বুড়িগঙ্গায় উচ্ছেদ

অগ্রিমের টাকা নিয়ে সটকে পড়েছেন দখলদারেরা

প্রকাশ | ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ০৮:৪০

কাজী রফিক

বুড়িগঙ্গা নদী ও বুড়িগঙ্গার আদি চ্যানেল ঘিরে উচ্ছেদ অভিযানে ক্ষতির মুখে পড়েছেন দখলদারদের কাছে ভাড়া নিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করা ব্যবসায়ীরা।
কারণ, তারা দৈনিক ভাড়া ছাড়াও এককালীন অগ্রিম সেলামি হিসেবে বিপুল পরিমাণ টাকা দিয়েছিলেন ভবনমালিকদের। কিন্তু উচ্ছেদের পর আর দখলদারদের খুঁজে পাচ্ছেন না তারা। এই টাকা আর উদ্ধার হবে কি না, তা নিয়ে চিন্তিত ব্যবসায়ীরা।

বুড়িগঙ্গা নদীতে উচ্ছেদ অভিযানে যেসব স্থাপনা ভাঙা হয়েছে, তার সবই স্থানীয়ভাবে প্রভাবশালীদের। তবে এসব স্থাপনা ভাড়া দিয়ে বিপুল পরিমাণ টাকা তারা ভাড়াটিয়াদের কাছ থেকে নিয়ে যাওয়ায় তাদের ক্ষতির পরিমাণ কম। ব্যবসা হারানোর পাশাপাশি অগ্রিম টাকা না পেয়ে ক্ষতির মুখে ঘুরেফিরে ব্যবসায়ীরাই।

বুড়িগঙ্গা নদীর দুই পাড়ে সাড়ে তিন কিলোমিটার জায়গা এবং দুই যুগেরও বেশি সময় ধরে দখলদারদের কব্জায় ছিল বুড়িগঙ্গার আদি চ্যানেল। বিআইডব্লিউটিএ গত ছয় দিনের অভিযানে উচ্ছেদ করেছে ১ হাজার ১৯৯টি স্থাপনা। ভেঙে দেওয়া হয়েছে ১০৭টি পাকা ভবন, ১২১টি আধা পাকা ভবন, ৮০টি স-মিল, আটটি ছোট-বড় কারখানা এবং ৮৮৩টি টিনের ঘর ও টংঘর।

উচ্ছেদের পর জমির কথিত মালিকদের দেখা নেই। ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ভাড়া নেওয়ার সময় যে টাকা অগ্রিম দেওয়া হয়েছিল, তা ফেরত নেওয়ার জন্য ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা মালিকদের খুঁজেই পাচ্ছেন না।

বৃহস্পতিবার কামরাঙ্গীরচরের লোহার ব্রিজ, ছাতা মসজিদ এলাকায় উচ্ছেদ করা হয়েছে ২৫৭টি অবৈধ স্থাপনা। সেখানে রহমান প্লাজা, পাইপ তৈরির কারখানা, টংঘর ও দোকান, আবাসিক ভবনসহ বিশাল এক স্থাপনার কথিত মালিক ছিলেন হাজি মাহবুব রহমান। 

উচ্ছেদে টংঘর ও দোকান ভাঙার কারণে গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে হতাশা প্রকাশ করেছেন অনেক দর্শনার্থী। মাসিক ভাড়া প্রদানের মাধ্যমে এখানে বসবাস ও ব্যবসা করে আসছিলেন নিম্ন  আয়ের মানুষ। দোকান নেওয়ার আগে দখলদারের হাতে গুঁজে দিতে হয়েছে মোটা অঙ্কের অগ্রিম। 
মাহবুব রহমান স্থানীয়ভাবে প্রভাবশালী। তিনি খাল দখল করে সেখানে গড়ে তোলেন আবাসিক ভবন ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। আর সব ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান থেকেই তিনি গ্রহণ করেছেন মোটা অঙ্কের টাকা। 

উচ্ছেদ অভিযানে যাদের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ভাঙা হয়েছে তাদের বেশ কয়েকজন বলেন, তারা তাদের অগ্রিমের টাকা ফেরত চান, কিন্তু মাহবুব রহমানকে খুঁজেই পাওয়া যাচ্ছে না।
আব্দুল ওহুদ নামের এক ব্যবসায়ী বলেন, ‘এইখানে এক লাখ টাকা অ্যাডভান্স দেওয়া আছে, এইডা নিতে অইব।’

উচ্ছেদে দোকান ভাঙা হয়েছে আব্দুস সাত্তারের। তিনিও অগ্রিম হিসেবে দেওয়া এক লাখ টাকা নিয়ে চিন্তিত। বলেন, ‘তিনি যদি আমারে আগে জানাইত তাহলে আমি সরে যাইতাম। ফাও তো থাকি না। ভাড়া দেই। আগে জানায় নাই, এখন তাড়াতাড়ি মালামাল সরাতে গিয়া কিছু মালামাল নষ্ট হইছে। এখন অ্যাডভান্সটা ফেরত দিলে আরেক জাগায় দোকান নিতে পারি। কিন্তু মালিকেরই তো কোনো খোঁজ-খবর পাই না।’