‘দিনে দিনে বহু বাড়িয়াছে দেনা শুধিতে হইবে ঋণ’

প্রকাশ | ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ১৬:০৬

আরিফুর রহমান

গত এক দশকে দেশে অর্থনৈতিক সূচকগুলো ঊর্ধ্বগামী থাকলেও খেলাপি ঋণের চক্র থেকে দেশের ব্যাংক ব্যবস্থাকে মুক্ত করা যায়নি। বর্তমানে প্রায় এক লাখ কোটি টাকার ঋণ খেলাপি হয়ে আছে। এর বাইরে অবলোপন করা হয়েছে আরও প্রায় ৪৫ হাজার কোটি টাকা।

এই চিত্র আপাতদৃষ্টিতে ব্যাংকে ব্যবস্থাপনার দুর্বলতা আর সুশাসনের অভাবকেই আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় আমাদের। কিন্তু এটা একটা দিক মাত্র। বাস্তবতা হলো, ব্যাংকগুলো মূলত পরিচালনা পর্ষদের সঙ্গে মন্দ ব্যবসায়ীদের রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক প্রভাবের যোগসাজশের শিকার।

এই চক্রের কারণে যাচ্ছেতাইভাবে ঋণ বিতরণ করা হয়েছে অনেকটা লুটপাটের মতো। ফলে প্রায় অস্তিত্বহীন প্রতিষ্ঠানের নামে হাজার কোটি টাকার ঋণ নেয়ার খবর সংবাদ মাধ্যমে এসেছে। বেসিক ব্যাংক, সোনালীসহ সরকারি বিভিন্ন ব্যাংক থেকে গুটিকয় ব্যক্তির হাতে ঋণের নামে হাজার হাজার কোটি টাকা চলে যাওয়ার খবরও আমরা দেখেছি।

সাম্প্রতিক সময়ে বেসরকারি ফারমার্স ব্যাংক দেউলিয়া হয়েছে নামে-বেনামে ঋণের আড়ালে লুটপাটের কারণে। আর এর পেছনে কাজ করেছে রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতার প্রভাব। সরকার হাজার কোটি টাকা দিয়ে একে বাঁচানোর চেষ্টা করছে। বদনাম লুকাতে সেটি এখন নিজের নাম বদলে হয়েছে পদ্মা ব্যাংক। আরও কিছু ব্যাংকের অবস্থাও ভালো নয় বলে জানা যাচ্ছে।

ব্যাংকের টাকা জনগণের আমানত। সেই আমানতের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা ও বিনিয়োগের বদলে তার খেয়ানত করেছে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ দিনের পর দিন। তারা রাজনৈতিক চাপের দোহাই দেন; রাজনৈতিক বিবেচনায় সরকার নিয়োজিত পরিচালনা পর্ষদের স্বেচ্ছাচারের অভিযোগ করেন অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা।

এই সমস্যাগুলো দূর করা কঠিন কিছু নয় যদি সরকার উদ্যোগী হয়। আমরা মনে করি, সবার আগে ব্যাংক ব্যবস্থাকে রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক চাপমুক্ত করতে হবে। পরিচালনা পর্ষদকে হতে হবে সুশাসন-বান্ধব। তাহলে ঋণের নামে লুটপাট ও মন্দ মানুষদের হাতে ঋণ পুঞ্জিভূত হওয়া বন্ধ হবে। আশার কথা, নতুন সরকারের নতুন অর্র্থমন্ত্রী ঋণখেলাপিদের বিষয়ে সতর্কবার্তা দিয়েছেন।

নানা ঋণের নামে ব্যাংক থেকে প্রতারণা করে যারা টাকা বের করে নিয়েছেন এবং এ কাজে যারা সহযোগিতা করেছেন, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা আসছে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। ব্যাংকিং খাতের নানা অব্যবস্থাপনা ও দুর্বলতা দূর করতে সরকারের ভাবনার বিষয়টিও বলেছেন। আমরা অর্থমন্ত্রীর এই বক্তব্যকে সাধুবাদ জানাই।

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ‘কুলি মজুর’ কবিতার একটি চরণ দেশের ব্যাংক খাতে ঋণখেলাপিদের ক্ষেত্রেও  প্রণিধানযোগ্য, ‘দিনে দিনে বহু বাড়িয়াছে দেনা শুধিতে হইবে ঋণ’। শ্রমিক আর সাধারণ মানুষের সঞ্চিত অর্থ যারা লুটপাট করেছে, তাদের বিরুদ্ধে সরকারের কঠোর অবস্থান বজায় থাকবে-এই কামনা করি।