সাগর-রুনি হত্যায় কী এমন রহস্য?

আশিক আহমেদ
| আপডেট : ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ১১:৪৭ | প্রকাশিত : ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ০৮:৩৭
ফাইল ছবি

বাড়িতে ঢুকে জোড়া খুন। তদন্তে নেমে গলদঘর্ম প্রথমে পুলিশ, পরে র‌্যাব। নানা সময় নানা আশ্বাস এসেছে সরকারের পক্ষ থেকে। কিন্তু কারা খুন করেছে, কেন করেছে, তার কিছুই প্রকাশ পায়নি সাত বছরেও।

বছর ঘুরে বাবা-মায়ের মৃত্যুর বিভীষিকাময় দিবসটি আসে আর কাদে ছোট্ট শিশু মাহির সারোয়ার মেঘ। তাকে সান্ত¡না দেওয়ার সাহসটুকুও হারিয়ে ফেলেছেন স্বজন আর এই সাংবাদিক দম্পতির হাজারো সহকর্মী।

সামাজিক মাধ্যমসহ লোকমুখে সাত বছর ধরেই আছে প্রশ্ন, কী এমন রহস্য এই হত্যার পেছনে? কেন এটি উদঘাটন করা যায়নি এই দীর্ঘ সময়েও?

পুলিশ, গোয়েন্দা বাহিনী ডিবি আর র‌্যাব মিলিয়ে তিনটি তদন্ত সংস্থা মামলাটিতে প্রতিবেদন দিতে আদালতের কাছে মোট ৬২ বার সময় নিয়েছে। কিন্তু জমা দিতে পারছে না প্রতিবেদন। সহসা প্রতিবেদন জমা পড়বে, এমন আশাও অনেকটাই হারিয়ে যাওয়ার মতো। আর এখন বিষয়টি নিয়ে এড়িয়ে যাওয়াকেই শ্রেয় মনে করছেন খোদ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। শুক্রবার রাজধানীতে এক আয়োজনে তার কাছে এই বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন রেখেছিলেন গণমাধ্যমকর্মীরা। কিন্তু একটি কথাও বলেননি।

২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি সকালে রাজধানীর পশ্চিম রাজাবাজারে ভাড়াবাসায় মাছরাঙা টেলিভিশনের বার্তা সম্পাদক সাগর সরওয়ার ও এটিএন বাংলার জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক মেহেরুন রুনির ক্ষতবিক্ষত মরদেহ উদ্ধার হয়। ওই দিন ঘটনাস্থলে এসে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে খুনিদের গ্রেপ্তার করার কথা বলেছিলেন তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন। কিন্তু ওই রকম ৪৮ ঘণ্টা গেছে এক হাজার ২৭৭ বার।

এই মামলার তদন্ত চলাকালে রুনির কথিত বন্ধু তানভীর রহমান, বাড়ির নিরাপত্তকর্মী এনাম আহমেদ ওরফে হুমায়ুন কবির, রফিকুল ইসলাম, বকুল মিয়া, মিন্টু ওরফে বারগিরা মিন্টু ওরফে মাসুম মিন্টু, কামরুল হাসান অরুন, পলাশ রুদ্র পাল ও আবু সাঈদ গ্রেপ্তার হয়েছেন। এদের মধ্যে তানভীর ও পলাশ জামিনে। বাকিরা কারাগারে। মামলা না চললেও বা তারা দোষী কি না, এই বিষয়টি প্রমাণ না হলেও মুক্তি পাচ্ছেন না কেউ।

মামলার বাদী রুনির ভাই নওশের আলী রোমান ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পরিবর্তন হওয়ায় দুই থেকে তিন মাস আগে একবার আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল। এরপর আর কোনো খোঁজখবর নেই। মেঘ এখন আমাদের সঙ্গেই থাকে। সে এখন গুলশানের ডিআইটি নামের একটি ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের ষষ্ঠ শ্রেণিতে পরে। এই ঘটনা নিয়ে মেঘও এখন তেমন কিছুই বলে না।’

মামলার প্রথম তদন্ত কর্মকর্তা ছিলেন শেরেবাংলা নগর থানার এক উপ-পরিদর্শক (এসআই)। চার দিন পর তা ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) কাছে হস্তান্তর করা হয়। দুই মাসেরও বেশি সময় তদন্তেও রহস্য উদ্ঘাটনে ব্যর্থ হওয়ার পর হস্তক্ষেপ করে হাইকোর্ট। ২০১২ সালের ১৮ এপ্রিল মামলাটির তদন্ত র‌্যাবের কাছে হস্তান্তর করে।

২০১৪ সাল থেকে র‌্যাব আদালতে মামলার অগ্রগতি প্রতিবেদন দিতে শুরু করে। ওই প্রতিবেদনে সাগর-রুনি হত্যার পর কবর থেকে তাদের মরদেহ তুলে ডিএনএর নমুনা সংগ্রহ করেছিল র‌্যাব। পরে তা যুক্তরাষ্ট্রে পাঠানো পর থেকে প্রতিবেদন আসে তাতে দুজন অজ্ঞাত ব্যক্তির উপস্থিতি টের পাওয়া যায়। কিন্তু তাদের ডিএনএর সঙ্গে গ্রেপ্তার কারও ডিএনএর মিল খুঁজে পাওয়া যায়নি।

নিহত দম্পতির বাসা থেকে খোয়া যাওয়া ল্যাপটপ নিয়েও আছে রহস্য। সেখানে কিছু ছিল কি না, থাকলে সেটা কী, তা নিয়েও আছে নানা প্রশ্ন। কিন্তু এই রহস্যের কুলকিনারা হয়নি। সেই ল্যাপটপ আর খুঁজে পাওয়া যায়নি।

ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি আবু জাফর সূর্য ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘সাগর-রুনি হত্যার সাত বছর পার হচ্ছে। এখন পর্যন্ত এই মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দেওয়া হয়নি। এটা সাংবাদিক হিসেবে সাগর-রুনির সন্তানের কাছে আমাদের দায় তৈরি হয়েছে। আর রাষ্ট্রের দায়িত্ব হলো যেকোনো নাগরিকের হত্যার বিচার দ্রুত শেষ করা।’

‘চাঞ্চল্যকর এই হত্যার ঘটনায় ৬২ বার সময় নিয়ে র‌্যাব তদন্ত শেষ করতে পারেনি এটা র‌্যাবের ব্যর্থতা। অনেকক্ষেত্রে র‌্যাব সফল হলেও এই ঘটনায় র‌্যাব ব্যর্থ। আমাদের মনে হয় র‌্যাবের সদিচ্ছার অভাব।’

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা র‌্যাবের সহকারী পুলিশ সুপার শহিদার রহমানের মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি ফোনটি রিসিভ করেননি। পরে র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার মুফতি মাহমুদ খানের সরকারি মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে ফোনটি ধরেন একই বিভাগের উপপরিচালক মেজর রইছুল আযম মনি। তিনি ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘এটা একটি স্পর্শকাতর বিষয়। তদন্ত চলছে এখন বলার মতো কিছু নেই।’

সংবাদটি শেয়ার করুন

জাতীয় বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

জাতীয় এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :