বন্ধ হোক ‘সরকার কা মাল দরিয়া মে ঢাল’

আরিফুর রহমান
 | প্রকাশিত : ১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ১৭:২৭

দীর্ঘদিন ধরে রাষ্ট্রীয় পরিবহন সংস্থা বিআরটিসির অনিয়ম-দুর্নীতি নিয়ে কথা হচ্ছে। একেকজন চেয়ারম্যান এসে চেয়ারে বসে নানা স্বপ্ন দেখান, শেষ পর্যন্ত যে লাউ সেই কদু থেকে যায়। লোকসানের ঘানি টেনে একে একে বসতে থাকে সরকারি বাস-ট্রাক।

এ দেশেই বেসরকারি পরিবহন সংস্থাগুলো ব্যবসায় নেমে বছর না ঘুরতে শান-শওকতে বাড়তে থাকে। চক্রবৃদ্ধি হারে বাড়ে তাদের পরিবহনের সংখ্যা। একেকটি বাস চলে ১৫-২০ বছর ধরে। কোনো সমস্যা হয় না। যত সমস্যা সরকারি গাড়িতে। অথচ জনগণের টাকায় কেনা এসব গাড়ির মূল্য বেশিই পড়ে বেসরকারি গাড়ির চেয়ে।

এরপর সরকারি নানা সুযোগ-সুবিধা নিয়ে বাসগুলো রাস্তায় নামে। বড় বড় ডিপোতে এদের রক্ষণাবেক্ষণের জন্য আছে সরকারি বেতনে কর্মচারী। তবু বাসগুলোর বয়স বাড়তে পারে না। কয়েক বছরে লক্কড়ঝক্কড় রূপ নিয়ে ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়ে।

এ জন্য কারা দায়ী- বাসগুলো? বাসের নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলো? নাকি পরিচালনাকারীরা। আমরা একটু দেখে নিই রবিবারের ঢাকাটাইমসে প্রকাশিত প্রতিবেদনের কিছু তথ্য।

২০১১ সালে বিআরটিসি আড়াই শ কোটি টাকায় ২৫৫টি দাইয়ু বাস কেনে কোরিয়া থেকে। ২০১২ থেকে ২০১৩ সালে দেশে আসে বাসগুলো। পাঁচ বছর গেল মাত্র, এরই মধ্যে ১০৭টি চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে।

সব মিলিয়ে বিআরটিসির ১ হাজার ৪৪৫টি বাসের মধ্যে ৫২৪টি নষ্ট হয়ে আছে। বড় ধরনের মেরামত করলে ৩৬০টি চালানো যাবে। বাকি ১৬৪টি বাস একেবারেই চলাচলের অযোগ্য।

বিআরটিসির চেয়ারম্যান ফরিদ আহমেদ ভুইয়া এই পরিস্থিতির জন্য যন্ত্রাংশের অভাবের কথা বলেছেন। বিআরটিসির একজন কর্মকর্তার ভাষ্য, কোনো যন্ত্র নষ্ট হলে সেটি মেরামতের জন্য চাহিদা দিলে টাকা আসতে আসতে গাড়ি তত দিনে বসে যায়। এরপর যে অর্থ আসে, তা দিয়ে আর মেরামত করা যায় না। নি¤œ মানের বাস আমদানির অভিযোগ করেছেন এক কর্মকর্তা।

দেশে এসব বাসের যন্ত্রাংশ মেলে না। আবার মেরামতের ক্ষেত্রে রয়েছে দুর্নীতি। নতুন যন্ত্রাংশের বিল দেওয়া হলেও অনেক ক্ষেত্রে পুরোনো যন্ত্র দেওয়া হয়।

তাহলে দেখা যাচ্ছে, এই পরিস্থিতি তৈরির জন্য দক্ষ মেকানিকের অভাব, যন্ত্রাংশের স্বল্পতা, আমলাতন্ত্রের কারণে সময়মতো রক্ষণাবেক্ষণ না করা, ভুল সিদ্ধান্ত এবং দুর্নীতিকে দায়ী করছেন খোদ সংস্থাটির কর্মীরাই।

বিআরটিসির কর্মকর্তাদের ভাষ্য থেকে এটা বুঝতে অসুবিধা হচ্ছে না যে সংস্থাটি চলছে ‘সরকার কা মাল দরিয়া মে ঢাল’ নীতিতে। পর্যাপ্ত মূল্য এমনকি অতিমূল্য দিয়ে বাস আমদানির চুক্তি করা হয়, কিন্তু এর মান ও যন্ত্রাংশের সহজলভ্যতার কথা ভাবা হয় না, এটা কেমন কথা! বাসগুলো সড়কে কত দিন চলতে পারবে তার নিশ্চয়তা নেয়া হয় কি না সে ব্যাপারে এখন আমাদের সন্দেহ হচ্ছে। অর্থাৎ বাস আমদানি থেকে পরিচালনা পর্যন্ত প্রতিটি কর্তৃপক্ষ দায়সারা দায়িত্ব পালন করছেন, সরকারি অর্থের অপচয় করছেন, এটা স্পষ্ট।

দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। মানুষের কর্মব্যস্ততা বাড়ছে। তেমনি বাড়ছে সরকারি গণপরিবহনের চাহিদা। সরকারি পরিবহন সংস্থাটি এভাবে আর চলতে পারে না। আমরা আশা করি, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বিআরটিসিতে এত দিন ধরে চলা অনিয়ম-দুর্নীতি কিংবা খামখেয়ালি দূর করে একটি জনবান্ধব সেবা সংস্থা গড়ে তুলবে। নিশ্চিত করবে আরামদায়ক, টেকসই ও পরিচ্ছন্ন নাগরিক পরিবহন।

সংবাদটি শেয়ার করুন

রাজপাট বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা