স্বাস্থ্য বিভাগের সেই কর্মীদের চায় না কেউ

জাহাঙ্গীর আলম ভূঁইয়া ও লাভলু পাল চৌধুরী
 | প্রকাশিত : ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ০৮:১৫

‘দুর্নীতির শক্তিশালী বলয়’ তৈরি করা স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা না নিয়ে নতুন কর্মস্থল বেছে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

এই ২৩ কর্মকর্তা-কর্মচারী যেসব এলাকায় বদলি হয়েছেন, সেসব এলাকার সাধারণ জনগণ থেকে শুরু করে নাগরিক সমাজের সদস্যরা বলছেন, এরা নতুন কর্মস্থলে গিয়ে আবার দুর্নীতির বলয় তৈরি করবেন না, তার নিশ্চয়তা কোথায়।

দুর্নীতি দমন কমিশনের নির্দেশনার পর স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে যে ২৩ জন কর্মীর বদলির আদেশ এসেছে তাদের সিংহভাগ নতুন কর্মস্থলে যোগ দেননি। তবে নেতিবাচক ভাবমূর্তির কারণে তারা যেসব এলাকায় যোগ দিতে যাচ্ছেন সেসব এলাকার জনগণ বা স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মীরা নাখোশ।

সম্প্রতি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী আবজাল হোসেনের বিস্ময়কর সম্পদের তথ্য পায় দুদক। পরে সংস্থাটির অনুসন্ধানে স্বাস্থ্য বিভাগের আরও ২৩ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিষয়েও নানা তথ্য আসে। আর ওই কর্মকর্তা-কর্মচারীরা দীর্ঘদিন একই কর্মস্থলে থেকে ‘দুর্নীতির শক্তিশালী বলয়’ তৈরি করেছেন উল্লেখ করে গত ২৩ জানুয়ারি তাদের ‘জরুরি ভিত্তিতে’ বদলির পাশাপাশি বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করে দুদক।

গত ৩১ জানুয়ারি স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের যুগ্ম সচিব (পার-২) এ কে এম ফজলুল হকের সই করা দুটি আদেশে এই ২৩ জনকে বদলি করা হয়। রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি, সুনামগঞ্জ, বরিশাল, সিরাজগঞ্জ, রংপুর, ভোলা, মানিকগঞ্জ, ফরিদপুর, জামালপুর, নেত্রকোনা ও নওগাঁ জেলার বিভিন্ন হাসপাতালে বদলির আদেশ এসেছে।

এদের মধ্যে তিনজনকে বদলি করা হয়েছে সুনামগঞ্জে। জেলার সদর, তাহিরপুর ও বিশ্বম্ভরপুর উপজেলায় নিয়োগ পেয়েছেন এরা।

এ নিয়ে স্থানীয় নাগরিকরা অসন্তুষ্ট। এই কর্মকর্তা-কর্মচারীদের স্থানীয়রা দুর্নীতিবাজ বলেই মনে করছেন। নাগরিক সমাজ বলছে, যেহেতু এখন এই কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থার নির্দেশ এসেছে, তাই তাদের মাঠ পর্যায়ে নিয়োগ দেওয়া উচিত হবে না।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালকের কার্যালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলমকে সুনামগঞ্জ সিভিল সার্জন কার্যালয়ে, চট্টগ্রাম স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালকের কার্যালয়ের প্রধান সহকারী ফয়জুর রহমানকে বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কার্যালয়ের উচ্চমান সহকারী তৈয়বুর রহমানকে তাহিরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বদলির আদেশ দেওয়া হয়েছে।

সুনামগঞ্জে চিকিৎসকদের সংগঠন মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন সুনামগঞ্জের নেতারাও এ ঘটনাকে সুনামগঞ্জ স্বাস্থ্য বিভাগের জন্য খারাপ খবর হিসেবে দেখছেন।

সুনামগঞ্জ বিএমএর সাংগঠনিক সম্পাদক সৈকত দাস বলেন, ‘চিহ্নিত দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের সুনামগঞ্জে বদলি করা সুনামগঞ্জবাসীর জন্য একটি দুঃসংবাদ।’

সুনামগঞ্জের দুর্নীতিবিরোধী নেতা মালেক হুসেন পীর বলেন, ‘এই দুর্নীতিবাজ কর্মীরা স্বাস্থ্য বিভাগের স্থানীয় দুর্নীতিবাজদের সঙ্গে নিয়ে সিন্ডিকেট গড়ে তুলতে পারে। সুনামগঞ্জে কোনো পরীক্ষিত দুর্নীতিবাজের বদলির স্থান হতে পারে না। ওদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।’

তাহিরপুরের ব্যবসায়ী নাজমুল হুদা সংগ্রাম বলেন, ‘আলোচিত দুর্নীতিবাজ কর্মচারীকে তাহিরপুর থেকে অন্যত্র বদলি করা হোক। সেই সঙ্গে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় শাস্তির ব্যবস্থা করা হোক। এখন বদলি করলে কী হবে?’

তাহিরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ইকবাল হোসেন ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘শুনেছি ২৩ জনের একজনকে তাহিরপুর বদলি করা হয়েছে। তবে এখনো কোনো কাগজপত্র আমি পাইনি।’

তাহিরপুর উপজেলা চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান কামরুল বলেন, ‘স্বাস্থ্য বিভাগের ২৩ দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে একজনকে তাহিরপুর বদলি করার আদেশের পরপরই স্থানীয় সুধীজন, স্বাস্থ্য বিভাগের সংশ্লিষ্ট লোকজন, বিভিন্ন রাজনৈতিক ও পেশাজীবী দলের সচেতন লোকজন ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। আমরা তাহিরপুরবাসী চাই এই দুর্নীতিবাজ কর্মচারীকে স্বাস্থ্য বিভাগ অন্যত্র বদলি করবে।’

সুনামগঞ্জ সিভিল সার্জন আশুতোষ দাস বলেন, ‘বদলির খবর শুনেছি। তবে এখনো কোনো কাগজপত্র পাইনি আমরা।’

নেত্রকোনাতেও একই চিত্র

এই ২৩ কর্মীর মধ্যে দুজন বদলি হয়েছেন নেত্রকোনায়। কিন্তু এই জেলার বাসিন্দারাও এই নিয়োগকে মেনে নিতে পারছেন না।

এই দুজন হলেন চট্টগ্রামের স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালকের (স্বাস্থ্য) কার্যালয়ের প্রধান সহকারী মাহফুজুল হক ও কুড়িগ্রামের চিলমারী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কম্পিউটার অপারেটর নেছার আহমেদ চৌধুরী।

মাহফুজুল হকের নতুন কর্মস্থল নেত্রকোনা সিভিল সার্জন কার্যালয় আর নেছারের বারহাট্টা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স।

নেত্রকোনা উন্নয়নে নাগরিক আন্দোলনের সভাপতি খানে আলম খান ঢাকা টাইমসকে বলেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এসব চিহ্নিত দুর্নীতিবাজদের নেত্রকোনার মানুষ চায় না। এরা নেত্রকোনাকে কলুষিত করবে। এদের আপাতত বরখাস্ত করে রাখা হোক। অভিযোগের তদন্তে নির্দোষ প্রমাণ হলে যেখানে খুশি বদলি করা হোক।’

নেত্রকোনা আইনজীবী সমিতির সভাপতি সিতাংশু বিকাশ আচার্য বলেন, ‘চিহ্নিত এই দুর্নীবাজদের নেত্রকোনায় বদলি করা চলবে না। আমরা নেত্রকোনার মানুষ সরকারি দপ্তরে দুর্নীতিবাজদের চাই না।’

নেত্রকোনা সুশাসনের জন্য নাগরিক- সুজন সভাপতি শ্যামলেন্দু পাল বলেন, ‘দুদক যাদের দুর্নীতিবাজ ও স্বেচ্ছাচারী হিসেবে চিহ্নিত করেছে তাদের নেত্রকোনায় দেওয়া যাবে না।’

সিভিল সার্জন তাজুল ইসলাম বলেন, ‘মাহফুজুল হক ও নেছার আহমেদ চৌধুরী এখনো কর্মস্থলে যোগ দেননি।

‘বদলি’ কোনো শাস্তি নয় মন্তব্য করে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সাবেক চেয়ারম্যান গোলাম রহমান ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘অপরাধের ভিত্তিতে দুর্নীতিবাজদের শাস্তি হওয়া উচিত। তদন্তে দুর্নীতির প্রমাণ পেলে দুদকেরই আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া উচিত ছিল।’

‘তবে অনেক সময় তদন্ত পর্যায়ে একজনকে তার কর্মস্থল থেকে দূরে রাখার প্রয়োজন দেখা দেয়। তদন্তের স্বার্থে যদি অপরাধীকে তার পদে বা কর্মস্থলে রাখা সঠিক মনে না হয়, সেক্ষেত্রে বদলি হতে পারে। সেক্ষেত্রে বদলির সুপারিশ যথার্থ।’

সংবাদটি শেয়ার করুন

জাতীয় বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

জাতীয় এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :