যে ট্রেনে চলবে ঢাকাবাসী

প্রকাশ | ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ০৯:০৩ | আপডেট: ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ১৬:৪৬

রেজা করিম

শুভ্র স্নিগ্ধতায় জড়ানো সাদা রঙের জমিনে জাতীয় পতাকার লাল-সবুজের ছোঁয়া। সামনের উপরিভাগে সবুজ আর নিচে রক্তলাল। দরজায় লাল, তার ওপরে সামান্য সাদার জমিনে সবুজের বিস্তৃত রেখা। লাল-সবুজে রাঙানো একেকটি রেলগাড়ি শাঁ-শাঁ করে ঢাকার বুকে ছুটে চলছে মেট্রোরেলের পথ ধরে। অত্যাধুনিক সুযোগ-সুুবিধাসংবলিত এসব ট্রেনে লাল-সবুজের ছোঁয়া আর স্নিগ্ধতা নিয়ে ভ্রমণ করছেন ঢাকাবাসী।

এই দৃশ্য এখন সময়ের ব্যাপারমাত্র। রাজধানীতে দ্রুত বাস্তবায়নাধীন বহু প্রতীক্ষিত মেট্রোরেল প্রকল্পে মাঠের কাজের পাশাপাশি জাপানে শুরু হয়েছে রেলকোচ নির্র্মাণও।

মেট্রোরেল বাস্তবায়নকারী সংস্থা ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি তাদের ফেসবুক পেজে ট্রেনের কোচগুলোর ছবি প্রকাশ করেছে।

ছবি দিয়ে বলা হয়েছে, ‘মেট্রোরেল মক-আপ জাপানে পরিদর্শন এবং পর্যালোচনার জন্য প্রস্তুত।’

প্রকল্প-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, মেট্রোরেলের কোচের নকশায় ভেতর-বাইরের রং, আসন বিন্যাসের পরিকল্পনা এরই মধ্যে শেষ, তৈরি হয়েছে রেপ্লিকাও। জাপানের কাওয়াসাকি-মিটসুবিসি কনসোর্টিয়ামের তৈরি রেপ্লিকাটি পরিদর্শন ও পর্যালোচনা করে দেখা হবে। আগামী মার্চের মধ্যেই রেলকোচের নকশা চূড়ান্ত করে প্রতিষ্ঠানটিকে জানিয়ে দেওয়া হবে। এরপর তারা তৈরি শেষ করলে কোচগুলো বাক্সবন্দী করে পানিপথে দেশে এনে বসিয়ে দেওয়া হবে মেট্রোরেলের পথে।

উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত চলবে দেশের প্রথম মেট্রোরেল। আর উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত অংশে চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে কাজ শেষ করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। সেভাবেই আগাচ্ছে কাজ। বাকি অংশ ২০২০ সালের ডিসেম্বরে শেষ হবে বলে জানিয়েছেন প্রকল্প কর্মকর্তারা।

এই ট্রেন চালু হলে ঘণ্টায় ৬০ হাজার যাত্রী উত্তরা থেকে মতিঝিল রুটে চলতে পারবেন। আর এতে রাজধানীর দুঃসহ যানজট পরিস্থিতি কিছুটা হলেও লাঘব হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

এই ট্রেন উত্তরা থেকে মিরপুর ১০ হয়ে আগারগাঁও, ফার্মগেট, শাহবাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাতীয় প্রেসক্লাব হয়ে যাবে মতিঝিলে।

প্রকল্পের ব্যবস্থাপক খান মোহাম্মদ মিজানুল ইসলাম বলেন, ‘স্টেইনলেস স্টিলের তৈরি কোচগুলো হবে শীতাতপনিয়ন্ত্রিত। ছয়টি বগির একেকটি ট্রেনে যাত্রী ধরবে এক হাজার ৭৩৮ জন। বগির উভয় পাশে দুটি করে চারটি দরজা থাকবে। সিট বসানো হবে লম্বালম্বি। সাধারণ সিটের পাশাপাশি প্রতি বগিতে দুটি করে হুইল চেয়ার থাকবে। থাকবে স্মার্টকার্ড টিকিটিং পদ্ধতি।’

‘এ বছরের শেষ নাগাদ মেট্রোরেলের যাত্রা শুরুর কথা রয়েছে। এরই মধ্যে উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত  অংশের প্রায় ৪০ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে।’

এই প্রকল্পের কাজ কতটা এগিয়েছে জানতে চাইলে এই কর্মকর্তা বলেন, ‘আট ভাগে বিভক্ত মেট্রোরেলের কাজের তৃতীয় এই ভাগের ১২ কিলোমিটার পথে ৭৬৬টি পাইল ক্যাপের মধ্যে এরই মধ্যে বসানো হয়েছে ৩৬৩টি। আশা করছি, এই পথে চলতি বছরেই মেট্রোরেল চালু করা সম্ভব হবে। তবে কাজটা বেশ চ্যালেঞ্জিং।’

মেট্রোরেল প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে বিশেষ এই রেলপথে উত্তরা থেকে মতিঝিলে যেতে সর্বোচ্চ সময় লাগবে ৪০ মিনিট। ২৪টি ট্রেন প্রতি ঘণ্টায় চলবে।

২১ হাজার ৯৮৫ কোটি টাকার প্রকল্পটিতে ১৬ হাজার ৫৯৪ কোটি ৫৯ লাখ টাকা ঋণ দিয়েছে জাইকা।

প্রকল্পটি যখন হাতে নেওয়া হয়, তখনকার পরিকল্পনা অনুযায়ী ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু রুট নিয়ে নাগরিক সমাজের একাংশের আন্দোলনের কারণে সময় নষ্ট হয়েছে। ২০১৬ সালের জুলাইয়ে গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলার কারণেও আট মাস পেছায় এই প্রকল্প।