সদস্যদের বেতন-রেশন তুলে খাচ্ছেন আনসার পিসি হারুন

প্রকাশ | ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ১৪:২৬

চট্টগ্রাম ব্যুরো, ঢাকাটাইমস

চাকরি ছেড়ে দেওয়া এক আনসার সদস্যের পদত্যাগপত্র জমা ছিল তার কাছে। ওই পদত্যাগপত্র ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে চার মাসেও পাঠাননি চট্টগ্রাম মহানগর দক্ষিণ জোনের সিইপিজেড আনসার ক্যাম্পের ক্যাম্প কমান্ডার (পিসি) মো. হারুন। বরং, পদত্যাগী ওই সদস্যের নামে বেতন-ভাতা ও রেশন তুলে আত্মসাৎ করে চলছিলেন।

পিসি হারুনের বিরুদ্ধে তাদেরও সরকারি বেতন-ভাতা ও রেশন আত্মসাৎসহ আরও একাধিক অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ তুলেছেন সিইপিজেড আনসার ক্যাম্পে কর্মরত আরও নয়জন।

তবে তদন্ত শুরু করে পিসি হারুনের অবৈধ বিলগুলো আটকে দিয়েছে সংস্থাটি। তাকে প্রথম ও শেষবারের মতো হুশিয়ারও করা হয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ক্যাম্পের সাবেক এক আনসার সদস্যের অভিযোগ, তিনি পিসি হারুনের কাছে পদত্যাগপত্র দিয়ে চাকরি ছেড়ে চলে যান। কিন্তু হারুন পদত্যাগপত্রটি জমা না দিয়ে তার চারমাসের বেতন-ভাতা ও রেশন উত্তোলন করে আত্মসাৎ করেছেন। এখন বার বার ফোন করলেও হারুন তার ফোন ধরেন না। বাধ্য হয়ে ক্যাম্পের রাইটার শহিদুল্লাহকে ফোন করে জানতে চাইলে তিনিও পিসি হারুনের খোঁজ দিতে পারেননি।

সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে, ক্যাম্পটিতে কর্মরত ১০৪ আনসার সদস্য। বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর নিয়ম অনুসারে প্রতি তিন বছর পর পর ছয় মাসের জন্য বিশ্রামে (রেস্ট) যান তারা। এ ছাড়া দীর্ঘমেয়াদে ছুটি পান। বিশ্রামে বা ছুটিতে যাওয়া সদস্যদের দুই থেকে চার মাসের বেতন-ভাতা ও রেশন তুলে পিসি হারুন আত্মসাৎ করেছেন বলে দাবি অভিযোগকারী নয়জনের।

নয়জনের একজন মো. দেলোয়ার হোসেন জানান, শনিবার তিনি বিশ্রাম থেকে ক্যাম্পে ফিরে জানতে পেরেছেন, তার তিনমাসের বেতন-ভাতা ও রেশন তুলে নিয়েছেন পিসি হারুন। বাকিরাও দুই থেকে চারমাসের বেতন-ভাতা ও রেশন খুইয়েছেন।

ক্যাম্পে দায়িত্বরত নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এপিসি বলেন, এ অনিয়মের কথা প্রকাশ হওয়ার পর তদন্ত চলছে। পিসি হারুনের করা অবৈধ বিলগুলো আটকানো হয়েছে এবং প্রথম ও শেষবারের মতো তাকে হুশিয়ার করা হয়েছে।

ঘটনা পুরোপুরি না হলেও অর্ধেক সত্য বলেও মন্তব্য করেন এপিসি।

তবে অভিযোগ অস্বীকার করে সিইপিজেড ক্যাম্পের পিসি হারুন দাবি করেন, ‘বেপজা এমন একটি প্রতিষ্ঠান, যেখানে কোনো অনিয়ম করার সুযোগ নেই। আমার নামে মিথ্যাচার করা হচ্ছে।’

যে অভিযোগ উঠেছে তার তদন্ত হচ্ছে বলেও জানান এই ক্যাম্প কমান্ডার।

পিসি হারুনের বিলের কপি দেখতে চাইলে বেপজার সিকিউরিটি ম্যানেজার রবিউল খান ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘আমি সরকারি কাজ করি, কোনো ডকুমেন্ট দেওয়ার অনুমতি নেই।’

‘এখন আমি একজন সিনিয়র অফিসারের প্রটোকলে আছি, পরে কথা হবে’ বলে ফোন কেটে দেন তিনি।

বন্দর থানার দায়িত্বরত কর্মকর্তা আবদুর রশিদ বলেন, তিনি বিষয়টি জানেন না। সার্কেল অ্যাডজুট্যান্ট (সিএ) সেটি দেখভাল করছেন।

সিএ মো. টিটুল মিয়া বলেন, কর্তৃপক্ষ তদন্ত সাপেক্ষে যথাযথ ব্যবস্থা নেবেন।

টিটুল মিয়া আরও বলেন, জেলা কমান্ড্যান্ট রাজিব হোসেন দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে অনিয়ম-দুর্নীতির বিরুদ্ধে কাজ করে যাচ্ছেন। প্রধানমন্ত্রীর দুর্নীতির বিষয়ে জিরো টলারেন্সের ঘোষণা সামনে রেখে জেলা কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন তারা।

বাহিনীর নিজস্ব মনিটরিং টিম সদস্যদের কাজ তদারকিসহ অনিয়ম-দুর্নীতির বিরুদ্ধে কাজ করে। টিমের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘আমি পিসি হারুনের বিরুদ্ধে রিপোর্ট দিয়েছি, অবশ্যই এটা বিরাট অপরাধ। সিদ্ধান্ত নেওয়ার এখতিয়ার সদর দপ্তরের, তার বিরুদ্ধে সদর দপ্তরই ব্যবস্থা নেবে।’

(ঢাকাটাইমস/১১ফেব্রুয়ারি/এআর )