এক বছর ধরে মাঠে পাঠদান

শওকত আলী, চাঁদপুর প্রতিবেদক
| আপডেট : ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ০৯:১৮ | প্রকাশিত : ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ০৯:১২
বালিথুবা সামছুলিয়া অদুদীয়া মাদ্রাসায় শ্রেণিকক্ষের অভাবে খোলা আকাশের নিচে শিক্ষার্থীদের পাঠদান করানো হচ্ছে।

চাঁদপুর জেলার ফরিদগঞ্জের বালিথুবা সামছুলিয়া অদুদীয়া মাদ্রাসার ছাত্রছাত্রীদের শ্রেণিকক্ষের অভাবে পাঠদান চলছে খোলা আকাশের নিচে। ১৯৯৪ সালে মাদ্রাসাটি প্রতিষ্ঠা হলেও এখন পর্যন্ত সরকারি অর্থে প্রতিষ্ঠানটির অবকাঠামোগত কোনো উন্নয়ন হয়নি। ২০০১ সালে এমপিভুক্ত হওয়া প্রতিষ্ঠানটিতে শ্রেণিকক্ষের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। এ কারণে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে পাঁচ শতাধিক ছাত্রছাত্রীর স্বাভাবিক শিক্ষা কার্যক্রম।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মাদ্রাসা মাঠের দক্ষিণ পাশে খোলা আকাশের নিচে পাশাপাশি তৃতীয়, ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির ছাত্রছাত্রীদের পাঠদান করছেন তিনজন শিক্ষক। তিনটি শ্রেণির শিক্ষার্থীদের একই সঙ্গে উচ্চস্বরে পাঠদান, মাঠের পাশ দিয়ে যাওয়া রাস্তার ধুলা ও যানবাহনের বিকট শব্দে লেখাপড়ার প্রতি শিক্ষার্থীদের মনোযোগ মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে।

মাঠের পশ্চিম পাশে মসজিদের দ্বিতীয় তলায় ইবতেদায়ি প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থীদের পাঠদান করাচ্ছেন শিক্ষক। এ ছাড়া মাঠের উত্তরে রাস্তার পাশে পুরাতন পরিত্যক্ত আরেকটি ভবনের চারটি কক্ষে ঝুঁকির মধ্য দিয়ে চালানো হচ্ছে অন্যান্য শ্রেণির শিক্ষা কার্যক্রম। তারপরও স্থানসংকুলান না হওয়ায় প্রায় এক বছর ধরে কয়েকটি শ্রেণির শিক্ষার্থীদের খোলা আকাশের নিচে পাঠদান করানো হচ্ছে।

মাঠে ষষ্ঠ শ্রেণির আরবি বিষয়ের ক্লাস নিচ্ছিলেন হারুনুর রশিদ। ঢাকা টাইমসকে তিনি বলেন, ‘খোলা আকাশের নিচে সকালে ঠান্ডা ও দুপুরে প্রচ- গরম থাকে। এতে শিশু শিক্ষার্থীরা অসুস্থ হয়ে পড়ে। খোলা স্থানে একই সঙ্গে তিনটি শ্রেণির পাঠদান করানোয় শিক্ষার্থীরা মনোযোগ দিয়ে পাঠ গ্রহণ করতে পারে না। তা ছাড়া মাঠসংলগ্ন রাস্তার যানবাহনের শব্দ ও ধুলাবালুতে পড়ালেখার পরিবেশ নেই বললেই চলে।’

মাদ্রাসা সুপার মো. মাহাবুবুর রহমান বলেন, ‘প্রতিষ্ঠানটিতে ব্যবহারের উপযোগী মাত্র দুটি শ্রেণিকক্ষ রয়েছে। বাকি চারটি কক্ষ ২০১০ সালে পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়। এ ছাড়া বিভিন্নজনের কাছ থেকে আর্থিক সহায়তা নিয়ে টিনশেডের তিনটি শ্রেণিকক্ষ নির্মাণের কাজ হচ্ছিল। কিন্তু আর্থিক সংকটের কারণে তা-ও সম্ভব হচ্ছে না। শ্রেণিকক্ষের তীব্র সংকট দেখা দেওয়ায় বাধ্য হয়ে খোলা আকাশের নিচে ও পরিত্যক্ত ভবনে ঝুঁকি নিয়ে ছাত্রছাত্রীদের পাঠদান করতে হয়। সামনের বর্ষা মৌসুমে কীভাবে শিক্ষা কার্যক্রম চালাব, তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি।’ মাদ্রাসা সুপার আরও বলেন, ‘এই মাদ্রাসা থেকে গত তিন বছরে জেডিসি পরীক্ষায় কয়েকজন ‘এ প্লাস’সহ শতভাগ শিক্ষার্থী এবং দাখিল পরীক্ষায় শতভাগ পরীক্ষার্থী উত্তীর্ণ হয়েছে। নিয়মিত ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা বাড়ছে। কিন্তু শ্রেণিকক্ষসহ বিভিন্ন সংকটের কারণে শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। একটি ভবনের জন্য ঊর্ধ্বতনদের কাছে ধর্না দিতে দিতে ক্লান্ত হয়ে পড়েছি। আশা করছি মাননীয় এমপি মহোদয় আমাদের সমস্যা বিবেচনায় নিয়ে নতুন ভবন করে দেবেন।’

মাদ্রাসার সভাপতি আব্দুল আজিজ ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘এলাকার কৃতী সন্তান বর্তমান সাংসদ মুহম্মদ শফিকুর রহমানের আন্তরিক সহযোগিতায় মাদ্রাসাটি এমপিভুক্ত হয়। এরপর মাদ্রাসাটির কোনো উন্নয়ন হয়নি।

বিশেষ করে গত ১০ বছরে ফরিদগঞ্জের অসংখ্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভবন ও ডিজিটাল ল্যাবসহ ব্যাপক উন্নয়নকাজ হলেও এই প্রতিষ্ঠানের দিকে কেউ ফিরে তাকায়নি।’ মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের পড়ালেখা নিবিঘ্ন করতে নতুন একটি বহুতল ভবন নির্মাণে বর্তমান সংসদ সদস্যের কাছে দাবি জানান তিনি।

ফরিদগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আলী আফরোজ বলেন, ‘সংসদ সদস্যের ডিও লেটার নিয়ে আবেদন করলে প্রতিষ্ঠানটিতে একটি নতুন ভবন হবে।’ ফরিদগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবু সাহেদ সরকার বলেন, ‘এই সমস্যার কথা কেউ আমাদের জানায়নি। তবে এখন যখন জেনেছি, দ্রুত সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করব।’

সংবাদটি শেয়ার করুন

শিক্ষা বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিক্ষা এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :