গাইবান্ধার বালুয়া হাসপাতাল

চিকিৎসক নেই বলে রোগী ভর্তি বন্ধ পাঁচ বছর

জাভেদ হোসেন, গাইবান্ধা
 | প্রকাশিত : ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ০৮:২৬

দুজন ডাক্তারের পদ থাকলেও দায়িত্বে কেউ নেই। ফার্মাসিস্ট আর নার্সই একমাত্র ভরসা। ওই ফার্মাসিস্ট আবার হজের ছুটিতে। প্রেষণে এসেছেন একজন উপস্বাস্থ্যকর্মী।

এটি মফস্বলের একটি সরকারি হাসপাতালের চিত্র। হতাশাজনক এই চিত্র গাইবান্ধা সদর উপজেলার রামচন্দ্রপুর পল্লী স্বাস্থ্যকেন্দ্রে। স্থানীয়ভাবে এটি বালুয়া হাসপাতাল নামে পরিচিত। স্থানীয়রা জানান, প্রায় দুই বছর ধরে এই চিকিৎসালয়ে কোনো চিকিৎসক নেই। আর বছর পাঁচেক ধরে কোনো রোগীও ভর্তি করা হয় না।

ঢাকার বাইরে সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসক স্বল্পতা, চিকিৎসকদের কাজে ফাঁকি দেওয়ার প্রবণতা নতুন নয়। রোগীরা সেবা পাচ্ছেন না আর এ বিষয়ে যখন জনক্ষোভ ধূমায়িত হচ্ছে তখন কাজে না গেলে চাকরি থাকবে না বলে হুঁশিয়ারি এসেছে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে।

এর মধ্যে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে এমন চিকিৎসালয়ের খোঁজ আসছে, যেখানে পদ থাকলেও পর্যাপ্ত ডাক্তার নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে না। কিন্তু একেবারে চিকিৎসক শূন্য হাসপাতাল-এই বিষয়টি বিরলই বলা যায়।

চিকিৎসক নেই, কিন্তু স্থানীয় চিকিৎসা প্রশাসনের যেন কোনো ভাবান্তরই নেই। কাউকে সেখানে পাঠানোর উদ্যোগও নেই। রোগীদের ব্যবস্থাপত্রের ভার তারা দিয়ে রেখেছেন কর্মচারী বা নার্সদের ওপর। আর এ কারণে স্থানীয় জনতা আর জনপ্রতিনিধিরা ক্ষুব্ধ।

বৃহস্পতিবার দুপুরে স্বাস্থ্যকেন্দ্রের বারান্দায় কথা হয় ফকিরের হাট গ্রামের রুবি বেগমের সঙ্গে। কোলে তার তিন বছরের শিশু সন্তান। তিনি বললেন, তিন দিন ধরে তার সন্তানের সর্দি-জ্বর। তার এলাকায় কোনো ডাক্তার নাই, তাই ছুটে এসেছেন এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে। কিন্তু এখানে এসেও ডাক্তার পাননি। বলেন, ‘একজন নার্স আপা কয়েকটা বড়ি দিল। তাই নিয়ে বাড়ি যাচ্ছি।’

এক বছরের শিশু রোকেয়াকে কোলে নিয়ে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ঢুকলেন রহিমা বেগম। শ্বাসকষ্টের যন্ত্রণায় ছটফট করছিল মেয়েটি। ডাক্তারের কক্ষ বন্ধ দেখে ঢুকে পড়লেন নার্সের কক্ষে। সব শুনে নার্স একটা ওষুধের সিরাপ দিয়ে দিলেন।

রহিমা জানান, এর আগেও সে এসেছিলেন, ডাক্তারের দেখা পাননি। তার অভিযোগ, এই হাসপাতাল সব সময় খোলা থাকে না। সকালে খুললে দুপুরের মধ্যে বন্ধ হয়ে যায়। মাঝে মাঝেতো এমনিতেই বন্ধ থাকে।

রামচন্দ্রপুর ইউনিয়নের সাবেক ইউপি সদস্য মোছাব্বির মিয়া বললেন, ‘এটি এখন শুধু নামেই হাসপাতাল। এখানে রোগীরা তেমন কোন চিকিৎসা সুবিধা পায় না, নেই কোন ওষুধ।’

১০ শয্যার হাসপাতালটিতে ২০১৪ সাল থেকেই রোগী ভর্তি বন্ধ বলেও জানাচ্ছেন এই জনপ্রতিনিধি। বলেন, এখানে শুধু বহির্বিভাগে চিকিৎসা দেওয়া হয়। তাও আবার অনিয়মিত।

ছয় একর জমির উপর পাকিস্তান আমলে গড়ে তোলা হয় এই হাসপাতালটি। দুই জন চিকিৎসকসহ কর্মচারী-কর্মকর্তার পদ মোট ২৩ জন। কিন্তু এসব পদ কত বছর ধরে ফাঁকা সেটি বলতেও পারছেন না কেউ।

রামচন্দ্রপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম ঢাকা টাইমসকে জানান, ২০০৯-১০ অর্থবছর পর্যন্ত হাসপাতালে যথারীতি রোগী ভর্তি চালু থাকলেও চিকিৎসকের অভাবে অভ্যন্তরীণ বিভাগ বন্ধ করে দেওয়া হয়। ফলে রোগী ভর্তি বন্ধ হয়ে যায়।’

স্বাস্থ কেন্দ্রে ডেপুটেশনে থাকা উপ-স্বাস্থ্যকর্মী আমিনুর ইসলাম ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘দুই বছর ধরে ডাক্তারের পদ শূন্য থাকায় আমাদেরকেই সেবা দিতে হচ্ছে।’

এই কর্মীর তথ্য মতে এখানে ২১ জন স্টাফের মধ্যে কর্মরত আছেন ১০ জন। এদের ছয়জন নার্স, একজন করে ফার্মাসিস্ট, ওয়ার্ড বয়, এমএলএসএস ও সুইপার। এদের মধ্যে আবার মেডিকেল টেকনোলোজিস্ট, এমএলএসএস, সুইপার এবং ওয়ার্ড বয় প্রেষণে আছেন।

স্থানীয় সমাজকর্মী আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, ‘হাসপাতালের স্টাফ কোয়ার্টারসহ অন্যান্য অবকাঠামো অযত্ন অবহেলায় পড়ে থাকায় সেগুলোর এখন জরাজীর্ণ দশা। অনেক মূল্যবান জিনিসপত্র চুরি ও নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। প্রায় জনশূন্য অবস্থার কারণে রাতে হাসপাতালের ক্যাম্পাসটি চলে যায় নেশাখোড়দের দখলে।’

গাইবান্ধার সিভিল সার্জন আবদুুস শাকুর ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘গত মাসিক সভাতেও স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সংসদ সদস্য মাহবুব আরা বেগম গিনির পরামর্শক্রমে রামচন্দপুর পল্লী স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি সচল রাখার জন্য সেখানে গাইবান্ধা শহর থেকে বক্ষব্যাধী হাসপাতালটি স্থানান্তরের জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহা পরিচালকের কাছে একটি পত্র দেওয়া হয়েছে। কিন্তু বক্ষব্যাধী হাসপাতাল শহরের বাহিরে নেয়ার সুযোগ না থাকায় সেটি খুব শিগগির একটি হেলথ কমপ্লেক্স করার পরিকল্পনা আমাদের আছে।’

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :