উটপাখির ডিম দেখতে হাজী দানেশে ভিড়
যদিও এটি পাখিগোত্রীয়, কিন্তু উড়তে পারে না উটপাখি। পৃথিবীর সবচেয়ে বড় এই পাখি ডিম দিতে শুরু করেছে দিনাজপুর হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় চিড়িয়াখানায়। আর তা দেখতে হাজারো উৎসুক দর্শনার্থী সেখানে ভিড় করছে প্রতিদিন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেটেরিনারি অ্যান্ড এনিমেল সায়েন্স অনুষদের অডিটরিয়াম-২ এর পাশে গড়ে তোলা হয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির পশু-পাখির চিড়িয়াখানা। সেখানে গত ১ ফেব্রুয়ারি বিকেল সাড়ে তিনটায় প্রথমবারের মতো ডিম দিয়েছে একটি মা উটপাখি।
প্রধান গবেষক ও জিনেটিক্স অ্যান্ড এনিমেল ব্রিডিং বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আব্দুল গাফফার মিয়া জানান, ডিমটির ওজন ১ কেজি ১০০ গ্রাম। উটপাখির ডিম পাড়ার মধ্য দিয়ে আমরা নতুন সফলতা দেখতে পাচ্ছি।’
‘মরুভূমির জাহাজ’ খ্যাত উটপাখির আবাস সাধারণত আফ্রিকার সাহারা মরুভূমি। দক্ষিণের তৃণভূমি এদের বিচরণস্থল। তবে বাংলাদেশের আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এদের বসবাস ও বংশবৃদ্ধিতে কোনো সমস্যা নেই বলে জানান অধ্যাপক আব্দুল গাফফার।
একটি উটপাখি বছরে ২০ থেকে ১০০টি ডিম পাড়ে। ডিম থেকে ফুটে একটি ইটপাখি প্রাপ্তবয়স্ক হতে আড়াই বছর সময় লাগে। তারপর ডিম দিতে পারে। একেকটি ডিমের ওজন দেড় থেকে দুই কেজি হয়। পূর্ণবয়স্ক একটি উটপাখি থেকে দুই মণের বেশি মাংস পাওয়া যায়।
অধ্যাপক আব্দুল গাফফার জানান, দেশে আমিষের চাহিদা মেটানোর জন্য বাণিজ্যিকভাবে উটপাখির খামারের অনেক সম্ভাবনা রয়েছে। সাত দিনের একটি বাচ্চার দাম ১৫-২০ হাজার টাকা। উটপাখির মাংস পুষ্টিকর ও সুস্বাদু। এদের খাদ্য সহজলভ্য। এরা আলফা ও নেপিয়ার ঘাস, ইপিলইপিল ও ডুমুর গাছের পাতা, জাত নিমের পাতা, বাঁধাকপি-ফুলকপি, লালশাক, পালং শাক, পোল্ট্রি ফিড ও পাথরের গুঁড়া খেয়ে থাকে।
এ ছাড়া উটপাখি ৩০ থেকে ৪০ বছর পর্যন্ত উৎপাদন ক্ষমতা থাকে। এরা ৮০-১০০ বছর পর্যন্ত বাঁচতে পারে। আর দৈহিক বৃদ্ধি ও বাচ্চা (ডিম) উৎপাদন গরু-ছাগলের চেয়ে বেশি। তাই গরুর চেয়ে উটপাখি পালন বেশি লাভজনক।
২০১৬ সালে অক্টোবর মাসে দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে দুই মাস বয়সের উটপাখির ছানা আনা হয়েছিল হাবিপ্রবিতে। কয়েকটি মারা গেছে। এখন ছোট ১৫টি ও বড় ৪টি মিলে ১৯টি উটপাখি রয়েছে বলে জানান হাবিপ্রবির জেনিটিক অ্যান্ড এনিমেল ব্রিডিং বিভাগের পিএইচডি ফেলো মো. আহসান হাবিব।
একই অনুষদের লেভেল ৪-এর শিক্ষার্থী মুশফিকুর রহমান বলেন, ‘অনেক দিন ধরে আমরা উটপাখিগুলো লালন-পালন করে আসছি। দীর্ঘদিন অপেক্ষার পর উটপাখির ডিম দেখে খুবই ভালো লাগছে। মনে হচ্ছে, আমাদের প্রচেষ্টা আর পরিশ্রম সফল হয়েছে।’ উটপাখির ডিম পাড়ার খবর ছড়িয়ে পড়লে সাধারণ মানুষ এবং বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্রছাত্রীরা হাবিপ্রবির চিড়িয়াখানায় প্রতিদিন ভিড় করছে বলে জানান তিনি।