ঠাকুরগাঁওয়ে আমবাগানে নীরব বিপ্লব

প্রকাশ | ১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ১০:৩৮ | আপডেট: ১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ১১:২৬

বদরুল ইসলাম বিপ্লব, ঠাকুরগাঁও

অন্য ফসলে বারবার লোকসান গুণে আমের আবাদে ঝুঁকছেন ঠাকুরগাঁওয়ের চাষিরা। বিশেষত রুপালি জাতের আম্রপালি আমের চাহিদা ও দাম ভালো থাকায় ওই জাতের বাগান স্থাপন করছেন কৃষকেরা। এসব বিষমুক্ত মিষ্টি আম উৎপাদন করায় এর চাহিদাও ব্যাপক। ফল বিক্রি করে বেশি লাভবান হওয়ায় আমের বাগান করার নীরব বিপ্লব চলছে জেলাজুড়ে।

আবার আম্রপালির আম গাছ বেশি বড় না হওয়ায় গাছের মাঝামাঝি ফাঁকা জায়গায় ধান, গম, পাট, আলু, মরিচসহ বিভিন্ন সাথী ফসল চাষ করে বাড়তি লাভবান হচ্ছেন চাষিরা।

সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে, জেলার পীরগঞ্জ উপজেলায় গত পাঁচ বছরে প্রায় দ্বিগুণ আম্রপালি আমের বাগান স্থাপিত হয়েছে। অনেকে লিচুবাগান কেটে ফেলেও আমবাগান করছেন। বালিয়াডাঙ্গী এলাকায় সূর্যাপুরী জাতের আমবাগান সবচেয়ে বেশি। পীরগঞ্জ, রাণীশংকৈল ও হরিপুর উপজেলায়ও আম বাগানের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে।

প্রান্তিক চাষিরা জানান, ঠাকুরগাঁও জেলার মাটি তুলনামূলক উঁচু। এ মাটিতে ধান, গম, পাট, আলুসহ বিভিন্ন ফসলের আবাদ করে আসছিলেন তারা। কিন্তু ওইসব ফসল উৎপাদন করে ন্যায্যমূল্য না পেয়ে প্রতি বছর লোকসান গুণে আসছিলেন তারা। এ কারণে চাষিরা খাদ্যশস্য উৎপাদন থেকে সরে এসে ওই জমিতে আমবাগান স্থাপন শুরু করেন। ফল বিক্রি করে মোটা অংকের টাকা লাভবান হওয়ায় নতুন নতুন চাষিরাও দিন দিন আমের বাগান স্থাপনে ঝুঁকে পড়ছেন। এসব বাগান থেকে বিষমুক্ত আম ও বিভিন্ন সাথী ফসল পাওয়ায় দুদিকে লাভবান হচ্ছেন তারা। যাদের নিজস্ব জমি-জমা নেই, তারাও অন্যের জমি ১০/১২ বছরের জন্য ভাড়া নিয়ে সেখানে আম্রপালি জাতের রুপালি আমের চাষ করে আসছেন।

কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, বর্তমানে জেলায় ১ হাজার ৫১৪টি আমবাগানের আয়তন ৮ হাজার ২৯ হেক্টর।

পীরগঞ্জের চাঁদপুর গ্রামের আমচাষি মনোয়ার হোসেন ও আব্দুর রাজ্জাক জানান, এক বিঘা জমিতে আম্র্রপালি জাতের গাছ লাগানো যায় কমপক্ষে ১৬০টি। তিন বছরের মাথায় প্রতিটি গাছ থেকে এক ক্যারেট (২০ কেজি) আম পাওয়ায় যায়। প্রতি কেজি ৫০ টাকা হারে এক ক্যারেটের দাম ১ হাজার টাকা। সে হিসেবে একবিঘা জমিতে প্রাপ্ত আম বিক্রি হয় ১ লাখ ৬০ হাজার টাকায়। আর প্রথম বছর যে আম পাওয়া যায়, পরের বছর পাওয়া যায় তার দ্বিগুণ। এভাবে প্রতি বছর আম ও লাভের পরিমাণ বাড়তে থাকে নয় বছর পর্যন্ত।

আমবাগান মালিক জাহিদ বলেন, যখন সারাদেশে বিভিন্ন জাতের আম শেষ হয়ে যায় তখন রুপালি জাতটির পাকার উপযুক্ত হয়। ওই সময় আমের চাহিদা বেশি থাকায় আমরা বেশি দামে বিক্রির সুযোগ পেয়ে লাভবান হই।’

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ বলেন, ১০ বছর পর আমের ফলন কমে যায়, তখন গাছের ডগা এক থেকে দেড় ফুট কেটে ফেললে সেখানে নতুন করে কুশি ও ডালপালা গজাবে। তাতে আগের মতোই আমের ফলন হবে। পরবর্তীতে টপ অরকিং করা হলে আমের ফলন আবারও বাড়ানো সম্ভব।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক আফতাব হোসেন বলেন, গত ১০ বছরে আমবাগানের সংখ্যা বেড়েছে ব্যাপকভাবে। শুধু পীরগঞ্জ উপজেলাতেই ১০ বছর আগে আমের বাগান ছিল ৫৫০ হেক্টর জমিতে। বর্তমানে আম্রপালি জাতের আমের বাগানের আয়তনই দাঁড়িয়েছে ৯৮০ হেক্টর জমিতে। আম বিক্রি করে চাষি ও মালিকরা লাভবান হওয়ায় দিন দিন বাড়ছে বাগানও।