বিয়ের নামে প্রতারণাই তার ‘পেশা’

প্রকাশ | ১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ০৮:১২

আরিফিন তুষার, বরিশাল ব্যুরো
ফাইল ছবি

স্কুলে পড়াকালীন প্রথম বিয়ে তার। সেই স্বামীর সংসারে থাকা অবস্থায় পরকীয়া করে দ্বিতীয় বিয়ে। টাকাপয়সা হাতিয়ে নিয়ে ছাড়েন দুই স্বামীর সংসার। পরে নিজের বোনের মেয়ের স্বামীকে ট্রাপে ফেলে করেন তৃতীয় বিয়ে। তার কয়েক মাসের মধ্যেই আরেক যুবককে ব্ল্যাকমেইল করে সেরে নেন আরও একটি বিয়ে। এ নিয়ে এখন পর্যন্ত ছয়টি বিয়ে সারা হয়েছে তার। আর এসব বিয়ের পেছনে রয়েছে প্রতারণা করে অর্থ আত্মসাতের নানা কাহিনি।

তার নাম সুলতানা আক্তার মিতু ওরফে কোহিনূর। বরিশাল সদরের সায়েস্তাবাদের দক্ষিণ চরআইচা গ্রামে তার বাড়ি। সম্প্রতি এই নারীর বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ করেছেন গ্রামের অর্ধ শতাধিক মানুষ। তাদের ভাষ্য, তারা মিতুর নানারকম প্রতারণার শিকার।

স্থানীয়দের দাবি, বিয়ে করাই যেন মিতুর নেশা ও পেশা। বিবাহিত-অবিবাহিত যুবকদের একের পর এক ফাঁদে ফেলে সবকিছু হাতিয়ে নেওয়াই তার কাজ। আর এ কাজ করতে গিয়ে সে নিজেকে কখনো মিতু, কখনো কোহিনূর নামে পরিচয় দেন।

মিতুর সর্বশেষ তার প্রতারণার শিকার হয়ে সর্বস্ব হারানো মামুন হাওলাদার। মিতুর বিষয়ে বরিশাল মেট্রোলিটন পুলিশের কাছে অভিযোগও দিয়েছেন তিনি। তিনি ছাড়াও প্রতারণার শিকার অর্ধশতাধিক মানুষ বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনারের কাছে দেওয়া অভিযোগপত্রে বলেছেন, ছয়বার স্বামী পাল্টানো মিতু ওরফে কহিনূর শুধু বিয়ে নাটকই নয়, এখন অসামাজিক কর্মকা-ের ডকুমেন্টারি তৈরি করে অর্থও হাতিয়ে নিচ্ছেন।

অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, সুলতানা আক্তার মিতু ওরফে কোহিনূর স্কুলে পড়াকালে প্রথম বিয়ে করেন একই গ্রামের ভুলু শরিফের ছেলে মন্টু শরিফকে। প্রথম সংসার জীবন শুরুর মধ্যেই ফেনীর সাইফুল ইসলাম বাকেরের সঙ্গে পরকীয়ায় জড়িয়ে বিয়ে করেন। সেখান থেকে অর্থ হাতিয়ে পুনরায় আপন ভাগনিজামাই একই এলাকার আনোয়ার হোসেন রিপনকে মোবাইলে ডেকে লোকজন নিয়ে জোরপূর্বক বিয়ে করেন।

রিপনের সঙ্গে বিয়ের কয়েক মাসের মাথায় স্বরূপকাঠীর মো. আমিনুল মাস্টারকে ব্লাকমেইল করে বিয়ে করেন। এসব বিয়ের কোনো রেজিস্ট্রি কাবিন না করে নোটারি পাবলিকের মাধ্যমে ভুয়া কাবিন বানিয়ে সুলতানা আক্তার মিতু ওরফে কোহিনূর একের পর এক বিয়ে করেন।

তৃতীয় স্বামী ও মিতুর আপন ভাগনিজামাই আনোয়ার হোসেন রিপন বলেন, ‘২০১২ সালের ৩০ জানুয়ারি খালাশাশুড়ি সুলতানা আক্তার মিতু ফোন করে বলেন, তিনি বিপদে আছেন, বাসায় গিয়ে যেন তার সঙ্গে দেখা করি। খবর পেয়ে দ্রুত বাসায় ছুটে গিয়ে দরজায় নক করার পর খালাশাশুড়ি মিতু বিবস্ত্র অবস্থায় আমাকে জড়িয়ে ধরে চিৎকার-চেঁচামেচি করেন।’

‘এ সময় তার সহযোগীরা আমাকে আটকে রাখেন এবং সকালে বরিশাল নগরীর এক আইনজীবীর চেম্বারে নিয়ে ছবি তুলে স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর রেখে বলেন, বিয়ে হয়ে গেছে।’ ‘এর কয়েক দিন পরই তিনি আমার কাছে টাকা দাবি করেন। টাকা দিতে রাজি না হলে নানাভাবে হয়রানি করতে থাকেন। এক পর্যায়ে মিতু ওরফে কোহিনূর বরিশাল চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্র্রেট আদালতে আমার বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির অভিযোগে মামলা করেন।’

মিতুর প্রতারণার শিকার মামুন হাওলাদার বলেন, ‘প্রেমের অভিনয় করে আমাকে তার জালে জড়িয়ে তিন লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। এই টাকা দিতে গিয়ে আজ আমি ভিটেমাটি বিক্রি করে ঢাকায় বাস করছি।’

অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে, সাম্প্রতিক সময়ে সুলতানা আক্তার মিতু ওরফে কোহিনূরকে হোটেল প্যারাডাইসসহ একাধিক হোটেল থেকে বেশ কয়েকবার অসামাজিক কর্মকা- করার সময় পুলিশ আটক করেছে।