মিয়ানমারকে নিবৃত্ত করুন

প্রকাশ | ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ২০:৩৩

আরিফুর রহমান

বাংলাদেশে আশ্রিত ১০-১২ লাখ রোহিঙ্গাকে দেশে ফেরত পাঠানো ও তাদের অন্তর্বর্তী অবস্থান নিয়ে যখন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ইতিবাচক দেনদরবার হচ্ছে, তখন নতুন করে সীমান্তে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের চেষ্টা দেখা গেছে সম্প্রতি। এর সঙ্গে এখন যোগ হচ্ছে মিয়ানমারের রাখাইন ও খুমি জনগোষ্ঠী।

রাখাইন ও চিন প্রদেশে সম্প্রতি বৌদ্ধ স্বাধীনতাকামীদের হামলার পর সেখানে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর অভিযানের মুখে ঘরবাড়ি ছেড়ে পালাচ্ছে বিভিন্ন নৃগোষ্ঠীর লোকজন। তারা বাংলাদেশের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। বান্দরবানের রুমা উপজেলা দুর্গম চৈক্ষ্যং সীমান্তের শূন্যরেখার কাছাকাছি অবস্থান নিয়েছে ১২টি খুমি ও ২৩টি রাখাইন পরিবারের ১২৪ জন সদস্য। তারা যাতে ঢুকতে না পারে সেজন্য সীমান্তে সতর্কতা জারি করেছে বিজিবি।

সম্প্রতি ব্রাহ্মবাড়িয়ার কসবা সীমান্তে বাংলাদেশের দিকে একদল রোহিঙ্গাকে ঠেলে দিয়েছিল ভারতীয সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ। শূন্যরেখায় একইভাবে অবস্থান নিয়েছিল রোহিঙ্গা পরিবারগুলো। বিজিবির কড়া নজরদারির কারণে তারা ঢুকতে পারেনি, বিএসএফ তাদের ফিরিয়ে নিয়ে গেছে।

সীমান্তে বিজিবির এই ধরনের কড়া অবস্থান সার্বক্ষণিক বজায় রাখতে হবে। কেননা নির্যাতিত রোহিঙ্গাদের প্রতি বাংলাদেশের সহানুভূতির সুযোগে নিতে চাইছে বিভিন্ন পক্ষ, এটা অনেক দিন থেকেই অনুমেয়। এটা যেন কোনোভাবেই সম্ভব না হয় সে ব্যাপারে আমাদের সব সময় প্রস্তুত থাকতে হবে।

বিশ্বের অন্যতম জনবহুল আমাদের ছোট্ট দেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রায় ১২ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়ে মানবতার বিরল নজির রেখেছেন। বাংলাদেশ প্রশংসিত হচ্ছে বিশ্বের দরবারে। বিশ্বসম্প্রদায় বাংলাদেশের পাশে দাঁড়িয়েছে। এটা আমাদের জন্য ইতিবাচক।

কিন্তু আমাদের আর্থ-সমাজিক অবস্থান, নিরাপত্তা, শৃঙ্খলার জন্য আশ্রিত রোহিঙ্গারা হুমকি এ কথাও ভুলে গেলে চলবে না। মিয়ানমারের আচরণ দেখে মনে হয়, উন্নয়নের মহাসড়কে বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা বিঘœ করতেই যেন মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ রোহিঙ্গাদের চাপিয়ে দিতে চাইছে।

তারা রোহিঙ্গাদের নিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে একের পর এক প্রতারণা করে চলেছে। বিভিন্ন সময় রোহিঙ্গা ও বাংলাদেশ নিয়ে বিভ্রান্তিকর প্রচার চালিয়েছে। মিয়ানমারের সরকারি কমকর্তারা এমনকি রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে স্বাক্ষরিত চুক্তির ভুল ব্যাখ্যাও দিয়েছে কখনো। আমরা সন্দেহ করছি, মিয়ানমার রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে আন্তরিক নয়, বরং নানা অজুহাতে তারা দেশটির বিভিন্ন সংখ্যালঘু ও নৃগোষ্ঠীকে বাংলাদেশে আশ্রয় নিতে বাধ্য করবে।

আমাদের সরকার ও সীমান্তরক্ষী বাহিনীকে মিয়ানমার সীমান্ত নিয়ে অতন্দ্রপ্রহরীর ভ’মিকা পালন করতে হবে। প্রযোজনে সীমান্ত বন্ধ করে দিতে হবে। একই সঙ্গে বিশ্বসম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান, তারা যেন মিয়ানমারকে সংখ্যালঘু ও নৃগোষ্ঠী বিতাড়ন থেকে নিবৃত্ত করে। আর বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের দেশে ফিরিয়ে নিতে কার্যকর উদ্যোগ না নিলে দেশটি এ ধরনের মানবাধিকার লঙ্ঘন করতেই থাকবে।