সীমান্ত হত্যা নিয়ে নতুন উদ্বেগ

নজরুল ইসলাম
 | প্রকাশিত : ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ০৮:২১
ফাইল ছবি

গত চার বছর ধরেই বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে হত্যা ক্রমান্বয়ে কমে আসলেও চলতি বছরের জানুয়ারিতে বেশ কিছু প্রাণহানি নিয়ে নতুন করে তৈরি হয়েছে উদ্বেগ।

গণমাধ্যমে আসা খবর অনুযায়ী সদ্য সমাপ্ত মাসে সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে প্রাণ হারিয়েছেন ছয়জন বাংলাদেশি। এদের মধ্যে ঠাকুরগাঁও সীমান্তে চারজন, নীলফামারী ও রাজশাহীতে একজন করে প্রাণ হারায়। এরপর ২ ফেব্রুয়ারি শনিবার লালমনিরহাট জেলার পাটগ্রাম উপজেলার বাউরা সীমান্তে গুলিতে আরও একজনের মৃত্যু হয়।

এর আগপর্যন্ত পরিসংখ্যানটি ক্রমান্বয়ে স্বস্তির দিকেই যাচ্ছিল। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকার ক্ষমতায় আসার পর বাংলাদেশ এবং ভারতের মধ্যে বারবার বৈঠক হয়েছে। আর এই হত্যা শূন্যে নামাতে একাধিকবার ঘোষণা দিয়েছে ভারত।

পরিসংখ্যান বলছে, ঘোষণা অনুযায়ী সীমান্ত হত্যা শূন্যে না নামলেও ক্রমান্বয়ে কমে এসেছে। আর সদ্য সমাপ্ত বছরে নিহতের সংখ্যা সবচেয়ে কম গত দুই দশকের মধ্যে।

বিজিবির তথ্য অনুযায়ী ২০১৮ সালের প্রথম আট মাসে সীমান্তে নিহত হয়েছে একজন বাংলাদেশি। তবে বছর শেষে হিসাবটি এখনো চূড়ান্ত হয়নি।

তবে আইন ও সালিশকেন্দ্রের (আসক) তথ্য বলছে, গত বছরে সীমান্তে সব মিলিয়ে ১২ জন প্রাণ হারিয়েছেন। এদের মধ্যে সাতজনকে গুলি করে এবং পাঁচজনকে নির্যাতন চালিয়ে হত্যা করা হয়। অবশ্য নিহত অন্তত পাঁচজনের বেশি ভারতীয় বলে পরে নিশ্চিত হওয়া গেছে। তাৎক্ষণিকভাবে তাদের বাংলাদেশি বলে ধারণা করা হয়েছিল। তবে পরে জানা যায়, তারা আসলে ভারতীয়।

বিজিবির পরিসংখ্যান বলছে, ২০১৫ সাল থেকেই সীমান্ত হত্যা ক্রমান্বয়ে কমতির দিকে। ২০১৫ সালে ৪৫ জন, ২০১৬ সালে ৩১ জন এবং ২০১৭ সালে ২১ জন নিহত হয়।

এর আগে ২০০৯ সালে ৬৭ জন, ২০১০ সালে ৬০ জন, ২০১১ সালে ৩৯ জন, ২০১২ সালে ৩৪ জন, ২০১৩ সালে ২৮ জন এবং ২০১৪ সালে ৪০ জন প্রাণ হারায়।

এর মধ্যে হঠাৎ করে বিএসএফের গুলি এবং প্রাণহানি বেড়ে যাওয়ায় তীব্র সমালোচনাও তৈরি হয়েছে। জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হক ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘গত বছরের যা হয়েছে এ বছরের এক মাসে যেটা হয়েছে সেটা কাম্য নয়। তবে এই হত্যার পেছনে বিশেষ কোনো ঘটনা আছে বলে আমার মনে হয় না। এটা যেন আর না হয় সেজন্য বিএসএফ ও বিজিবিকে বসে এটার সমাধান করতে হবে। এ ছাড়াও দুই বন্ধুপ্রতীম দেশের কূটনৈতিকদের এ বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে যেন আর না হয়।’

নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল (অব.) এ কে মোহাম্মদ আলী শিকদার বলেন, ‘ দুই দেশের সম্পর্ক ও রাজনৈতিক সদিচ্ছা এখন সর্বোচ্চ পর্যায়ে আছে। তাছাড়া ভারত সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়নি এটা করতে, এটা ভারতের সৈনিকরা করেছে। তবে আর যেন না ঘটে সেটার জন্য দুই দেশ বসে আলোচনার মাধ্যমে এটার সমাধানে যেতে হবে।’

দুই দশকে প্রাণহানি এক হাজারের বেশি

পরিসংখ্যান বলছে, ২০০১ সাল থেকে গত তিনটি সরকারের আমলেই সীমান্তে প্রায় এক হাজার ১০০ বাংলাদেশি প্রাণ হারিয়েছে।

এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে। ওই সরকারের শাসনামলে পাঁচ বছরে এই সংখ্যাটি ছিল ৫৬৪। অর্থাৎ প্রতি বছর গড়ে ১১৩ জন করে বাংলাদেশি হত্যা হয়েছে।

এর মধ্যে ২০০১ সালে ৯৪ জন, ২০০২ সালে ১০৫ জন, ২০০৩ সালে ৪৩ জন, ২০০৪ সালে ৭১ জন, ২০০৫ সালে ১০৪ জন এবং ২০০৬ সালে ১৪৬ জন বাংলাদেশি নিহত হয়।

সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলের দুই বছরে নিহত হয় আরও ১৮২ জন বাংলাদেশি। এর মধ্যে ২০০৮ সালে ৬২ জন এবং ২০০৭ সালে ১২০ জন নিহত হয়। অর্থাৎ ওই আমলে প্রতি বছরে গড়ে প্রাণ হারিয়েছে ৯১ জন করে।

আর বর্তমান সরকারের আমলে ১০ বছরে এখন পর্যন্ত প্রাণহানির তথ্য মিলেছে ৪০০ জনের কিছু বেশি। অর্থাৎ বছরে ৪০ জন করে।

বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই কারণ গরু চোরাচালান

সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে যারা প্রাণ হারিয়েছেন তাদের সিংহভাগ গরু চোরাচালানে জড়িত বলে গণমাধ্যমের খবরে প্রকাশ পেয়েছে।

কাঁটাতারের বেড়া কেটে বা বেড়া ডিঙিয়ে পার হওয়ার সময় গুলি করে বিএসএফ। ভারত সরকার গরু চোরাচালান বন্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বললেও এই চোরাচালান বন্ধ হয়নি। আর বিজিবি এই বিষয়টিকে চিহিৃত করলেও গরু চোরাচালান বন্ধে কার্যকর কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করতে পারেনি।

বর্তমান সেনাপ্রধান আজিজ আহমেদ বিজিবির মহাপরিচালক থাকাকালে ২০১৬ সালের ৭ অক্টোবর এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, সীমান্ত হত্যার পেছনে ৯৫ শতাংশ ক্ষেত্রেই দায়ী গরু চোরাচালান।

ভারতে বিজেপি সরকার ক্ষমতায় আসার পর বাংলাদেশে গরু পাঠানো বন্ধের ঘোষণা দেয়। আর এর পর দেশে ব্যাপকহারে পশু পালন বেড়ে যায় বলে পরিসংখ্যান বলছে।

আর এরই মধ্যে গবাদি পশুতে বাংলাদেশ এখন স্বয়ংসম্পূর্ণ বলেই তথ্য মিলছে। এর মধ্যেও দাম কম বলে ভারত থেকে গরু নিয়ে আসার প্রবণতা একেবারে বন্ধ হচ্ছে না।

বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সীমান্ত প্রায় ২৫০০ মাইল লম্বা। এই সীমান্তের বাংলাদেশ অংশে খুলনা, রাজশাহী, রংপুর, সিলেট, চট্টগ্রাম আর ভারতের অংশে পশ্চিমবঙ্গ, আসাম মেঘালয়, ত্রিপুরা এবং মিজোরাম। তবে বেশির ভাগ সীমান্ত হত্যাই হয় দেশের উত্তর পশ্চিমাঞ্চলে।###

সংবাদটি শেয়ার করুন

জাতীয় বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :