সাংবাদিককে ‘আত্মহত্যা করতে বললেন’ সচিব

প্রকাশ | ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ১৪:৫৮ | আপডেট: ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ১৭:৩২

নিজস্ব প্রতিবেদক
রেল সচিবের সঙ্গে কথা বলছেন সময় টিভির প্রতিবেদক নাজমুস সালেহী, সময় টেভির সৌজন্যে

ঢাকা-কলকাতা রুটের মৈত্রী এক্সপ্রেস ট্রেনের যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের বিষয়ে অভিযোগ জানিয়ে রেল সচিবের অদ্ভুত আচরণের শিকার হলেন বেসরকারি চ্যানেল সময় টিভির প্রতিবেদক নাজমুস সালেহী। সচিব ওই সাংবাদিকের অভিযোগ আমলে না নিয়ে তাকে পরামর্শ দিয়েছেন ‘আত্মহত্যা করার’। বিষয়টি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন।

বুধবার এক প্রতিবেদনে সময় টিভি জানায়, ঢাকা-কোলকাতা মৈত্রী এক্সপ্রেস ট্রেনের যাত্রীরা প্রতিটি চেয়ার আসনের জন্য নিজেদের অজান্তেই বাড়তি দিচ্ছেন ৬৮ টাকা। আর টিকিটের গায়ে উল্লেখিত মূলভাড়ার হিসেব না দিয়ে, বাড়তি টাকাকেই দেখানো হচ্ছে আসল ভাড়া হিসেবে। এতে না বুঝেই প্রতারিত হচ্ছেন ভারত-বাংলাদেশে চলাচলকারী এ ট্রেনের যাত্রীরা।

অতিরিক্ত আদায় করা টাকা কোন খাতে নেওয়া হচ্ছে, তা টিকিটেও উল্লেখ নেই, আবার ওই টাকা কোথায় জমা হচ্ছে সে বিষয়েও জানাতে পারেননি রেল কর্মকর্তারা। কেবিন আর চেয়ার এই দুই ক্যাটাগরিতে ঢাকা-কলকাতা মৈত্রী এক্সপ্রেস ট্রেনের টিকিট বিক্রি করে কমলাপুর রেলস্টেশন। কেবিন প্রতি আসন ৩ হাজার ৪ শত টাকা আর চেয়ার প্রতি আসন ২ হাজার পাঁচশ টাকা।

চেয়ার আসনের টিকিটের গায়ে লেখা হিসেব থেকে দেখা যায়, ভাড়া ধরা হয়েছে ১ হাজার ৬৮০ টাকা, ভ্যাট বাবদ ২৫২ টাকা আর ভ্রমণ কর বাবদ নেওয়া হচ্ছে ৫০০ টাকা করে। উল্লেখিত এই তিন খাতের যোগফল ২ হাজার চারশ ৩২ টাকা হলেও টিকিটেই লেখা আছে ২৫০০ টাকা। বাড়তি ৬৮ টাকা খেয়াল না করেই গুনে যাচ্ছেন যাত্রীরা।

যাত্রীদের অভিযোগ, এই বাড়তি টাকা কেন নেওয়া হচ্ছে রেল কর্তৃপক্ষের কাছে জানতে চেয়েও তার কোনো সদুত্তর তারা পাচ্ছেন না। বাড়তি টাকা নেয়ার ব্যাপারে কাউন্টারের টিকিট বিক্রেতারা কিছুই বলতে পারছেন না।

কমলাপুর রেলস্টেশন টিকিট বুকিং সহকারী সাইফুল ইসলাম বলেন,  ‘এ বিষয়ে রেল ভবনে আলোচনা করলে ভাল হয়। বিষয়টা আসলে কী হইছে এটা ওনারা ভাল বলতে পারবে।’

রেলওয়ে সূত্র মতে, সপ্তাহে চারদিন ঢাকা-কোলকাতা যাত্রী বহন করে মৈত্রী এক্সপ্রেস। মৈত্রী ট্রেনে থাকে ৪৫৬ জন যাত্রী। যার মধ্যে কেবিনের জন্য বরাদ্দ ১৪৪টি আসন আর বাকি ৩১২ জনই চেয়ারের। সেই হিসেবে প্রতি মাসে চেয়ারের যাত্রী ৪ হাজার ৯৯২ জন। আর বছরে ৫৯ হাজার ৯০৪ জন। প্রতি আসনে ৬৮ টাকা বেশি হলে বছরে এর পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ৪২ লাখ টাকা।

বিপুল পরিমাণ এই টাকা কোন খাতে আদায় করা হচ্ছে কিংবা তা জমা হচ্ছে কোথায় জানতে চাওয়া হলে কোনো উত্তর দিতে পারেননি রেলের ট্রাফিক বিভাগের পরিচালক মাহবুবুর রহমান ও মার্কেটিং বিভাগের উপ-পরিচালক কালিকান্ত ঘোষ।

সবশেষে সময় টিভির প্রতিবেদক যোগাযোগ করেন রেলসচিব সচিব মোফাজ্জল হোসেনের সঙ্গে। এ বিষয়ে ওই প্রতিবেদকের বক্তব্য শুনেই রেগে ওঠেন তিনি।

সচিব বলেন, ‘এই বিষয়ে আপনার এত উৎসাহ কেন? যে লোকটা জানতে চাচ্ছে সে নিয়মিত কলকাতা যায়। সে জানতে চাইলে আমরা বলে দেব। কারণ এই জন্য আমাদের কাছে একটা ব্যাখ্যা আছে। তবে আপনাকে আমরা কেন ব্যাখ্যা দিবো। আপনার কি কোনো প্রয়োজন আছে! আপনি তো যাত্রীরা না।’

সচিব পরে ডেকে পাঠান রেলের অপারেশন বিভাগের উপ-পরিচালক মিয়া জাহানকে। তার কাছেও মেলেনি কোনো ব্যাখ্যা। কিন্তু পরের দিন মিয়া জাহান কৌশলে সময় টিভিকে এড়িয়ে যান।

আর এ বিষয়টি পুনরায় জানতে গেলে রেল সচিব ক্যামেরা ছাড়া তার কক্ষে ঢোকার অনুমতি দিয়ে এই প্রতিবেদকে আত্মহত্যার পরামর্শ দেন।

বলেন, ‘আপনি এখন আত্মহত্যা করেন। একটা স্টেটমেন্ট লিখে যান যে, রেলের লোকেরা আমার সাথে কথা বলতে চাচ্ছে না এ মর্মে ঘোষণা দিলাম যে তারা কথা না বলার কারণে আমি আত্মহত্যা করলাম।’

এদিকে বিষয়টি খতিয়ে দেখার আশ্বাস দিচ্ছেন রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন। বলেন, ‘এখানে যদি অনিয়ম থাকে অবশ্যই দূর করব আমরা। আর যদি দেখা যায় আমাদের নিয়ম মতো আছে, তাহলে আর কিছু করতে হবে না।’

রেলপথ মন্ত্রী আগামী দশ কার্যদিবসের মধ্যে এ ব্যাপারে দৃশ্যমান পদক্ষেপ নেবেন বলেও জানিয়েছেন।

ঢাকাটাইমস/০৬ফেব্রুয়ারি/ডিএম