আর্টিজানে জঙ্গি হামলার বর্ণনা দিলেন হাসনাতের স্ত্রী

প্রকাশ | ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ২০:০৮

আদালত প্রতিবেদক, ঢাকা টাইমস

রাজধানীর গুলশানের হোলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় হামলায় জঙ্গি হামলার ঘটনায় আসামি হিসেবে গ্রেপ্তার হন নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির সাবেক শিক্ষক হাসনাত রেজা করিম। পরে চার্জশিট থেকে তাকে বাদ দেওয়া হয়।

ওই ঘটনায় হাসনাত রেজা করিমকে সাক্ষী করা না হলেও তার স্ত্রী শারমিনা পারভীনকে করা হয়। বুধবার ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালে তিনি হামলার বর্ণনা দিয়ে সাক্ষ্য দিলেন। বিচারক মো. মজিবুর রহমান শারমিনা পারভীনসহ তিনজনের সাক্ষ্যগ্রহণ করে আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি পরবর্তী দিন ধার্য করেন।  

সাক্ষ্য দেওয়া অপর দুজন হলেন- ওই ঘটনায় নিহত পুলিশের এসি রবিউল ইসলামের ভাই মো. শামসুজ্জামান ও তার খালাতো ভাই মোল্লা মো. আনোয়ারুল আমিন।


সাক্ষী শারমিনা পারভীন বলেন, ‘২০১৬ সালের ১ জুলাই রাত আটটার দিকে স্বামী, ছেলে ও মেয়েকে নিয়ে হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় যাই। মেয়ের জন্মদিন উপলক্ষে সেখানে আমরা ডিনার করতে যাই। হলি আর্টিজানের হলরুমের শেষের টেবিলে বসে অপেক্ষা করতে থাকি। মেন্যু দেখে খাবারের অর্ডার দেই। এর ৩/৪ মিনিট পর ৩/৪ জন অস্ত্রসহ কাঁধে ব্যাগ নিয়ে প্রবেশ করেন। তারা গুলি করতে থাকেন।’

‘এরপর আমাদের টেবিলের কাছে এসে জিজ্ঞাসা করেন- আমরা মুসলিম কি না? আমরা মুসলমান জানালে তারা বলেন, আপনারা মুসলমান আপনাদের কোন ক্ষতি করবো না। আপনারা মাথা নিচু করে টেবিলে বসে থাকুন।’

তিনি বলেন, বেকারিতে গ্লাসঘেরা রুমে আনুমানিক ৮-১০ জন বা তার বেশি বিদেশি বসা ছিলেন। তাদের ওপর জঙ্গিরা গুলি শুরু করেন। তারা আমাদের বলেন, আপনাদের ছেলে-মেয়েদের চোখ-কান বন্ধ করে রাখেন যেন তারা কোনো কিছু দেখতে বা শুনতে না পায়। আমি তাদের চোখ-মুখ বন্ধ করে রাখি।’

‘কিছুক্ষণ পর তারা একটা ছেলে, দুইটা কম বয়সী মেয়েসহ চারজনকে আমাদের টেবিলের কাছে নিয়ে আসেন। আমাদের সারারাত মাথা নিচু করে টেবিলে বসিয়ে রাখেন। বারান্দার একটা বাদে হলরুমের সব লাইট বন্ধ করে দেন।’
শারমিনা পারভীন বলেন, ‘রাত দেড়টার দিকে একজন ওয়েটার এবং একজন বিদেশিকে বের করে নিয়ে আসেন। ওয়েটারকে সরিয়ে বিদেশিকে সরাসরি গুলি করেন। আর আমাদের আশেপাশে পড়ে থাকা মরদেহগুলো ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপান। রমজান মাস, যখন সেহরির সময় হয়, তখন তারা আমাদের সেহরির ব্যবস্থা করেন। পরিস্থিতি খাবার উপযোগী ছিল না। তারা বারবার আমাদের জিজ্ঞাসা করেন, খাচ্ছি না কেন? তারা ধমক দেন, তাই এক কামড় খাবার খেয়েছিলাম। রাতে অস্ত্রের মুখে বসিয়ে রাখেন।’

‘ভোরে আমার স্বামী এবং আরেকটি ছেলে তাহমিদকে ছাদে নিয়ে যান। এরপর তাদের আবার টেবিলে এসে বসান। আমার স্বামীকে চাবি দিয়ে বাইরের গেটের তালা খুলে আসতে বলেন। তালা খুলে আসার পর বলেন, আপনারা এক একজন করে বের হয়ে যান। বের হয়ে আসার আগে মোবাইলসহ যা যা নিয়েছিলেন, তা ফেরত দেন।’
শারমিনা পারভীন বলেন, ‘সকাল সাড়ে সাতটার দিকে প্রথমে আমরা আটজন বের হয়ে আসি। এরপর আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আমাদের নিরাপদ হেফাজতে নিয়ে যায়। এরপর আমাদের ডিবি অফিসে নিয়ে যাওয়া হয়। জিজ্ঞাসাবাদের পর আমাদের ছেড়ে দেওয়া হয়।’
এরপর নিহত এসি রবিউল ইসলামের ভাই মো. শামসুজ্জামান বলেন, ‘ঘটনার দিন রাত সাড়ে ১০টার দিকে জানতে পারি যে, আমার ভাই হলি আর্টিজান বেকারিতে দুষ্কৃতকারীদের হামলায় আমার ভাই আহত হয়েছেন। জানার পর সাভার থেকে ইউনাইটেড হাসপাতালে যাই। সেখানে এসে ভাইকে মৃত অবস্থায় দেখতে পাই। বুকের বিভিন্ন জায়গায় আঘাতের চিহ্ন দেখতে পাই। পরে জানতে পারি, এটা গুলি ও স্পিøন্টারের আঘাত।’

সবশেষে রবিউল ইসলামের খালাতো ভাই মোল্লা মো. আনোয়ারুল আমিন সাক্ষ্য দেন।
এ নিয়ে মামলাটিতে ২০ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হলো।

আসামিরা হলেন- হামলার মূল সমন্বয়ক বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত কানাডার নাগরিক তামিম চৌধুরীর সহযোগী আসলাম হোসেন ওরফে রাশেদ ওরফে আবু জাররা ওরফে র‌্যাশ, ঘটনায় অস্ত্র ও বিস্ফোরক সরবরাহকারী নব্য জেএমবি নেতা হাদিসুর রহমান সাগর, নব্য জেএমবির অস্ত্র ও বিস্ফোরক শাখার প্রধান মিজানুর রহমান ওরফে বড় মিজান, জঙ্গি রাকিবুল হাসান রিগ্যান, জাহাঙ্গীর আলম ওরফে রাজীব ওরফে রাজীব গান্ধী, হামলার অন্যতম পরিকল্পনাকারী আব্দুস সবুর খান (হাসান) ওরফে সোহেল মাহফুজ, শরিফুল ইসলাম ও মামুনুর রশিদ।

আসামিদের মধ্যে প্রথম ছয়জন কারাগারে আছেন। তাদেরকে কারাগার থেকে আদালতে হাজির করা হয়। মামলার অপর দুই আসামি পলাতক রয়েছেন। তবে তারা অন্য মামলায় গ্রেপ্তার হলেও এখনো হলি আর্টিজান রেস্টুরেন্টে জঙ্গি হামলা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়নি।
 
(ঢাকাটাইমস/০৬ফেব্রুয়ারি/ জেডআর/এআর)