অভিযানের পর তদারকিও করতে হবে

প্রকাশ | ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ১৬:১৭

আরিফুর রহমান

এসএসসি পরীক্ষার নিবন্ধনে বোর্ড নির্ধারিত ফির বাড়তি টাকা ফেরত দিতে দুদককে লিখিত অঙ্গীকার করেছিল সংশ্লিষ্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো। কিন্তু অতিরিক্ত টাকা ফেরত না দিয়ে সমন্বয় করা হয়েছে বাধ্যতামূলক কোচিং করিয়ে। এই তথ্য আর জানে না দুর্নীতিবিরোধী সংস্থাটি। এমনই একটি প্রতিবেদন শুক্রবার ঢাকাটাইমসে ছাপা হয়েছে।

প্রচলিত আছে শিক্ষা বোর্ড যে টাকা বেঁধে দেয়, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো নানা অজুহাতে আদায় করে কখনো দ্বিগুণ, কখনো তিন গুণ। এ রকম অভিযোগে শিক্ষা প্রশাসন বরাবর ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণা দিলেও কার্যকর কিছু করতে পারেনি। এবার দুদকও মাঠে নেমেছিল। কিন্তু পরিস্থিতি যে পাল্টায়নি তা ওই প্রতিবেদন থেকে বোঝা যাচ্ছে।

দুদকের কর্মকর্তা বলছেন, তারা স্কুল কর্তৃপক্ষের ওপর ভরসা করে এ নিয়ে আর খোঁজ-খবর করেননি। আর টাকা যে ফেরত দেওয়া হয়নি, সেই তথ্য অভিভাবক বা অন্য কেউ তাদের জানাননি।

ওদিকে পরীক্ষার পূর্বমুহূর্তে কোনো ধরনের ঝামেলা হয় কি না, তা নিয়ে শঙ্কা থেকে শিক্ষার্থীদের বাবা-মা অতিরিক্ত টাকা নিয়ে আর উচ্চবাচ্য করেননি। লিখিত অঙ্গীকার করা স্কুল কর্তৃপক্ষ এখন অতিরিক্ত টাকা নেওয়ার কথাই বেমালুম অস্বীকার করছেন।

এখানেই আমাদের যত গলদ। আমরা অনিয়ম কোথায় জানি, কিন্তু তা প্রতিরোধ-প্রতিকার করতে পারি না। আমরা অনিয়ম চিহ্নিত করতে পারি কিন্তু উৎপাটন করতে পারি না। অভিযান চালিয়ে উচ্ছেদ করতে পারি, সতর্ক করতে পারি, কিন্তু সেটি আর পরে বাস্তবায়ন হলো কি না তার খবর রাখি না।

দেশের প্রায় সব খাতে এই একই চিত্র। ফলে একরকম প্রকাশ্যে অন্যায় ও অবৈধ কর্ম চলছে শিক্ষা-স্বাস্থ্য, যোগাযোগ, ভূমি থেকে শুরু করে সব প্রতিষ্ঠানে। যে যেভাবে পারছে নির্বিচার ‘বাণিজ্য’ করে বেড়াচ্ছে। দখল হচ্ছে নদী-খাল থেকে সরকারি খাসজমি।

নানা নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠান আর দুদক মাঝেমধ্যে অভিযান চালিয়ে অনিয়মের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয় বটে। কিন্তু পরবর্তী তদারকি আর হয় না সেখানে। ফুটপাতের হকার উচ্ছেদের কয়েক ঘণ্টা পর তা আবার পূর্বাবস্থায় ফিরে যায়। নদী আর খাল দখলমুক্ত করার ২৪ ঘণ্টা না যেতেই তা আবার ভরাটের আয়োজন চলে।

সম্প্রতি দুদক স্কুল ও হাসপাতালে অভিযান চালানোর পর সেখানকার চিত্র কিছুটা পাল্টায়। নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ বুড়িগঙ্গা আর কর্ণফুলী উদ্ধারে ব্যাপক অভিযান চালাচ্ছে। প্রভাবশালীদের স্থাপনাও রেহাই পাচ্ছে না। বলা হচ্ছে এবার অবশ্যই দখলমুক্ত রাখা হবে এসব।

এই উদ্যোগকে আমরা ইতিবাচক হিসেবে দেখছি। তবে আমরা মনে করি, অনিয়ম আর দখলের বিরুদ্ধে অভিযান ও সতর্কতার মধ্যেই যেন দায়িত্ব শেষ হয়ে না যায়, তার বাস্তবায়ন তদারকিরও প্রয়োজন। এটিই আসল। সেই কাজটি হচ্ছে না বলে সবই পণ্ডশ্রম হতে দেখছি আমরা।