‘অভয়াশ্রমেও’ কমছে বিরল মদনটাক

প্রকাশ | ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ০৮:৪৩

বদরুল ইসলাম বিপ্লব, ঠাকুরগাঁও

পুকুরপাড়ের বাঁশঝাড়ে বড় শিমুলগাছে ঘর বেঁধে ১৮ বছর ধরে বাস ও বংশবিস্তার করছে বেশ কিছু মদনটাক। ঠাকুরগাঁওয়ের হরিপুর উপজেলার সিংহারি গ্রামের গাছটিকে তাই বিরল প্রজাতির পাখিগুলোর ‘অভয়াশ্রম’ হিসেবে গড়ে তুলেছে গ্রামবাসী। তাদের মমতার বন্ধনে আবদ্ধ পাখিগুলো। খাবারের সন্ধানে এদের ছোটাছুটিতে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত মুখরিত ভারত সীমান্তঘেঁষা গ্রামটি। তবে নিরাপদ আশ্রয় ও পর্যাপ্ত খাবারের অভাবে দিনে দিনে কমছে দুর্লভ এই পাখিগুলো।

পশু-পাখি রক্ষা করে ফিরিয়ে আনা হোক সুষ্ঠু-নিরাপদ পরিবেশ। জীববৈচিত্র্য ও প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষায় পাখিগুলো ভূমিকা রাখবে। এদের বাঁচিয়ে রাখতে প্রশাসন-গ্রামবাসীর সহায়তা প্রত্যাশা করছেন পরিবেশবাদীরা।

সরেজমিনে দেখা গেছে, ১৮ বছরের মায়া-মমতার বন্ধনে আবদ্ধ পাখি ও গ্রামবাসী। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সেগুলোর কলরব আর নীড়ে ফিরে আসার মনোমুগ্ধকর স্বর্গীয় দৃশ্য দেখতে ক্লান্তি নেই কারও। মনদটাক পাখি দেখতে গ্রামে আসছেন অনেক দর্শনার্থীও। আর এই গ্রামের শিশু থেকে বৃদ্ধদের চোখে চোখে থাকছে পাখিগুলো। শিকারিদের প্রতিরোধ করছেন তারা।

আব্দুর রহিম, কবিরুল ইসলামসহ কয়েকজন গ্রামবাসী জানান, ২০০০ সালে ছয়টি মদনটাক পাখি আসে এই গ্রামে। সে বছর ঝড়-বৃষ্টিতে দুর্ভোগে কষ্ট পেয়ে কয়েকটি বাচ্চা নিয়ে চলে যায় পাখিগুলো। পরের বছর প্রজননের সময় আবার আসে ১০টি মদনটাক। সেবারও বাচ্চা ফুটিয়ে চারটি ছানা নিয়ে চলে যায়।

এবার এসেছে ছয় জোড়া পাখি। ডিম পেড়ে ছানা ফুটিয়েছে চারটি। সংসারে নতুন অতিথিদের পাহারায় সার্বক্ষণিক থাকছে দুটি মা পাখি। অন্যরা এদিক-সেদিক ঘুরে নিয়ে আসছে খাবার।

তারা জানান, ২০১৬ সালে এই গ্রামে সর্বোচ্চ আসে ৩০টি পাখি। সেবারও শিলাবৃষ্টিতে ক্ষতির মুখে পড়ে। এরপর থেকে কমছে  প্রকৃতি ও পরিবেশের বন্ধু এই পাখিগুলো।

হরিপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এম জে আরিফ বেগ বলেন, মদনটাক পাখিগুলোর বিচরণ ওই গ্রামের শোভা বাড়াচ্ছে। ক্ষেতÑখামারে ক্ষতিকর পোকা-মাকড় ও ইঁদুর খেয়ে উপকার করছে কৃষকের। তাই পাখিগুলোকে রক্ষা এবং এদের অভয়াশ্রম তৈরি করতে প্রশাসনের কর্মকর্তাদেরও প্রচেষ্টার কমতি নেই, নজরদারিতে রাখছেন তারাও।