ঢাকা দক্ষিণে দিনে ঘাটতি ২৪ লাখ টাকা

প্রকাশ | ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ০৮:৩৪ | আপডেট: ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ১৫:৫৪

রেজা করিম

ঢাকা সিটি করপোরেশন ভেঙে দুটি নগর কর্তৃপক্ষ করার পর থেকেই অর্থ সংকটে ধুঁকছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। গত সাত বছরেও ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি সংস্থাটি। আয়ের তুলনায় ব্যয়ের পরিধি বেড়ে যাওয়ায় বছর বছর বাড়ছে ঘাটতি। আয়-ব্যয়ের হিসাব পর্যালোচনায় দেখা গেছে, দিনে ২৪ লাখ টাকা ঘাটতি দিয়ে চলছে সংস্থাটি। আর আর্থিক দুরাবস্থার প্রভাব পড়েছে সেবার কার্যক্রমে।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসির) তথ্যমতে জুলাই-২০১৮ থেকে অক্টোবর-২০১৮ পর্যন্ত সংস্থাটি বিভিন্ন উৎস থেকে আয় করেছে ১৯৫ কোটি ৭১ লাখ টাকা। আয়ের বিপরীতে ওই চার মাসে ব্যয় করে ফেলেছে ২২৫ কোটি ২৭ লাখ টাকা।

অর্থাৎ গত চার মাসে সংস্থাটির ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ২৯ কোটি ৫৬ লাখ টাকা। সে অনুযায়ী ব্যয়ের তুলনায় আয় করার ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানটি বছরে ৮৮ কোটি ৬৮ লাখ টাকা ঘাটতি দিয়ে যাচ্ছে। এ হিসাবে প্রতি মাসে ঘাটতি সাত কোটি ৩৯ লাখ টাকা আর দিনপ্রতি ঘাটতি ২৪ লাখ টাকা।

অর্থ সংকট প্রসঙ্গে মেয়র সাঈদ খোকন বলেন, ‘ঢাকা সিটি করপোরেশন (ডিসিসি) বিভাজনের সময়ই ডিএসসিসি বৈষম্যের শিকার হয়েছে। বিভাজনের পরে রাজস্ব আয়ের ৪০ ভাগ পায় ডিএসসিসি ও ৬০ ভাগ পায় ডিএনসিসি। এরপর থেকে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে সংস্থাটি। অর্থ সংকটের কারণে যথাযথভাবে নাগরিক সেব দেওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে।’

মেয়রের অভিযোগ এবং সংস্থাটির আর্থিক অসঙ্গতি প্রসঙ্গে নগরবিদ নজরুল ইসলাম ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘মেয়রের এই অভিযোগ অমূলক নয়। বিভাজনের কারণে সংস্থাটির আয় কমে গেছে। সঙ্গতকারণেই এর প্রভাব পড়ছে নগরসেবার কার্যক্রমে। কারণ কোনো সেবা সংস্থা এভাবে আর্থিকভাবে দুর্বল থাকলে তার পক্ষে নাগরিককে যথাযথ সেবা দেওয়া কঠিনই বটে। এ বিষয়ে সরকারের পাশাপাশি সংস্থাকেও দায়িত্বশীল ও যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে।’

গত জুলাইয়ে নগর কর্তৃপক্ষ মোট তিন হাজার ৫৯৮ কোটি ৭৫ লাখ টাকার বাজেট দেয়। রাজস্ব খাতে আয়ের বড় অংশ ধরা হয়েছে হোল্ডিং কর থেকে। এ খাত থেকে ৩৩০ কোটি টাকা আয়ের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। লক্ষ্যমাত্রা পূরণে প্রতি মাসে ২৭ কোটি ৫০ লাখ টাকা আসার কথা থাকলেও বর্তমানে প্রতি মাসে গড়ে এ খাত থেকে রাজস্ব আসছে ২০ কোটি টাকা।

বাজার সালামি থেকে রাজস্ব আয়ের ক্ষেত্রে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে পাঁচ গুণ পিছিয়ে রয়েছে সংস্থাটি। প্রতি মাসে ২৫ কোটি ৪১ লাখ টাকা আসার কথা থাকলেও বর্তমানে এ খাত থেকে মাসে গড়ে পাঁচ কোটি ৯০ লাখ টাকা পাওয়া যাচ্ছে। একইভাবে সম্পত্তি হস্তান্তর কর থেকে আট কোটির জায়গায় প্রতি মাসে মিলছে পাঁচ কোটিরও কম অর্থ।

ডিএসসিসির প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা ইউসুফ আলী সরদার ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘২৯ বছর ধরে হোল্ডিং ট্যাক্স মূল্যায়ন হচ্ছে না। এর ফলে বিশাল অংকের রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হয়ে আসছে সংস্থা। এ বিষয়ে প্রক্রিয়া চলছে। বিষয়টি মূল্যায়নের ব্যবস্থা করা গেলে ডিএসসিসির রাজস্ব অনেক গুণে বেড়ে যাবে বলে আশা করছি।’

নতুন বাজার খুলে দেওয়ার প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে জানিয়ে এ কর্মকর্তা বলেন, ‘আগামী মার্চেই দুটো বাজার ওপেন করার কথা রয়েছে। এটা করা গেলে বাজার সালামি খাতে রাজস্ব আয়ের পরিমাণ বেড়ে যাবে।’

ডিএসসিসির আয়ের বড় অংশ আসার কথা সরকারি ও বৈদেশিক উৎস থেকে। এ খাত থেকে দুই হাজার ৫৫৮ কোটি ৪৮ লাখ টাকা পাওয়ার কথা সংস্থাটির। কিন্তু জুলাই-১৮ থেকে অক্টোর-১৮ পর্যন্ত সময়ে সরকারি অনুদান (থোক) ও সরকারি বিশেষ অনুদান হিসাবে একটি টাকাও পায়নি ডিএসসিসি। তবে এ সময়ে মেট্রোরেলসহ অন্যান্য কাজে ১৪ কোটি টাকা পাওয়ার কথা জানিয়েছে সংস্থাটি।

গত কয়েক মাসে ডিএসসিসির আয়-ব্যয়ের হিসাব পর্যালোচনা করে দেখা গেছে সংস্থাটির মাসিক গড় আয় ৫০ কোটিরও কম। অথচ প্রতি মাসে শুধু কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতনই লাগে ৩০ কোটি টাকার মতো। এ অবস্থায় নগরের উন্নয়ন দূরে থাক, ঘর সামলাতেই হিমশিম খেতে হচ্ছে সংস্থাটিকে। সংস্থার এমন নাজুক অবস্থার কথা তুলে ধরে খোদ কর্মকর্তা-কর্মচারীরাই প্রশ্ন তুলেছেন, যা আয় হয়, তা দিয়ে নিজেদের বেতন-ভাতা ও অফিস পরিচালনাই ঠিকভাবে করা যাচ্ছে না। এ অবস্থায় উন্নয়ন কীভাবে হবে?

ডিএসসিসির একাধিক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, আয়ের তুলনায় ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় দেনদরবার করে, সরকারের কাছ থেকে থোক বরাদ্দ এনে কোনোমতে টিকে থাকার চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে। নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় আয়ের যেসব খাত রয়েছে, সেসব খাত থেকে আশানুরূপ ফল আসছে না। মামলার কারণে অনেক খাত থেকে আয় করা যাচ্ছে না। টাকার অভাবে ঠিকাদারদের বিল দেওয়া যাচ্ছে না সময়মতো। এ নিয়ে ঠিকাদারদের সঙ্গে ডিএসসিসির বাকবিত-া নিয়মিত ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে।

ডিএসসিসির ঘাটতি মোকাবেলায় করণীয় প্রসঙ্গে অধ্যাপক নজরুল ইসলাম বলেন, ‘সেবা সংস্থার কাজের গতি বাড়াতে সরকারের পক্ষ থেকে সহযোগিতা করা দরকার। সে বিবেচনায় ডিএসসিসির আর্থিক অসঙ্গতি দূর করতে সরকারকে সহযোগিতা করতে হবে। একই সঙ্গে ঘাটতি মোকাবেলায় ডিএসসিসিকেও নিজস্ব আয়ের উৎস বাড়াতে হবে।’