‘বাণিজ্য মেলায়ও বিক্রি হতে পারে বই’

প্রকাশ | ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ২২:০৪

জহির রায়হান

বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনি লেখায় বিশেষ অবদানের জন্য ২০১৭ সালে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার পেয়েছেন মোশতাক আহমেদ। তিনি ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গুলশান বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার। বাংলাদেশ পুলিশে তিনিই প্রথম কর্মকর্তা যিনি এই সম্মানে ভূষিত হয়েছেন। বইমেলা প্রাঙ্গণে ঢাকাটাইমসের সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি। জানিয়েছেন এত ব্যস্ততার মধ্যেও কীভাবে নিয়মিত লেখালেখি করেন। তিনি প্রকাশকদের অনুরোধ করেছেন তারা যেন আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলায়ও প্যাভিলিয়ন নিয়ে বই বিক্রি করেন। পরামর্শ দিয়েছেন নতুন লেখকদের প্রতিও। জানিয়েছেন সায়েন্স ফিকশন কেন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে এর কারণ। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন ঢাকাটাইমসের নিজস্ব প্রতিবেদক জহির রায়হান

ঢাকাটাইমস: আপনি পেশাগত কারণে খুব ব্যস্ত এত ব্যস্ততার মধ্যে পাঠকের চাহিদা মেটাচ্ছেন প্রতি বছরই নতুন বই প্রকাশিত হচ্ছে আপনার, এটা কীভাবে সম্ভব?  

মোশতাক আহমেদ : এখন যেটা মনে হয় লেখালেখিটাই আমার প্রাণ। না লিখতে পারলে মোটেও ভালো লাগে না। প্রতিদিন সকাল ছয়টা থেকে আটটা পর্যন্ত লিখি। রুটিনমাফিক চলে। এ কারণে বইগুলো হচ্ছে, উপন্যাসগুলো হচ্ছে।  কেন জানি পাঠক পছন্দ করে এবং তারা কিনছেও। পাঠকের ভালোবাসায় বই লিখতে আমাকে আরও উৎসাহিত করে।

ঢাকাটাইমস: সায়েন্স ফিকশনের পাঠক বাড়ছে এর কী কারণ?

মোশতাক আহমেদ: এর কারণ এখন সময়টা বিজ্ঞানের। সময়টা এখন ফিকশনের। সামনে কী আসছে, এখন হচ্ছে কী, এগুলো পাঠক জানতে চাচ্ছে। মানুষ অজানাকে জানতে চায়, অদেখাকে দেখতে চায়। এজন্য যখনই সায়েন্স ফিকশন বই পাচ্ছে তারা কিনছে। আসলে তারা জানতে চাচ্ছে সামনে কী হবে। একটা গ্রহে যাচ্ছে এলিয়েন, অথবা ভিন গ্রহে যাচ্ছে, সেখানে কী হচ্ছে। রোবটের জীবনটা কেমন হবে। অথবা চিকিৎসা বিজ্ঞানে নতুন কিছু বের হচ্ছে কি না। সেই বিষয়গুলো কী। এগুলো সুন্দর করে উপস্থাপন করা সম্ভব হলে আমার মনে হয় যেকোনো ব্যক্তি সায়েন্স ফিকশন পছন্দ করবে।

সায়েন্স ফিকশন আপনাকে একটা অজানা জগতে নিয়ে যাচ্ছে। টাইমমেশিনে তিন হাজার বছর পেছনে চলে যাচ্ছে। তিন হাজার বছর আগের সময় কীভাবে বিভিন্ন সমস্যার সমাধান হতো সেটার কথা বলছে। ধারণা দিচ্ছে শত শত বছর পর কী হবে। অজানা জগতকে মানুষ জানতে চায় বলেই সায়েন্স ফিকশন মানুষের ভালো লাগে। মানুষ পড়ছে।

ঢাকাটাইমস: আপনারা যেটা লিখেন সেটা পরবর্তী সময়ে আবিষ্কাকার হয় কল্পনা সত্যি হয়ে যায় এটা কেমন লাগে?

মোশতাক আহমেদ: একজন লেখকের এটা সাফল্য। সে যেটা চিন্তা করছে সেটা বাস্তবে আসছে। আমরা বিজ্ঞানকে চিন্তা করেছিলাম সৃষ্টিশীলতার জন্য। আমাদের কল্পনা যখন সৃষ্টিশীলতা হয় এর চেয়ে বড় আনন্দের কোনো কিছু নেই। লিওনার্দো দা ভিঞ্চি প্লেনের ডিজাইন করেছিলেন তখন প্লেন ছিল না। জুলভার্ন সাবমেরিনের কথা লিখেছেন। সাবমেরিন সত্যি তৈরি হলো। এটাই সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি।

ঢাকাটাইমস: বাণিজ্য মেলাসহ বিভিন্ন মেলা হয়, অনেক পাঠক অভিযোগ করে সেখানে কেন তারা বই কেনার সুযোগ পায় না?

মোশতাক আহমেদ: প্রকাশকরা সব সময় বিশ্বাস করে বইয়ের মার্কেট নেই। এটা সম্পূর্ণ ভুল। আমরা সব প্রকাশককে অনুরোধ করবো আপনারা বাণিজ্য মেলায় যান। সেখানে প্রচুর জনসমাগম হয়। ভালো বই মানুষ কিনবে। আমার মনে হয় প্রকাশকরা কেন জানি পিছিয়ে আছে। পিছিয়ে থাকার সময় এখন নেই। বই নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে। বই নিয়ে দৌড়াতে হবে। বইকে বিপণন করতে হবে। বইয়ের যে মার্কেট আছে , বইয়ের যে পাঠক আছে তাদের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে হবে।  ১৭ কোটি লোক আমাদের দেশেই শুধু। ওপার বাংলায় আরও ১৬ থেকে ১৭ কোটি লোক বাংলায় কথা বলে। আরও অনেক জায়গা আছে সবগুলো জায়গায় ছড়িয়ে দেন। সেই ক্ষেত্রে কেন আমরা বাণিজ্য মেলায় যাবো না। আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলায় অবশ্যই যেতে হবে। সেখানে প্রকাশকদের প্যাভিলিন নিয়ে বই বিক্রি করতে হবে।

ঢাকাটাইমস: নতুন লেখকদের উদ্দেশে আপনার পরামর্শ কী?

মোশতাক আহমেদ : নতুন লেখকদের উদ্দেশে বলবো ভয় পাওয়ার কারণ নেই। আপনারা সাহসী হোন। অনেক পাঠক আছে। আপনার লেখা ভালো হলে অবশ্যই পাঠক পড়বে। তবে আপনাকে পড়তে হবে, জানতে হবে। সুন্দর করে গুছিয়ে উপস্থাপন করতে হবে। গল্পটা উপস্থাপন করা কিন্তু একটা শিল্প। এই শিল্পটি যখন আপনি আয়ত্ত করে নেবেন, সুন্দর করে নেবেন, পাঠক নিশ্চয়ই আপনাকে পছন্দ করবে এবং আপনি সাহিত্য জগতে বিখ্যাত হয়ে যাবেন।

ঢাকাটাইমস: পাঠকদের উদ্দেশে কিছু বলার আছে কি? 

মোশতাক আহমেদ: আমাদের প্রচুর পাঠক আছে। যে যাই বলুক, বাংলাদেশে পাঠক নেই, বই বিক্রি হয় না, এ কথা আমি বিশ্বাস করি না। এটা আমাদের একটা ভ্রান্ত ধারণা। ভালো বইয়ের পাঠক আছে। পাঠককে বলবো ভালো বই কিনবেন, ভালো বই পড়বেন, পাইরেটেড বই কিনবেন না। বাংলাদেশি লেখকরা অনেক ভালো ভালো বই লিখেন। সে বইগুলো আপনারা দেখেন। আমার বিশ্বাস বাংলাদেশের সাহিত্য শুধু বাংলাদেশ না এখন সময় এসেছে সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ার। অচিরেই বাংলাদেশি সাহিত্য সারা পৃথিবীতে ভালো একটা জায়গা করে নেবে। প্রায় ৫০ কোটি লোক বাংলা ভাষায় কথা বলে। আমাদের জন্য এটা বড় একটা সম্পদ। খুব কম ভাষা এমন আছে যে ভাষায় ৫০ কোটি লোক কথা বলে। ৪০০ থেকে ৫০০ ভাষার মধ্যে আমাদের অবস্থান সপ্তম। এইটাকে কেন আমরা ক্যাপিটালইজ করবো না। এই সুযোগটা নেয়া উচিত । এজন্য পাঠককে বলবো আমাদের ভালো লেখক যারা আছে তাদের বই কিনবেন। নতুনদের বই কিনেন, পড়ুন। আমাদের সাহিত্যকে সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে দিন।

ঢাকাটাইমস: সামগ্রিকভাবে এবারের বইমেলার পারিবেশ সম্পর্কে কিছু বলুন।

মোশতাক আহমেদ: অপূর্ব, অদ্ভুত সুন্দর। প্রতি বছর যেভাবে এটার উন্নতি হচ্ছে । আমার মনে হয় কিছুদিনের মধ্যে বিদেশিরা এখানে সময় মতো ঘুরতে আসবেন। এবার যেমন লেখদের জন্য মঞ্চ আছে, বইপ্রেমীদের বসার জন্য জায়গা আছে। ক্যান্টিন আছে। ওয়াশরুম, ফ্রেশরুম সব কিছু আছে। সুন্দরভাবে প্যাভিলিয়ন সাজানো হয়েছে। বিদ্যুৎব্যবস্থা সুন্দর, নিরাপত্তা অসাধারণ। সবকিছু মিলিয়ে মনে হয় একটা পরিপূর্ণ মেলা আমরা পেয়েছি। আমি ধন্যবাদ জানাই বাংলা একাডেমিকে। সাধুবাদ জানাই সরকারকে, এত সুন্দর একটা উদ্যোগের জন্য। এই ধারাবাহিকতা যেন বজায় রাখে। এই প্রথম রাত ৯টা পর্যন্ত মেলা হচ্ছে। আমার কাছে মনে হয় নয়টা শেষ না। এটা ১১টা পর্যন্ত চলুক।

(ঢাকাটাইমস/১১ফেব্রুয়ারি/জেআর/জেবি)