বই বয়ে আয়

প্রকাশ | ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ০৮:৪০

আল আমিন রাজু

বিশ্বের প্রতিটি দেশের মানুষের জন্য বই শিক্ষা উপকরণ। আবার কারও ক্ষেত্রে আত্মার খোরাক। তবে ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে এই বই কারও ক্ষেত্রে জ্ঞানের পথ হতে পারেনি। তাদের জন্য জ্ঞানের ভা-ারটি হয়ে উঠেছে বোঝা। আর এই বোঝা বয়েই তাদের জীবিকা আসে।

সারা বছর অন্য কাজ করলেও ফেব্রুয়ারি মাসজুড়ে অমর একুশে গ্রন্থমেলা কারও জন্য হয়ে ওঠে আয়ের উৎস। লেখক, প্রকাশক বা কোনো ব্যবসায়ীদের মত না হলেও বইয়ের বোঝা টেনে আয় হয় একদল শিশুর।

বই মেলা-২০১৯ এর প্রথম দিন থেকেও মেলা প্রাঙ্গণে দেখা মিলছে এমন অনেক শিশুর। তারা টাকার বিনিময়ে বই বয়ে নিয়ে পৌঁছে দিচ্ছে স্টল থেকে স্টলে। বই জ্ঞানের এক বিশাল সমুদ্র- কথাটি তাদের জানা নেই। তারা কেবল জানে, পণ্য স্থানান্তর করে দিতে পারলে তারা টাকা পাবে।

শিশুশ্রমিকরা জানায়, সারা বছর ঢাকার বিভিন্ন বাজার, বাসস্ট্যান্ড, রেলস্টেশনসহ বিভিন্ন জায়গায় কুলি বা ফুল বিক্রির কাজ করলেও ফেব্রুয়ারি মাসে তাদের ঠিকানা বাংলা একাডেমির বইমেলা প্রাঙ্গণ। এখানে আসার কারণ, কষ্টটা কিছুটা বেশি হলেও আছে কাজ পাওয়ার নিশ্চয়তা, আয়ও তুলনামূলকভাবে বেশি।

তবে সারাদিনের এ কঠোর পরিশ্রম, বিলাসী জীবনযাপনের জন্য নয়, শুধুমাত্র পরিবারের সদস্যদের মুখে দু’মুঠো খাবার তুলে দিতে।

মেলা উপলক্ষে বিভিন্ন প্রকাশনী থেকে লেখকদের নতুন বই প্রেস থেকে মেলায় নিয়ে আসেন প্রকাশকরা। কিন্তু দুটি প্রবেশ গেট থেকে মেলাপ্রাঙ্গণ পর্যন্ত গাড়ি-রিকশা প্রবেশ নিষিদ্ধ থাকায় আয়ের সুযোগ হয়েছে কাজের খোঁজে আসা ওই শিশু-কিশোরদের।

বইমেলায় আসা নতুন বই বহনের কাজ করা কিশোর রাসেল ঢাকা টাইমসকে বলে, ‘বছরের অন্য সময় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ফুল বিক্রি করি। বইমেলার সময়ে আমি এই কাজ করি। গাড়ি বানাইতে আমার ৮০০ ট্যাকা খরচ হইছে। বেয়্যারিং কিনছি, তারপরে কাঠ কিনে আামি এই গাড়ি বানাইছি। দিনে ৫০০ থেকে ৬০০ ট্যাকা আয় হয়। এইডা দিয়ে বাসায় খাওন জোগাড় হয়।’

বইমেলার দুই গেট এবং মেলাপ্রাঙ্গণ ঘুরে বই বহন করছে এমন আরও ১৫ থেকে ২০ জন শিশু-কিশোরের দেখা পাওয়া যায়।