ঐতিহাসিক উপন্যাস লেখার ঝুঁকি নিয়েছেন মোস্তফা কামাল

প্রকাশ | ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ১৬:৫৪ | আপডেট: ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ১৭:০৯

নিজস্ব প্রতিবেদক
ঢাকাটাইমস

ঐতিহাসিক উপন্যাস লেখার ঝুঁকি অনেক। কারণ চরিত্রের পাশাপাশি লেখককে সময়ের প্রতি সুবিচার করতে হয়। চরিত্রের মূর্ত ঘটনার সাথে লেখককে সময়ের মতো বিমূর্ত সংবেদের রসায়ন ঘটাতে হয়। এই দুই বিরীতার্থক প্রপঞ্চের সমন্বয় ঘটিয়ে ফিকশন রচনা করা বড়ই কঠিন ব্যপার। সময়কে তার জায়গায় রেখে এবং সময়ের চারিত্রকে বিশ্বস্থ রেখে কাল্পনিক চরিত্র চিত্রণ যতটা সহজÑসময়কে তার জায়গায় রেখে সময়ের বাস্তব চরিত্রকে চিত্রিত করা অনেক কঠিন। কারণ লেখক লিখতে বসেছেন উপন্যাস। যার একটি প্রধান উপাদান কল্পনা। কিন্তু তাঁকে কাজ করতে হচ্ছে বাস্তব সময় এবং বাস্তব চরিত্র নিয়ে। তাই কল্পনা শক্তিকে পাশ কাটিয়ে বাস্তব চরিত্র চিত্রায়ণের মাধ্যমে উপন্যাস লেখা লেখকের শক্তিমত্তার পরিচয় বহন করে বৈকি।

জনপ্রিয় লেখক মোস্তফা কামাল দ্বিতীয় পথটি বেছে নিয়েছেন। সেই পথ নির্মাণে যে প্রয়াস তিনি উপন্যাসের মোড়কে হাজির করেছেন তার নাম ‘অগ্নিমানুষ’। চলতি বইমেলায় বইটি প্রকাশিত হয়েছে।

আমরা সকলেই জানি এই বামণের দেশে উঁচু দরের মানুষ নিতান্তই হাতে গোনা। তš§ধ্যে যে নামটি সবার আগে এবং অধিক উচ্চতায় হাজির হয় তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তিনি এই উপন্যাসের প্রধান চরিত্র।

যে উপন্যাসের প্রধান চরিত্র হয় বঙ্গবন্ধু সে-উপন্যাসের প্রাথমিক ভূমিকা প্রদান নিরর্থক। তবে পাঠকের জ্ঞাতার্থে এটুকু বলাও প্রয়োজন যে এই উপন্যাসখানি জনপ্রিয লেখক মোস্তফা কামালের তিন পর্বের উপন্যাসের শেষ পর্ব। আগের দুটি উপন্যাস অগ্নিকন্যা এবং অগ্নিপুরুষ।

১৯৪৭কে যতটা স্বাধীনতা বলা হয়েছিল পঞ্চাশের দশকে ক্রমেই সেই স্বাধীনতা আসলে পরিচিতি পায় দেশভাগ হিসেবে। কারণ প্রকৃত স্বাধীনতার সাধ ওই ১৯৪৭ দিতে পারেনি। ফলে প্রকৃত স্বাধীনতার স্পৃহা দিনকে দিন দানা বাঁধতে থাকে। এবং ক্রমশঃ এই স্পৃহা আন্দোলনের রূপ পরিগ্রহ করে। এই আন্দোলন এক পর্যায়ে সশস্ত্র যুদ্ধের রূপ নেয়। এবং ক্রমশঃ এই ঘটনা পরম্পরায় প্রকৃত নায়ক হয়ে ওঠেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তার সাথে থাকেন আরো নেতা। হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, এ. কে. ফজলুল হক, আবদুল হামিদ খান ভাসানী, তাজউদ্দীন আহমদ, সৈয়দ নজরুল ইসলাম, মনসুর আলী, কামারুজ্জামান প্রমূখ। তাঁদের সাথে আরো থাকেন এদেশের অসংখ্য স্বাধীনতাকামী মানুষ।

বিপরীত দিকে খলনায়কের অভাব নেই। খাজা নাজিমুদ্দীন, লিয়াকত আলী খান, আইয়ুব খান, ইয়াহিয়া খান প্রমূখ। পাকিস্তানি শাসনে শাসকের রদবদল হয়। শোষণের হেরফের হয় না। বরং শাসকের রদবদলের সাথে নতুনতর নির্যাতন ও আন্দোলন প্রতিহত করবার প্রয়াস লক্ষ করা যায়।

কিন্তু যে আন্দোলনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান থাকেন তাকে দমিয়ে রাখা যায় না। ফলে আন্দোলন যেমন নতুনতর রূপ পায় তেমনি পাকিস্তানী বাহিনীর চক্ষুশূল হতে থাকেন বঙ্গবন্ধু। নিত্য নতুন ফন্দি আঁটেন পাকিস্তানি শাসক কুল। কিন্তু কোনোকিছুতেই কিছু হয় না। ০৭ মার্চে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে ফেলেন। গোলটেবিল ব্যর্থ হয়। শুরু হয়ে যায় সশস্ত্র সংগ্রাম। বঙ্গবন্ধুকে বন্দী করে নিয়ে যাওয়া হয় পাকিস্তানে।

একসময় দেশ স্বাধীন হয়। অনেক চরাই উতরাই পেরিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশের মাটিতে পা রাখেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।

মোটাদাগে এ হলো ইতিহাস, যা সর্বজন জ্ঞাত। কিন্তু ইতিহাসের ভেতরে থাকে অন্তরঙ্গ আরেক ইতিহাস। আমরা যারা সাধারণ মানুষ তারা ইতিহাসের বাহিরের অংশটুকু ঘটনা হিসেবে দেখি। কিন্তু লেখক দেখেন অন্য দৃষ্টিভঙ্গি থেকে। আমরা যেখানে ঘটনা ও তার ফলাফল দেখি লেখক তখন বলতে থাকেন এইসব ঘটনার নেপথ্যের কারিগরদের পরিকল্পনার কথা। ফলে ইতিহাসের ভেতরের ইতিহাস জানা হয়। লেখক এই কাজটিই করেন। ফলে গ্রন্থটি নিছক ইতিহাসের গ্রন্থ হয়ে যায় না। কিন্তু ইতিহাসের মূল উপাদানকে সঙ্গী করে হয়ে উঠে উপন্যাস।

এইসব আলোচনা গ্রন্থটি পাঠের বিকল্প হতে পারে না। তবে এটুকু বলতেই হয় ঐতিহাসিক উপাদানের সমন্বয়ে লেখক যে রূপ-কাঠামো দান করেন তা নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়।

অগ্নিমানুষ : মোস্তফা কামাল। প্রচ্ছদ ঃ ধ্রুব এষ। প্রকাশক : পার্ল পাবলিকেশন্স। মূল্য: ৫০০ টাকা।

ঢাকাটাইমস/১০ফেব্রুয়ারি