রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন
রাখাইনে সেইফ জোনের প্রস্তাব বাংলাদেশের, ভারতের আশ্বাস
গণহত্যা ও নির্যাতনের মুখে বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নেয়া লাখ লাখ রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর নিরাপদ প্রত্যাবাসনে ভারতকে একটি নতুন প্রস্তাব দিয়েছে বাংলাদেশ। মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের জন্য একটি নিরাপদ আবাসস্থল হবে। সেই এলাকাটি ভারত, চীন ও আসিয়ানভুক্ত অন্যান্য দেশগুলোর পর্যবেক্ষণে থাকবে। যেহেতু চীন ও ভারতের সঙ্গে মিয়ানমারের বন্ধুত্ব রয়েছে তাই এ প্রস্তাব গ্রহণযোগ্য হতে পারে বলে মনে করছে বাংলাদেশ। এর আগে জাতিসংঘের শুনানিতে এমন একটি প্রস্তাব তুলেছিল বাংলাদেশ।
শুক্রবার ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজের সঙ্গে বৈঠককালে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আবদুল মোমেন আনুষ্ঠানিকভাবে এই প্রস্তাব দেন। ভারত এ ব্যাপারে আশ্বাস দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
বার্তা সংস্থা বাসসের সঙ্গে আলাপকালে পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গেও তিনি এই প্রস্তাবটির ব্যাপারে আলাপ করেছেন। মোদি এটিকে একটি ‘উদ্ভাবনমূলক’ ভাবনা বলে মন্তব্য করেছেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী তিন দিনের ভারত সফর শেষে শনিবার ঢাকায় পৌঁছেছেন। রোহিঙ্গাদের নিরাপদ মাতৃভূমিতে প্রত্যাবর্তন নিশ্চিতের বিষয়টি এই সফরের মূল উদ্দেশ্য ছিল বলে জানান মন্ত্রী। তিনি বলেন, অন্যথায় এ অঞ্চলে মৌলবাদ ও অনিশ্চয়তা বিস্তার লাভ করতে পারে, যা আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিকে বিপর্যস্ত করে তুলতে পারে। জনবহুল দেশ হিসেবে বাংলাদেশ ১০ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গার গুরুভার বহন করায় নানাবিধ হুমকির সম্মুখীন হচ্ছে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মানবিক শিষ্ঠাচারের বর্ণনা দিয়ে বলেন, প্রধানমন্ত্রী এসব রোহিঙ্গা শরণার্থীকে আশ্রয় দিয়ে বিপুলসংখ্যক লোকের জীবন রক্ষা করেছেন। তা না হলে বিশ্বকে বিপুলসংখ্যক লোকের মৃত্যু দেখতে হতো। এ ঘটনা হতে পারতো দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর দ্বিতীয় বৃহত্তম গণহত্যা।
এ প্রসঙ্গে মোমেন বলেন, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে ২৪ সহস্রাধিক লোক নিহত হয়েছে। ১৮ হাজার নারী ধর্ষিত হয়েছে। এক লাখ ২০ হাজার বাড়ি ধ্বংস করা হয়েছে। এক লাখ ১৫ হাজার বাড়ি পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে।
ভারত সফর সম্পর্কে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটি ছিল খুবই সফল এবং ইতিবাচক সফর। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং তাকে অভ্যর্থনা জানান।
তিস্তার পানি বন্টন সম্পর্কিত এক প্রশ্নের জবাবে মোমেন বলেন, শুধু তিস্তা নয় বাংলাদেশ চায় আলোচনার মাধ্যমে সব বিষয়ের একটি সমাধান। তিনি বলেন, অভিন্ন ৫৪টি নদীর সবকটির পানি বণ্টন সমস্যার একটি সমাধান পাওয়া যেতে পারে। আমাদের আলোচনায় শুধু একটি নদী নিয়েই সীমাবদ্ধ থাকা ঠিক হবে না। মোমেন ভারতের সঙ্গে সীমান্ত সীমানা নিয়ে বিরোধের উল্লেখ করে বলেন, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বর্তমানে চমৎকার সম্পর্ক বিরাজ করছে। ফলে আলোচনার মাধ্যমে প্রতিবেশী এ দেশটির সঙ্গে সব সমস্যার সমাধানে আমরা সক্ষম হব।
বাংলাদেশকে ভারতের ৪.৫ বিলিয়ন ডলার লাইন অব ক্রেডিট (এলওসি) সম্পর্কিত এক প্রশ্নের জবাবে মোমেন বলেন, তিনি এ প্রক্রিয়াটি দ্রুত করার জন্য ভারত কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ জানিয়েছেন।
(ঢাকাটাইমস/০৯ফেব্রুয়ারি/জেবি)