স্বেচ্ছাশ্রমে প্রস্তুত হচ্ছে ইজতেমা মাঠ
প্রকাশ | ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ০৮:৫৩
আগামী শুক্রবার থেকে টঙ্গীর তুরাগ নদের তীরে শুরু হচ্ছে এবারের বিশ্ব ইজতেমা। তাবলিগ জামাতের এই মহাসম্মিলনে দেশ-বিদেশের লাখ লাখ মুসল্লি অংশ নেবেন। এবার ইজতেমা হবে চার দিন। এতে তাবলিগে বিবদমান দুই পক্ষ ভাগাভাগি করে নেতৃত্ব দেবে।
তুরাগ তীরে এখন চলছে ইজতেমার মাঠ প্রস্তুতির কাজ। স্বেচ্ছাশ্রমে কয়েক হাজার মানুষ এখানে রাত-দিন কাজ করছেন। একমাত্র আল্লাহকে সন্তুষ্ট করা ছাড়া তাদের আর কোনো চাওয়া নেই। তাদের বিশ্বাস, লাখ লাখ মুমিনের একটু আরামের ব্যবস্থা করে দেয়ার এই কাজে আল্লাহর সন্তুষ্টি মিলবে।
ইজতেমা ময়দানে প্রতি বছর কয়েক মাস আগ থেকে হাজার হাজার স্বেচ্ছাসেবক কাজ করেন। এবারও ব্যতিক্রম হয়নি। তাবলিগের দ্বন্দ্বের কারণে মাঝে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটলেও সেই রেষ কাটিয়ে এখন ইজতেমা মাঠ প্রস্তুতের কাজ চলছে সৌহার্দ্যরে ভিত্তিতে। এখানে তাবলিগের নিয়মিত সাথী, বিভিন্ন মাদ্রাসার শিক্ষার্থী, আলেম এবং সব শ্রেণি-পেশার মানুষ কাজ করছেন।
ইজতেমার আয়োজকরা জানান, এবার ইজতেমা নিয়ে কিছুটা অনিশ্চয়তা থাকায় মাঠ প্রস্তুতের কাজ শুরু করতে দেরি হয়। এজন্য এখন তাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। তবে ইতিমধ্যে ৫০ ভাগ কাজ শেষ হয়ে গেছে। ১৫ ফেব্রুয়ারির আগেই মাঠের পুরো কাজ শেষ হবে বলে আশা করছেন তারা।
রবিবার সরেজমিনে দেখা যায়, ইজতেমা মাঠে কাজ চলছে পুরোদমে। স্কুল-কলেজ ও মাদ্রাসার ছাত্রসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ স্বেচ্ছাশ্রমে ময়দানে কাজ করছেন। প্যান্ডেল তৈরি, রাস্তা মেরামত, মাইক টানানো, টয়লেট পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন, ময়দানের আগাছা পরিষ্কারের কাজ করছেন আগত মুসল্লিরা। ইতিমধ্যে ময়দানের প্রায় ৫০ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে বলে বিশ্ব ইজতেমা আয়োজক কমিটি সূত্রে জানা গেছে।
ময়দানের পশ্চিম পাশে চলছে মঞ্চ তৈরির কাজ। বিদেশি মেহমানদের জন্য তৈরি হচ্ছে পাকা টয়লেট। বিদেশিদের জন্য সবকিছু উন্নত ব্যবস্থাপনায় হচ্ছে বলে জানান আয়োজকরা। মুসল্লিদের উচ্ছিষ্ট ময়লা ফেলার জন্য ময়দানের চারপাশে রিংয়ের তৈরি পোর্টেবল ডাস্টবিন স্থাপন করা হচ্ছে।
টঙ্গীর নতুনবাজার এলাকার ব্যবসায়ী তানভীর ইসলাম আসলাম ২৫ জনের একটি দল নিয়ে ময়দানে কাজ করতে এসেছেন। তিনি বলেন, আল্লাহর মেহমানরা ইবাদত-বন্দেগি করতে আসবেন। তারা যেন সুন্দরভাবে ইবাদত বন্দেগি করতে পারেন সেই দিক খেয়াল রেখে ময়দানের কাজ করে যাচ্ছি। প্রতিবছরই আমরা বিশ্ব ইজতেমার মাঠ তৈরির কাজ করে থাকি।
বিশ্ব ইজতেমা ময়দানের সাফাই (পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন) কমিটির জিম্মাদার ফকির আতাউর রহমান জানান, ইতিমধ্যে ময়দানের প্রায় ৫০ ভাগের মতো কাজ সম্পন্ন হয়েছে। শুক্রবার থেকে ইজতেমা আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হলেও বৃহস্পতিবার বাদ ফজর থেকেই শুরু হবে আম বয়ান।
বিশ্ব ইজতেমা ময়দানের শীর্ষ মুরুব্বি ও শূরা সদস্য মাওলানা মেজবাহ উদ্দিন ঢাকা টাইমসকে বলেন, ময়দানের প্রস্তুতিকাজ শেষ করতে হাতে সময় খুবই কম। তাই ১৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যে ময়দানের প্রস্তুতির কাজ সম্পন্ন করতে আমরা এখন যুদ্ধাবস্থায় আছি। আমার সঙ্গে মাওলানা মাহফুজুল ইসলাম, মাওলানা হাসনাত ও আবুল হাশেম রয়েছেন। আমরা চারজন শূরা সদস্য মাশোয়ারা করে ময়দানের প্রস্তুতিকাজ করছি। আশা করি, আগামী ১৫ তারিখের আগেই প্রস্তুতিকাজ শেষ হবে ইনশাআল্লাহ।
তাবলিগ জামাত নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে বছর দুয়েক ধরে বিরোধ চলে আসছে। দিল্লির মাওলানা সাদ কান্ধলভির কিছু বক্তব্যকে কেন্দ্র করে তাবলিগ জামাতে বিভক্তি আসে। গত বছর মাওলানা সাদ ঢাকায় এলেও বিরোধীদের প্রতিবাদের মুখে মাঠে যেতে পারেননি। এবারের ইজতেমা আয়োজনকে কেন্দ্র করে গত ১ ডিসেম্বর টঙ্গীতে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয়। এতে দুজন নিহত এবং তিন শতাধিক আহত হন। এতে এবারের ইজতেমা অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ে। নতুন সরকার ক্ষমতায় আসার পর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও ধর্ম প্রতিমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে দুই পক্ষকে নিয়ে ইজতেমার তারিখ ঘোষণা করা হয়। তবে একসঙ্গে ইজতেমা হলেও দুই পক্ষের মধ্যে বিভক্তি এখনো রয়ে গেছে। ফলে এবার চার দিনের ইজতেমা দুই দিন দুই দিন করে নেতৃত্ব দেবে দুই পক্ষ।