বইমেলায় নজর কাড়ছে সাদামাটা স্টলটি

সায়রা সামসিয়া
 | প্রকাশিত : ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ১৩:৪৫

বাংলা একাডেমি চত্ত্বরের ভাষাশহীদদের ভাস্কর্যের ঠিক পেছনেই সাদামাটা অতি সাধারণ একটি স্টল। এবারের বইমেলায় রঙিন নকশার স্টলের ভিড়ে হারিয়ে যায়নি এই স্টলটি। বরং ব্যতিক্রমী হওয়ায় নজর কেড়েছে মেলায় আসা দর্শনার্থীদের। সাজসজ্জাবিহীন শুধু মাত্র একটি ব্যানারে গড়া ২৩ নম্বর স্টলটি কবি দিলদার হোসেনের।

দিলদার হোসেন ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘বই বাণিজ্য আমার ভাবনার মধ্যেই কখনোই ছিল না। আমি বিজ্ঞাপন ভিত্তিক প্রচারণায় কখনো যাইনি। আমি সাদামাটা ও নিরিবিলি থাকতে পছন্দ করি। আমার স্টলেও সেই ধারাটা প্রতিফলিত হয়েছে। আমি কোনো স্পন্সরও নেই না। আমার নিজস্ব প্রকাশনী ‘ভাষা প্রকাশ বাংলাদেশ’ থেকে আমার বইগুলো বের হয়।’

১৯৮৪ সাল থেকে বই মেলায় অংশ নিচ্ছেন দিলদার হোসেন। এ পর্যন্ত শতাধিক বই প্রকাশিত হয়েছে তার। এবারের বইমেলায় এসেছে তার নতুন দুটি কাব্যগ্রন্থ- ‘দিলদার হোসেনের কবিতা’ ও ‘খোড়া সমাজের পোড়া মানুষ’। তার স্টলেই বই দুইটি পাওয়া যাচ্ছে।

বহুমাত্রিক গুণের এই মানুষটি শিল্প, সাহিত্য, চলচ্চিত্র, সাংবাদিকতা ও কবিতার অন্বেষণে প্রাচ্যের জাপান থেকে প্রতীচ্যের ফ্রান্স পর্যন্ত চষে বেড়িয়েছেন। সমাজ বিনির্মাণের কঠিন পাঠ নিতে ৪০ বছর ধরে সাহিত্যের সবগুলো বিভাগে কাজ করছেন তিনি। দেশ-বিদেশের নানা বিষয়ে প্রায় ১২০ টি মৌলিক বই প্রকাশ এবং ২৬টি স্বল্পদৈর্ঘ্য, মুক্তদৈর্ঘ্য, প্রামাণ্যচিত্র, অ্যানিমেশন, নিরীক্ষাধর্মী ও ২টি পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছেন তিনি। এছাড়াও ১৫টি একক আলোকচিত্র, ২টি একক চিত্রকলা, ৪টি একক চলচ্চিত্র প্রদর্শনী হয়েছে দেশ- বিদেশে। ১৯৮৬ সালে জার্মানের ওভারহাউজেন আন্তর্জাতিক স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র উৎসবে তিনি তরুণ চলচ্চিত্র নির্মাতার জুরি পুরস্কারসহ সম্মানিত হন।

অর্থবিত্ত, বৈভব, ক্ষমতা, দাসত্বের বন্দনার পুরস্কারে বিশ্বাস করেন না এই কবি। সৃষ্টিশীল নিজ কৃতি ও কর্মে মহাকালের বিচারে নিজেকে সঁপে দিয়েছেন তিনি।

অতি সাধারণ এই বুকস্টলে পাঠকদের উপস্থিতি কেমন সেই সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘যেখানে মধু আছে সেখানে মৌমাছি আসবেই। লেখনি শক্তিশালী হলে পাঠকদের আকৃষ্ট করা নিয়ে ভাবতে হয় না। চাকচিক্যবহুল বিজ্ঞাপনভিত্তিক বহু লেখকদের বইমেলায় হারিয়ে যেতে দেখেছি।’

`শিল্প-সাহিত্যে দুই ধারা থাকে- পারফর্মিং আর্ট ও ক্রিয়েটিভ আর্ট। আমি প্রথমে পারফর্মিং আর্ট দিয়েই শুরু করেছিলাম। কিন্তু দেখলাম সেটার গ্রহণযোগ্যতা সাময়িক। আজকে মরে গেলে কালকে ভুলে যাবে মানুষ। কিন্তু ক্রিয়েটিভ আর্টে আসতে হলে অনেক দীর্ঘপথ পাড়ি দিতে হয়। তেমনি সেই শিল্পীকেও মানুষ মনে রাখে দীর্ঘদিন। আমি বর্তমানে পেইন্টিংস নিয়ে কাজ করছি।’

দিলদার হোসেনের সৃষ্টিগুলোতে বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন, ৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান এবং একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ চেতনার প্রতিফলন রয়েছে। তাছাড়া ভ্রমণকাহিনী, গবেষণা ও জীবনীমূলক বেশ কিছু আলোচিত বই রয়েছে তার। শোষণহীন সমাজ ব্যবস্থায় অসাম্প্রদায়িক এবং দুর্নীতিমুক্ত সুন্দর একটি বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেন তিনি।

কবির ভাষ্য, ‘আমি বরাবরই তথাকথিত জনপ্রিয় ধারার বাইরে থেকেছি। আমার ব্যক্তিগত একটা ইমেজ আছে। আমি সব সময় একটু ব্যতিক্রমী পথকে বেছে নেই। অতিরঞ্জন, বিজ্ঞাপনসর্বস্ব, সস্তা ব্যবসাকে আমি এড়িয়ে চলি। আর এজন্যই সফলতায় প্রথাবিরোধী লেখক হিসেবে দেশে-বিদেশে পাঠক সমাজের কাছে শক্ত অবস্থান ও গ্রহণযোগ্যতা আছে আমার। এই ধারাবাহিকতায় এগিয়ে চলেছি। সময় বলে দিবে কত দূর যেতে পারলাম।’

(ঢাকাটাইমস/৬ফেব্রুয়ারি/এজেড)

সংবাদটি শেয়ার করুন

ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতি বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :