাটকল শ্রমিক জাহালম ৩ বছর জেল খাটার পর উচ্চ আদালতের নির্দেশে গত রবিবার রাতে মুক্তি পেয়েছেন। এসব মামলার প্রকৃত আসামি আবু সালেক।

সরেজমিনে দেখা গেছে, সদর উপজেলার সিঙ্গিয়া গ্রামের আব্দুল কুদ্দুসের ৪ ছেলে-মেয়ের মধ্যে তৃতীয় সালেক। গ্রামে একটি নতুন পাকা বাড়ি ফাঁকা পড়ে আছে তার। বাবা-মা ও বিবাহিত বোন থাকলেও সারাক্ষণই বাড়িটি ভিতর থেকে তালাবদ্ধ থাকে। এলাকার কেউ যায় না ওই বাড়িতে।

এলাকাবাসী বলছেন, আঙুল ফুলে কলাগাছ হওয়ার পর সালেক গ্রামে এসে নতুন বাড়ি করেন। আগে একটি বিয়ে করলেও করলেও সে স্ত্রীর সঙ্গে বিচ্ছেদ হয়েছে। পরে বছর দুই আগে রানীশংকৈলে দ্বিতীয় বিয়ে করেন তিনি। তবে সালেকের মা-বাবার সঙ্গে বনিবনা না হওয়ায় সে স্ত্রীও চলে গেছেন।

মঙ্গলবার সালেকের বাবা আব্দুল কুদ্দুসের সঙ্গে কথা হয় এ প্রতিবেদকের। তিনি বলেন, ‘এসএসসি পরিক্ষার পর বকুনি খেয়ে ঢাকায় পাড়ি জমায় আবু সালেক। সংসারে একমাত্র ছেলে হওয়ায় পরিবারের কোনও শাসন মানত না সে।’

তিনি বলেন, ‘সালেক ঢাকায় গিয়ে আমাদের সঙ্গেও তেমন যোগাযোগ রাখতো না। ঢাকায় সে ভোটার আইডি কার্ড (এনআইডি) তৈরির সাথে যুক্ত ছিলো বলে জানতাম।’

আব্দুল কুদ্দুস ছেলের অপকর্মের শাস্তি দাবি করেছেন। যদিও তার দাবি, আত্মসাৎ করা টাকার বিষয়ে তারা কিছু জানতেন না। এমনকি কখনো তার হাতে কোনও টাকাও দিত না সালেক। পৈত্রিক সূত্রে পাওয়া আবাদী ২০ বিঘা জমি থেকে সালেকের বাবা সংসার পরিচালনা ও বাড়ি নির্মাণ করেছেন বলে দাবি করেন।

তবে ওউ গ্রামের আনসারুল ইসলাম, দেলোয়ার হোসেন ও আব্দুর রশিদ নামের কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গ্রামে তেমন কিছু না করলেও পঞ্চগড়ের বোদায় সম্পদ গড়েছেন সালেক। বোদায় সালেকের এক বোনের শ^শুর বাড়ি। সেখানে টেলিভিশনের শো’ রুম রয়েছে সালেকের। তাছাড়া বেশ কিছু জমিও কিনেছেন তিনি।

সরেজমিনে সালেকের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে, বাড়ির সাজসজ্জা আর ফটকে প্রচুর টাকা খরচা করা হয়েছে। আগে তাদের বাড়ি কাঁচা থাকলেও পরে সুরম্য বাড়ি নির্মাণ করা হয় দাবি গ্রামবাসীর।

এদিকে বিভিন্ন গণমাধ্যমে দুদকের ভুলে জাহালমের হাজতবাস করার নিন্দা জানিয়ে আবু সালেকের শাস্তি দাবি করেছেন সিঙ্গিয়া গ্রামবাসীও।

বালিয়া ইউপি চেয়ারম্যান নুর এ আলম ছিদ্দিকি মুক্তি ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘আবু সালেক একজন চিটার (প্রতারক) প্রকৃতির ছেলে। তার বিরুদ্ধে এলাকায়ও ছোট বড় অপরাধের নালিশ আছে।’

সালেকের বিরুদ্ধে জালিয়াতি মামলার সত্যতা আছে বলে ধারনা করছেন এই ইউপি চেয়ারম্যান। তিনিও সালেকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।

ঢাকাটাইমস/০৫ফেব্রুয়ারি/ডিএম