মাটিতে বসে পাঠদান, নেই প্রধান শিক্ষক

তারিকুল ইসলাম
 | প্রকাশিত : ১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ০৮:৩৬

ময়মনসিংহের ফুলবাড়ীয়া উপজেলার বালিয়ান ইউনিয়নে ২০০৯ সালে ৪২০ জন শিক্ষার্থী নিয়ে প্রতিষ্ঠিত হয় নয়নমনি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। স্কুলটিতে গত দুই বছর ধরে অনুপস্থিত প্রধান শিক্ষক লুৎফর রহমান। সহকারী শিক্ষকরাও আসেন কালেভদ্রে। নাজুক অবস্থা বিদ্যালয়টির অবকাঠামোতে। মাটিতে বসে চলছে পাঠদান, নেই দরজা-জানলাও। এমনকি শিক্ষকদের জন্য নেই চেয়ার-টেবিলও। শিক্ষার্থীদের উপস্থিতিও নেই বললেই চলে। বর্তমানে প্রায় ৯৭ জন শিক্ষার্থীর বেশির ভাগই বিদ্যালয়বিমুখ।

২০১৩ সালে জাতীয়করণ হওয়া ওই স্কুলটিতে গত বৃহস্পতিবার (৭ ফেব্রুয়ারি) বেলা ১১টায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা মেলে নানা অব্যবস্থাপনা। পাওয়া গেল দুই শিক্ষককে। শিক্ষক ও অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলে পাওয়া গেল আরও নানা অভিযোগ।

জানা যায়, জাতীয়করণ হওয়ার পর চারজন শিক্ষক থাকার কথা থাকলেও প্রধান শিক্ষক অতিরিক্ত দুজন শিক্ষক নিয়োগ দেন। ফলে বিদ্যালয়টি সরকারি হলেও শিক্ষকদের বেতন আটকে যায়। নিয়োগের নামে ঘুষ বাণিজ্যের কথা চাউড় হয়। এ নিয়ে ২০১৭ সালে বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক শামীমা ইয়াসমীন একটি মামলা করেন। ২০১৭ সালে বিদ্যালয়ের সংস্কার কাজ বাবদ ৪০ হাজার টাকা আত্মসাতের অভিযোগও রয়েছে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে। অনিয়ম-দুর্নীতির পাহাড়সম অভিযোগ নিয়ে গত দুই বছর যাবত প্রধান শিক্ষক একদিনও আসেননি স্কুলে।

বিদ্যালয়ের পাশের বাড়ির বালিয়ান ইউনিয়ন পরিষদের সংরক্ষিত নারী আসনের সদস্য ফরিদা ইয়ামিন জানান, দুই বছর ধরে বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক আসেন না। বাকি যারা আছেন তারাও অনিয়মিত। বিদ্যালয়ে কোনো লেখাপড়া হয় না। ভবিষ্যৎ প্রজন্ম নিয়ে তারা শঙ্কিত বলে জানান এই জনপ্রতিনিধি।

আরেকজন অভিভাবক খাদিজা বেগম ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘এই স্কুলে বাচ্চাদের কোনো লেখাপড়া হয় না। শিক্ষকরাও নিয়মিত আসেন না। এলেও সারাদিন গল্প-গুজবে মেতে থাকেন। ছেলেমেয়েরাও ভাঙাচোরা এ স্কুলে যেতে চায় না।’

জরাজীর্ণ এ বিদ্যালয়টিতে ঢোকার পথে দেখা মেলেনি কোনো নামফলক। নেই কোনো দরজা-জানলা। শ্রেণিকক্ষে নেই চেয়ার-টেবিল, বেঞ্চ, নেই ব্লাকবোর্ড। শিক্ষকরা দাঁড়িয়ে আর শিক্ষার্থীরা চটের উপর বসে ক্লাস করে।

এ ব্যাপারে কথা বলতে প্রধান শিক্ষকের মোবাইল ফোনে বারবার চেষ্টা করেও তার ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।

ফুলবাড়ীয়া উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার জীবন আরা বেগম ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘স্কুলের প্রধান শিক্ষকের দুই বছর ধরে কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকার বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে। স্লিপ প্রকল্পের ২০১৮ সালের টাকা তাদের অ্যাকাউন্টে জমা আছে।’ স্লিপ প্রকল্পের টাকা আত্মসাতের ব্যাপারে তিনি বলেন, সহকারী শিক্ষকরা প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে দ্বন্দ্বের জেরে তার উপর এটা চাপাচ্ছেন। প্রকৃতপক্ষে কোনো টাকা আত্মসাৎ হয়নি। শিক্ষকদের মাঝে মামলা চলমান থাকায় প্রশাসনিকভাবে কোনো ব্যবস্থা নেয়া সম্ভব হচ্ছে না। তবে নিয়মিত বিদ্যালয় মনিটরিং করার কথাও বলেন তিনি।

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :