উপজেলাভিত্তিক মহাপরিকল্পনা চান প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশ | ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ১৩:৪৫ | আপডেট: ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ১৭:০৪

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
ফাইল ছবি

উপজেলা পর্যায়ে আধুনিক নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত মহাপরিকল্পনা তৈরির নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বলেছেন, গ্রাম এলাকায় সুপেয় পানি, স্যানিটেশন, জনস্বাস্থ্য এবং উন্নতমানের সড়কের ব্যবস্থা থাকতে হবে।

রবিবার সকালে সচিবালয়ে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় পরিদর্শনে এসে এই নির্দেশ দেন সরকার প্রধান।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ইতিমধ্যে আমি একটা নির্দেশ দিয়েছিলাম, সেটা সেভাবে কার্যকর হয়নি-উপজেলায় একটা মাস্টার প্লান করে দেয়া। এখন কারও টাকা থাকলেই ধানি জমি নষ্ট করে দালান তুলছে। কোনো হিসেব-নিকেশ নেই। এখন থেকে এ বিষয়ে আমরা যদি একটা নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা করি... কোথাও বসতবাড়ি হবে যেখানে ভিটেবাড়ি আছে সেটা আলাদা কথা, কিন্তু চট করে ফসলি জমি নিয়ে যখন বাড়িঘর করে ফেলে...।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এখন দেখা যাচ্ছে যে, যেখান থেকে দাবি করছে সেখানে রাস্তা হচ্ছে। সেটা না করে আমরা যদি এটা পরিকল্পিতভাবে করতে পারি, তবে বেশি মানুষ এটার সুবিধা পাবে। যেহেতু প্রচুর রাস্তা হয়ে গেছে আমাদের কিছু করার নেই, সবচেয়ে মুশকিল হচ্ছে রাস্তাগুলো রক্ষণাবেক্ষণের কোনো ব্যবস্থা নেই। রক্ষণাবেক্ষণের ব্যবস্থা না থাকলে এক সময় সেই রাস্তা আর কাজে লাগে না। এ জন্য বলেছি, আমরা যদি তৃণমূল পর্যায়ে একটা মাস্টার প্ল্যান করে দিই তবে এখনও যেটুকু সময় আছে আমরা অনেক দ্রুত উন্নত করতে পারব।’

ক্ষমতা বিকেন্দ্রীকরণের মাধ্যমে স্থানীয় সরকারকে আরও শক্তিশালী করা হবে জানিয়ে আগামীতে জেলাভিত্তিক ধারণা নিয়ে মূল বাজেট করার কথাও জানান প্রধানমন্ত্রী।

আওয়ামী লীগের ১০ বছরে দেশ অনেক দূর এগিয়ে গেছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘বিশ্বে বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের রোল মডেল।’

'দীর্ঘদিন পর আওয়ামী লীগ সরকারে এসে জনগণের জন্য কাজ শুরু করে। উন্নয়নের জন্য সঠিক পরিকল্পনা প্রণয়ন করে। আর সে কারণেই আজ দেশ এগিয়ে গেছে।’

দেশকে উন্নত-সমৃদ্ধিশীল করতে সরকারি কর্মকর্তাদের নিষ্ঠা, সততা ও আন্তরিকতার সঙ্গে আরও বেশি পরিশ্রম করারও আহ্বান প্রধানমন্ত্রী।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘তৃতীয়বারের মতো এসে এটুকু সান্ত¡না পেলাম যে আমরা কিছু কাজ করার সুযোগ পেলাম। তাই বাজেট প্রণয়নের সময় লক্ষ্য রাখতে হবে আমরা মানুষের কাছে কীভাবে পৌঁছাতে পারি।’

আগামীতেও কেন্দ্রীয়ভাবে বাজেট প্রণয়ন করা হবে জানিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘কিন্তু এরপর আমি চাচ্ছি যে, দায়িত্ব দিয়ে দেব আমাদের প্রতিটি জেলায়। ওই অঞ্চলের কী চাহিদা, কীভাবে মানুষের কাছে সেবা পৌঁছাতে পারে, তাদের কাছ থেকে মতামত ও পরিকল্পনা আমরা নেব। এভাবে পর্যায়ক্রমে প্রত্যেকটা স্তর থেকে আমরা বাজেট কীভাবে হবে সেই ধারণাটা নিয়ে আমরা বাজেটা তৈরি করব। যাতে প্রতিটি পয়সা মানুষের কল্যাণে কাজে লাগে। সেজন্য চিন্তা-ভাবনা আমাদের আছে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা হচ্ছে ক্ষমতাকে বিকেন্দ্রীকরণ করে স্থানীয় সরকারকে আরও শক্তিশালী করা, যাতে তারা নিজ নিজ এলাকার উন্নয়নে আরও বেশি মনোনিবেশ করতে পারে ও অবদান রাখতে পারে। বিকেন্দ্রীকরণ ছাড়া উন্নয়নও টেকসই হবে না। যারা অবৈধভাবে সংবিধান লঙ্ঘন করে বারবার ক্ষমতায় এসেছিল তাদের মধ্যে দেশগড়ার চেতনটাই ছিল না। এর ফলে দেশটা অনেক পিছিয়ে ছিল বলতে গেলে।’

এখন আমাদের কাজ হচ্ছে বাংলাদেশকে উন্নত দেশ হিসেবে গড়ে তোলা বলে উল্লেখ করেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘আমরা ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত যতটুকু কাজ এগিয়ে ছিলাম, মাঝখানে সাত বছরে আমরা ছিলাম না। এ সময়ে অনেক কিছু নষ্ট হয়ে যায়। ২০০৯ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত সময় হাতে পেয়েছিলাম বলে অনেকগুলো কাজ করতে পেরেছি, আজকে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে উন্নীত হয়েছে।’

স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের গুরুত্বের বিষয়টি উঠে আসে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে। বলেন, ‘অনেকগুলো কাজ রয়ে গেছে যেগুলো আমাদের করতে হবে। আমি সব সময় চিন্তা করেছি কীভাবে মানুষের কাছে যাওয়া যায় মানুষের কাজটা করা যায়। এই মন্ত্রণালয়ের কাজ হচ্ছে সুপেয় পানির নিশ্চয়তা দেয়া। স্যানিটেশনের ব্যবস্থা করা। সেই সঙ্গে সঙ্গে আবার রাস্তাগুলোকেও উন্নত করতে হয়। বহুমুখী কাজ, আবার জনস্বাস্থ্যের দিকেও গুরুত্ব দেয়া। আমি মনে করি যতগুলো মন্ত্রণালয় আছে এই মন্ত্রণালয়টা হচ্ছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়।’

সকাল ১০টার দিকে সচিবালয়ে আসলে প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানান স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী তাজুল ইসলাম। এ সময় প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য, স্থানীয় সরকার সচিব এস এম গোলাম ফারুক, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় সচিব কামাল উদ্দিন তালুকদারসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

(ঢাকাটাইমস/১০ফেব্রুয়ারি/এমএম/জেবি)