দুধে কীটনাশক জরিপের নির্দেশ
দেশে গাভির খোলা দুধসহ দুগ্ধজাত পণ্যে মানবস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর অনুজীব মিলেছে। তাই গরুর দুধ, দই ও গো-খাদ্যে কী পরিমাণ ব্যাক্টেরিয়া, কীটনাশক ও সিসা রয়েছে তা নিরূপণের জন্য সারাদেশে একটি জরিপ পরিচালনার নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। আগামী ১৫ দিনের মধ্যে সেই জরিপের প্রতিবেদন আদালতে জমা দিতে বলা হয়েছে।
সোমবার হাইকোর্টের বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কে এম হাফিজুল আলমের বেঞ্চ স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে রুলে এ আদেশ দেন। জরিপের প্রতিবেদন আগামী ১৫ দিনের মধ্যে জমা দিতে খাদ্যসচিব, মৎস্য ও প্রাণীসচিব, কৃষিসচিব, মন্ত্রিপরিষদ সচিব, নিরাপদ খাদ্য কর্তপক্ষের চেয়ারম্যান, কেন্দ্রীয় নিরাপদ খাদ্য ব্যবস্থাপনা সমন্বয় কমিটি এবং বিএসটিআইয়ের চেয়ারম্যানকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এছাড়া দুগ্ধজাত খাবার ভেজাল প্রতিরোধে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষসহ বিবাদীদের নিষ্ক্রিয়তা কেন বেআইনি ও অবৈধ ঘোষণা করা হবে না তাও জানতে চেয়েছে আদালত। পাশাপাশি খাদ্যে ভেজালের সঙ্গে জড়িতদের আইনের আওতায় এনে সর্বোচ্চ শাস্তি প্রদানে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না তা জানতে চাওয়া হয়েছে। চার সপ্তাহের মধ্যে এ রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে। এ বিষয়ে ৩ মার্চ পরবর্তী শুনানির দিন ঠিক করেছেন হাইকোর্ট।
জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের একটি গবেষণা প্রতিবেদনের বরাতে বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে সংবাদ প্রকাশ হয়। প্রতিবেদনের আলোকে আদালত স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে আদালত এ আদেশ দেন। দুদকের পক্ষে মামুন মাহবুব আর রাষ্ট্রপক্ষে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক শুনানিকালে আদালতে উপস্থিত ছিলেন।
আদালত বলেন, খাদ্যে ভেজাল মেশানো একটি বড় দুর্নীতি। এ ধরনের ভেজালে মানুষের কিডনি, লিভার নষ্ট হচ্ছে, ক্যানসার হচ্ছে।
কোর্ট এ ব্যাপারে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন, মানুষ এখন শুধু টাকার পেছনে ঘুরছে। দেশ ও দেশের মানুষ নিয়ে কেউ ভাবছেন না।
রবিবার সরকারের জাতীয় নিরাপদ খাদ্য গবেষণাগারের প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশে পুষ্টির অন্যতম প্রধান জোগান হিসেবে বিবেচিত গরুর দুধ বা দুগ্ধজাত খাদ্যে এবার মিলেছে মানুষের শরীরের জন্য ক্ষতিকর নানা উপাদান। জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সভাকক্ষে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রীসহ উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গরুর খোলা দুধে অণুজীবের সহনীয় মাত্রা সর্বোচ্চ ৪ থাকার কথা থাকলেও দেশে ৭ দশমিক ৬৬ পর্যন্ত পাওয়া গেছে। আফলাটক্সিনের সহনীয় মাত্রা ০ দশমিক ৫ হলেও পাওয়া গেছে ০ দশমিক ৯৯৬ পর্যন্ত। টেট্রাসাইক্লিনের মাত্রা ১০০ পর্যন্ত সহনীয় হলেও পাওয়া গেছে ৬৭১ দশমিক ১৩ পর্যন্ত, সিপ্রোফ্লোক্সাসিনের মাত্রা ১০০ পর্যন্ত সহনীয় হলেও পাওয়া গেছে ১৪৮ দশমিক ৩৬ পর্যন্ত।
আর কীটনাশকের মাত্রা ৫ পর্যন্ত সহনীয় হলেও পাওয়া গেছে ৯ দশমিক ৫০-১৬ দশমিক ২০ পর্যন্ত। এছাড়া প্যাকেটজাত দুধের ক্ষেত্রে টেট্রাসাইক্লিনের সহনীয় মাত্রা ১০০ হলেও দেশীয় প্যাকেটজাত দুধে পাওয়া গেছে ১৮৭ দশমিক ৫৮ পর্যন্ত।
আমদানিকৃত প্যাকেটজাত দুধের ক্ষেত্রে এই উপাদানের মাত্রা ৭১৭ দশমিক ৮২ পর্যন্ত পাওয়া গেছে। আর আফলাটক্সিনের সহনীয় মাত্রা ০ দশমিক ৫ হলেও পাওয়া গেছে ১ দশমিক ৯৩ পর্যন্ত।
গাভির খোলা দুধের ৯৬টি নমুনা পরীক্ষায় ৯৬ শতাংশ দুধেই রয়েছে বিভিন্ন ধরনের ক্ষতিকর অণুজীব। ১৫ শতাংশ দুধে মিলেছে মানুষের জন্য গ্রহণযোগ্য মাত্রার চেয়ে বেশি সিসা। ১৩ শতাংশে গ্রহণযোগ্য মাত্রার চেয়ে বেশি টেট্রাসাইক্লিন, ৯ শতাংশে গ্রহণযোগ্য মাত্রার চেয়ে বেশি কীটনাশক ও ৩ শতাংশে গ্রহণযোগ্য মাত্রার চেয়ে বেশি আফলাটক্সিনের প্রমাণ পাওয়া গেছে।
এছাড়া বাজারে থাকা প্যাকেটজাত দুধের ৩১টি নমুনার ৬৬ থেকে ৮০ শতাংশে বিভিন্ন অণুজীব, ৩০ শতাংশে একইভাবে মানুষের শরীরের ক্ষেত্রে গ্রহণযোগ্য মাত্রার চেয়ে বেশি মাত্রার টেট্রাসাইক্লিন, একটিতে বেশি মাত্রার সিসা, কয়েকটিতে সিপ্রোফ্লোক্সাসিন ও এনরোফ্লোক্সাসিন পাওয়া গেছে বলে ওই প্রতিবেদনে বলা হয়।
ঢাকাটাইমস/১১ফেব্রুয়ারি/ডিএম