বারবার সিদ্ধান্ত বদল ঐক্যফ্রন্টের

প্রকাশ | ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ০৮:৪৬

বোরহান উদ্দিন
ফাইল ছবি

বিএনপির নতুন জোট জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নানা সময়ে নানা সিদ্ধান্ত নিলেও পরে নিজেরাই তা থেকে সরে আসছে। এ নিয়ে সমর্থকদের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়াও আছে।

নির্বাচনে যাওয়ার শর্ত হিসেবে বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবি সংলাপে না তুলেই ভোটে আসার ঘোষণা দিয়েছে এই জোট।

৩০ ডিসেম্বরের ভোটে কারচুপির অভিযোগ তোলা জোট পরাজিত প্রার্থীদের দিয়ে প্রতিটি আসনে মামলার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করলেও সেই পথে আগায়নি।

এমনকি নতুন করে নির্বাচনের দাবিতে জনমত গড়ে তোলার চেষ্টার অংশ হিসেবে ডাক দেওয়া নাগরিক সংলাপের কর্মসূচি দিয়েও সেখান থেকে সরে আসে এই জোট।

গত ১৩ অক্টোবর ঐক্যফ্রন্ট গঠনের শুরু থেকে আরও একাধিক সিদ্ধান্ত নিয়েও হঠাৎ সেখান থেকে সরে আসতে দেখা গেছে।

এর জন্য অবশ্য সরকারকে দায়ী করছেন ঐক্যফ্রন্টের নেতারা। তারা বলছেন, সরকার চায় না ঐক্যফ্রন্ট স্বাভাবিক কর্মসূচি পালন করুক। অনেক কিছুতে সরকারের সহযোগিতাও মেলে না। তাই চাইলেও কিছু সিদ্ধান্তে অটল থাকা সম্ভব হয় না।

ঐক্যফ্রন্টের অন্যতম নেতা জাফরুল্লাহ চৌধুরী ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘আমাদের কাজকর্মে কিছুটা সমস্যা হচ্ছে, এটা অস্বীকার করব না। তবে এর জন্য সরকারের মনোভাবও দায়ী। কারণ তারা অনেক ছিনিমিনি খেলার চেষ্টা করে আমাদের নিয়ে। তারপরও আমি বলব, এটা হতাশার।’

নির্বাচনের পর গত ১৭ জানুয়ারি একাদশ সংসদ নির্বাচনের ফলাফল বাতিল করে পুনর্নির্বাচনের দাবিতে নাগরিক সংলাপ করার ঘোষণা দেওয়া হয় ঐক্যফ্রন্টের পক্ষ থেকে। একবার তারিখ পাল্টে ৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় নাগরিক সমাজ, পেশাজীবী ও রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ করার কথা ছিল।

কিন্তু ৩১ জানুয়ারি হঠাৎ করে এই কর্মসূচি স্থগিত করে বিএনপির নতুন মিত্র। পরে সিদ্ধান্ত অনুযায়ী গতকাল রাজধানীতে কালো ব্যাজ পরে প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করা হয়।

গত ৩ জানুয়ারি ঐক্যফ্রন্টের বৈঠক শেষে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানান, তাদের জোটের সব পরাজিত প্রার্থী নিজ নিজ আসনে নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালে মামলা করবেন।

এরই মধ্যে মামলার সময় পেরিয়ে গেছে। ঐক্যফ্রন্টের পরাজিত প্রার্থীদের মধ্যে আইনি পথে গেলেন কেবল ঢাকা-৬ আসনের সুব্রত চৌধুরী। অন্যরা কেন মামলা করলেন না এমন প্রশ্নে এই নেতা ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘প্রার্থীদের মধ্যে উৎসাহ দেখা যাচ্ছে না। দেশে বিচারহীনতার সংস্কৃতি চালু হয়েছে। এখানে ন্যায়বিচার পাওয়া যাবে না। তাই অনেকে মামলা করতে চান না।’

এ বিষয়ে জাফরুল্লাহ চৌধুরী ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘আমরা কাগজপত্র পাচ্ছি না। সরকার এখানে বাধা দিচ্ছে। কাগজপত্র না থাকলে মামলা কীভাবে করব?’

যদিও বিএনপির শরিক এলডিপির চেয়ারম্যান অলি আহমেদ অন্য কারণ বলছেন। তিনি বলেন, ‘মামলা করলে দ্রুত সরকারের পক্ষে রায় দেওয়া হবে। তখন সরকার আইনিভাবেও বৈধতা পেয়ে যাবে।’

ঐক্যফ্রন্ট গঠনের আগে থেকেই স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াত ইস্যুটি বেশ গুরুত্ব পেয়েছিল। জামায়াত থাকলে বিএনপির সঙ্গে ঐক্য হবে না এমন স্পষ্ট ঘোষণাও ছিল কামাল হোসেনের। তবে নিজের আপত্তি ভুলেই একজোট হন তিনি।

এদিকে ঐক্যফ্রন্টের নেতারা যখন ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচনে নামেন, তখন জামায়াত নেতারাও একই প্রতীকে ভোটে অংশ নেন, যা নিয়ে তুমুল সমালোচনার মুখে পড়তে হয় কামাল হোসেনদের। আর এই সিদ্ধান্ত যে পছন্দ হয়নি, সেটি ভোটের আগে বিদেশি একটি গণমাধ্যমকে সরাসরিই বলেছিলেন গণফোরামের নেতা। জানান, জামায়াত ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচন করবে জানলে তিনি ঐক্যফ্রন্ট করতেন না।

ভোটের পর গত ১৭ জানুয়ারি সংবাদ সম্মেলন করে কামাল হোসেন বিএনপিকে কার্যত জামায়াত ছাড়ার শর্ত জুড়ে দেন। বিএনপি এখনো এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত না নিলেও বিষয়টি নিয়ে তিনি আর উচ্চবাচ্য করছেন না।

জাফরুল্লাহ চৌধুরীর কাছে জানতে চাইলে এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘জামায়াত নিয়ে শুরু থেকে যে কথা ছিল, সেখানে কিছুটা সমস্যা তো রয়েছে, অস্বীকার করা যাবে না। তবে মূলত ঐক্য কিন্তু বিএনপির সঙ্গে হয়েছে। তারপরও যেসব বিষয় নিয়ে ঝামেলা হচ্ছে, আমার মনে হয় এগুলো অচিরেই ঠিক হয়ে যাবে।’

ঐক্যফ্রন্টের আরেকটি ঘোষণা নিয়ে এখনো রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনা আছে। সেটি হলো ৩০ ডিসেম্বরের ভোটে জয়ী ঐক্যফ্রন্টের কেউ সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নেবেন না।

তবে বিএনপির ছয়জন শপথ না নেওয়ার বিষয়ে অটল থাকলেও ধানের শীষ নিয়ে মৌলভীবাজার-২ আসন থেকে জয়ী সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমেদ এবং সিলেট-২ থেকে উদীয়মান সূর্য নিয়ে জয়ী মোকাব্বির খান শপথ নেবেন বলে জানিয়েছেন। এই দুজনই গণফোরামের নেতা এবং এ নিয়ে জোটের মধ্যে সন্দেহ-অবিশ্বাসও তৈরি হয়েছে। বিএনপির একাধিক জ্যেষ্ঠ নেতাই কামাল হোসেনকে নিয়ে উষ্মা প্রকাশ করেছেন।