শিগগিরই আসছে সোনালি ব্যাগ

প্রকাশ | ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ১২:৪৩

মহিউদ্দিন মাহী

শিগগিরই বাণিজ্যিকভাবে বাজারে আসছে পরিবেশবান্ধব পাটের সোনালি ব্যাগ। এ লক্ষ্যে কাজ করছে বাংলাদেশ জুট মিলস করপোরেশন (বিজেএমসি)। সংস্থাটির প্রধান বৈজ্ঞানিক উপদেষ্টা ও বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের সাবেক মহাপরিচালক ড. মোবারক আহমদ খান বাণিজ্যিক রূপ দিতে নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছেন।

বিজেএমসি সূত্র জানায়, বর্তমানে একটি মেশিন দিয়ে পাটের ব্যাগ তৈরির পাইলট প্রকল্পের কাজ চলছে। মেশিনটির মাধ্যমে প্রতিদিন দুই হাজার পিস ব্যাগ উৎপাদিত হচ্ছে। এতে যে ব্যয় হচ্ছে, গড়ে একটি ব্যাগের দাম পড়ছে ৬-৭ টাকা।

পাট ও বস্ত্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, পাটের ব্যাগের খরচ কমাতে এই পাইলট প্রকল্পে আরেকটি উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন মেশিন বসানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। আগামী দুই-তিন মাসের মধ্যে দেশি যন্ত্রপাতি দিয়ে প্রায় দুই কোটি টাকা ব্যয়ে মেশিনটি তৈরি হবে। এটি দিয়ে প্রতিদিন এক লাখ পিস ব্যাগ উৎপাদন করা যাবে। তখন দেখা হবে, ব্যাগপ্রতি দাম কত পড়ে। এরপরই চূড়ান্তভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে, কবে নাগাদ বাণিজ্যিকভাবে পাটের ব্যাগ বাজারে আসবে।

বিজেএমসি সূত্রে জানা গেছে, গত বছরই এই ব্যাগ বাজারে আসার লক্ষ্যমাত্রা ছিল। কিন্তু এই প্রকল্পের প্রধান বিজ্ঞানী ড. মোবারক আহমদ খান অসুস্থ থাকায় বিষয়টি পিছিয়ে যায়। তিনি প্রায় ছয় মাস অসুস্থ ছিলেন। সিঙ্গাপুরে তার চিকিৎসা হয়।

তিনি সুস্থ হয়ে ফের এই প্রকল্পের হাল ধরেছেন। নতুন বস্ত্র ও পাটমন্ত্রীও ঘোষণা দিয়েছেন যে, খুব শিগগিরই বাণিজ্যিকভাবে পাটের ব্যাগ বাজারজাত করা হবে।

গবেষণায় দেখা গেছে, পরিবেশ দূষণের পাশাপাশি বাংলাদেশে জলাবদ্ধতা তৈরিরও একটি মূল কারণ পলিথিন ব্যাগের ব্যবহার। সামান্য বৃষ্টিতেই জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে। আশির দশক থেকে পলিথিন ব্যাগের ব্যবহার শুরু। এর অতি ব্যবহারে ১৯৯৮ সালের বন্যায় রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন শহরে পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা বিপর্যন্ত হয়ে পড়ে।

সূত্র জানায়, বাজারে বিকল্প না থাকায় আইন করে পলিথিন নিষিদ্ধ হলেও রোধ করা যাচ্ছে না। ২০০২ সালের ওই আইনে পলিথিন ব্যাগ উৎপাদন, বাজারজাত ও বিক্রি নিষিদ্ধ করা হয়। ২০০৭ সালে ফের বাড়তে থাকে এর উৎপাদন।

বর্তমানে বাজার সয়লাব হয়ে আছে পলিথিনে। ব্যবহার শেষে অপচনশীল এসব পলিথিন ফেলা হচ্ছে নালা-নর্দমা, যত্রতত্র। নালা-নর্দমায় আটকে থাকায় এতে জলাবদ্ধতা ছাড়াও মারাত্মক পরিবেশ দূষণ ঘটছে, জনস্বাস্থ্যের জন্যও হুমকির সৃষ্টি হচ্ছে।

এটি প্রতিরোধে ক্ষতিকর পলিথিনের বিকল্প হিসেবে সোনালি আঁশ খ্যাত পাটের তৈরি ‘সোনালি ব্যাগ’ উৎপাদনের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এ ব্যাগ বাজারে এলেই পলিথিনের বিদায় ঘটবে বলেও আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

পক্ষান্তরে, সোনালি পাটের ব্যাগ টেকসই, হালকা ও দ্রুত পচনশীল। ব্যবহারের পর ফেলে দিলে মিশে যাবে মাটির সঙ্গে, পুড়িয়ে ফেললে ছাই-ভস্মে পরিণত হবে। এ তথ্য জানিয়ে প্রকল্পের প্রধান বিজ্ঞানী মোবারক আহমদ খান ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘এই ব্যাগ দেখতে অবিকল বাজারে প্রচলিত পলিথিনের মতোই। ফলে পলিথিনের প্রকৃত বিকল্পই হবে এটি।’

ড. মোবারক আহমদ খান আরও বলেন, ‘পাটের ব্যাগ তৈরিতে আমাদের অগ্রগতি সন্তোষজনক। নতুন মেশিন নিজেরাই তৈরি করছি। এটি খুব শিগগিরই তৈরি হয়ে গেলে আমাদের গন্তব্যের খুব কাছাকাছি চলে যাব।’

‘নতুন মেশিনটির মাধ্যমে প্রতিদিন এক লাখ পিস পাটের ব্যাগ উৎপাদন করতে পারব। আমাদের ১০ টন তৈরির পরিকল্পনা হাতে আছে।’

ড. মোবারক আহমদ খান বলেন, ‘শিগগিরই বাণিজ্যিকভিত্তিতে সোনালি ব্যাগ উৎপাদন শুরু হবে। সরকারিভাবে উৎপাদনের পাশাপাশি বেসরকারি উদ্যোক্তাদেরও উৎসাহিত করা হবে। বিশ্ব এখন পলিথিনের বিকল্প খুঁজছে। এক সময় দেশের চাহিদা পূরণ করে বিদেশেও রপ্তানি হবে সোনালি ব্যাগ।’

‘সারাবিশ্বে ৫০০ বিলিয়ন ব্যাগের চাহিদা রয়েছে। বিশ্বে সোনালি ব্যাগের একমাত্র জোগানদাতা হবে বাংলাদেশ। আমাদের লক্ষ্য, বিশ্ববাজারে এই ব্যাগের চাহিদা পূরণ করা।’

ড. মোবারক আরও বলেন, পচনশীল ও পরিবেশবান্ধব পলিব্যাগ তৈরির উদ্দেশ্যে পাট থেকে সেলুলোজ আহরণ করা হয়। ওই সেলুলোজকে প্রক্রিয়াজাত করে অন্যান্য পরিবেশবান্ধব দ্রব্যাদির মাধ্যমে কম্পোজিট করে এই ব্যাগ তৈরি হয়। উৎপাদিত ব্যাগে ৫০ শতাংশের বেশি সেলুলোজ বিদ্যমান। এতে কোনো অপচনশীল দ্রব্য ব্যবহার হয় না বলে এটি দুই থেকে তিন মাসের মধ্যেই সম্পূর্ণ মাটির সঙ্গে মিশে যায়।