কর্ণফুলী টানেল নির্মাণে চলছে কর্মযজ্ঞ

প্রকাশ | ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ০৯:১১

চট্টগ্রাম ব্যুরো

কর্ণফুলী টানেল নির্মাণকে ঘিরে চট্টগ্রামে চলছে বিশাল কর্মযজ্ঞ। ইতিমধ্যে টানেল নির্মাণ প্রকল্পের ৩০ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। চলতি মাসের মাঝামাঝি চীন থেকে সংগৃহীত টিবিএম দিয়ে নদীর তলদেশে মূল খননকাজ শুরু হবে।

আগামী ২৪ ফেব্রুয়ারি প্রকল্পস্থলে টানেল বোরিং মেশিন (টিবিএম) দিয়ে ওই খননকাজের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

সরেজমিনে দেখা গেছে, কর্ণফুলীর তলদেশে মাটি খুঁড়ে টিউব ঢোকাতে চীন থেকে আনা ৯৪ মিটার দীর্ঘ ও ২২ হাজার টন ওজনের বোরিং মেশিনটি দিয়ে পরীক্ষামূলক কাজ চলছে।

প্রকল্পসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, এটি বাংলাদেশের শুধু নয়, সার্কভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে নদীর তলদেশে প্রথম টানেল। চীনের সাংহাইয়ের ‘ওয়ান সিটি অ্যান্ড টু টাউন’ মডেলে নির্মাণাধীন কর্ণফুলী টানেল কর্ণফুলী নদীর দুই পাশের তথা দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের যোগাযোগব্যবস্থার যুগান্তকারী উন্নয়ন ঘটাবে। নদীর তলদেশে ১৮ থেকে ৩১ মিটার গভীরে দুটি টিউবের মাঝ দিয়ে চলে যাওয়া ৩ দশমিক ৪ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে চার লেনের টানেল সড়কটি সংযুক্তি ঘটাবে চট্টগ্রাম শহরের সঙ্গে প্রস্তাবিত গভীর সমুদ্রবন্দর ও কক্সবাজার এবং এশিয়ান হাইওয়ে নেটওয়ার্কের। নেভাল একাডেমি থেকে আনোয়ারা পর্যন্ত বিস্তৃত নদীর টানেল দিয়ে যানবাহন চলাচল শুরু হলে যোগাযোগব্যবস্থার কেন্দ্রস্থল হিসেবে চট্টগ্রামের ভূমিকাও শক্তিশালী হবে।

প্রতিটি টিউব চওড়ায় হবে ৩৫ ফুট এবং উচ্চতায় প্রায় ১৬ ফুট। টিউব দুটির একটি দিয়ে গাড়ি শহরপ্রান্ত থেকে প্রবেশ করবে, আরেকটি টিউব দিয়ে ওপার থেকে শহরের দিকে আসবে। একটি টিউবে বসানো হবে দুটি স্কেল। এর ওপর দিয়ে দুই লেনে গাড়ি চলাচল করবে। পাশে থাকবে একটি সার্ভিস টিউব। মাঝে ফাঁকা থাকবে ১১ মিটার। যেকোনো বড় গাড়ি দ্রুত চলতে পারবে এই টানেল দিয়ে। এ জন্য টানেলের পশ্চিম ও পূর্ব প্রান্তে ৫ দশমিক ৩৫ কিলোমিটার অ্যাপ্রোচ রোড এবং ৭২৭ মিটার ওভারব্রিজও তৈরি হবে।

তারা জানান, চট্টগ্রাম শহর কর্ণফুলী নদীতে দুই ভাগে বিভক্ত। নদীটির দুটি ব্রিজ দিয়ে যান চলাচল সামাল দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। নদীতে পলি জমার কারণে চট্টগ্রাম বন্দরের কার্যক্রমও ব্যাহত হচ্ছে। এ কারণে ব্রিজের পরিবর্তে ‘কনস্ট্রাকশন অব মাল্টি লেন রোড টানেল আন্ডার দ্য রিভার কর্ণফুলী’ প্রকল্পের মাধ্যমে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে টানেলটি নির্মাণ করছে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের অধীন বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ। ২০১৭ সালের ৫ ডিসেম্বর থেকে প্রকল্প বাস্তবায়নের সময় গণনা শুরু হয়েছে। পাঁচ বছরের মধ্যে কাজ শেষ করার বাধ্যবাধকতা আছে।

কর্ণফুলী টানেল প্রকল্পের পরিচালক হারুনুর রশিদ চৌধুরী জানান, আগামী ২৪ ফেব্রুয়ারি নির্মাণকাজের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে সম্মতি পাওয়া গেছে। সেতুসচিবসহ সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীরা প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন করেছেন।

টানেল প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে এক হাজার ৫৫ দশমিক ৮৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বা ৮ হাজার ৪৪৬ দশমিক ৬৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে বাংলাদেশ সরকার ৩৫০ মিলিয়ন ডলার ও চীন সরকার ৭০৫ দশমিক ৮০ মিলিয়ন ডলার দেবে। মূল টানেল নির্মাণব্যয়ের শতভাগ বহন করছে চীন সরকার। ইতিমধ্যে ৩৮৩ একর ভূমির মধ্যে ২৩২ একর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না কমিউনিকেশন অ্যান্ড কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেডকে (সিসিসিসি) হস্তান্তর করা হয়েছে।

গত ২১ জানুয়ারি আওয়ামী লীগের টানা তৃতীয় মেয়াদের সরকারের মন্ত্রিসভার প্রথম বৈঠকে কর্ণফুলী নদীর তলদেশের টানেলটি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামে নামকরণের প্রস্তাব করেন শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ এই প্রস্তাবে সমর্থন করেন। বঙ্গবন্ধুর নামে কর্ণফুলী টানেলের নামকরণের প্রস্তাবের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরে নওফেল বলেন, যেহেতু চট্টগ্রামে সর্বসাধারণের ব্যবহারযোগ্য তেমন বড় কোনো স্থাপনা নেই, তাই দেশের প্রথম টানেলটি বঙ্গবন্ধুর নামে নামকরণ করা যেতে পারে।