রপ্তানিতে নতুন সম্ভাবনা কাট ফ্লাওয়ার

ইমতিয়াজ উল ইসলাম, সাভার
 | প্রকাশিত : ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ০৮:২৭

ইউরোপ বা নেদারল্যান্ডের জনপ্রিয় জারবেরা ফুলের বাণিজ্যিক চাষ হচ্ছে সাভারের বিরুলিয়ায়। দৃষ্টিনন্দন ও সারা বছর উৎপাদনে সক্ষম ফুলটির চাহিদা ও বিক্রি এদেশে দিন দিন বেড়ে যাওয়ায় এর মূল্যও ভালো পাচ্ছেন চাষিরা। লাভবান হওয়া জারবেরা চাষিদের সাফল্যে অনুপ্রাণিত হয়ে অন্যরাও গোলাপ ও গ্লাডিউলাসের পাশাপাশি এ ফুল আবাদে ঝুঁকছেন।

সাভারে উৎপাদিত জারবেরা রাজধানী ঢাকাসহ স্থানীয় বাজারের চাহিদা মেটাচ্ছে। প্রয়োজনীয় সহযোগিতা ও পৃষ্ঠপোষকতা পেলে বিদেশি এ ফুল বিদেশেই রপ্তানির পাশাপাশি নতুন কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে বলে দাবি উদ্যোক্তাদের।

বাণিজ্যিকভাবে জারবেরা চাষ অত্যন্ত লাভজনক হওয়ায় বিরুলিয়া ইউনিয়নের চাষিদের মাঝে দিন দিন এর জনপ্রিয়তা বাড়ছে। পুরোনো ও নতুন উদ্যোক্তাদের সার্বিক সহযোগিতা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সাভার উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম।

তিনি জানান, উপজেলার প্রায় ৫০০ হেক্টর জমিতে গোলাপ, গ্লাডিউলাস, রজনীগন্ধা, গাদাসহ বিভিন্ন ফুলের চাষাবাদ হয়ে থাকে। শুধু জারবেরাই উৎপাদিত হচ্ছে ৫০ হেক্টর জমিতে।

সরেজমিনে জানা গেছে, বিরুলিয়া ইউনিয়নের প্রতিষ্ঠিত ফুল ব্যবসায়ী নাসির হোসেন, ফারুক হোসেন, কামাল হোসেন, আশরাফ মিয়া, বিল্লাল হোসেন ও মীর মহিউদ্দিন আহমেদ বাণিজ্যিকভাবে জারবেরা চাষে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছেন।

তাদের একজন বাগান মালিক নাসির হোসেন জানান, ভারত থেকে আনা টিস্যু কালচারের জারবেরা ফুলের চারাপ্রতি খরচ ৮০ টাকা। আর রোপণ ব্যয় আরও ২০ টাকা। ৬০ লাখ টাকা ব্যয়ে তিন বছর আগে ছয় বিঘা জমিতে হলুদ, সাদা, লাল, খয়েরি, কমলা, ফিরোজা, মিষ্টি গোলাপি ও গোলাপিসহ নয়টি রঙ বা প্রজাতির জারবেরা ফুলের চাষ করেছেন তিনি। প্রতিদিন তার বাগান থেকে প্রায় তিন হাজার ফুল সংগ্রহ করা যায়। সপ্তাহে অন্তত চারবার ফুল সংগ্রহের পর তা পলি লাগিয়ে র‌্যাপিং ও বাক্সবন্দি করে রাজধানীর শাহবাগে পাইকারি ব্যবসায়ীদের কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়। পাইকারি দরে প্রতিটি ফুল বিক্রি হচ্ছে ৫-১০ টাকা। ফুলের দোকানে খুচরা বিক্রি হয় ১৫-৩০ টাকা করে। তবে বিশেষ দিনগুলোতে চাহিদা বেশি থাকায় দামও বেড়ে যায়।

একই এলাকার যৌথ বাগান মালিক আশরাফ মিয়া, ফারুক হোসেন ও কামাল হোসেন জানান, এক বিঘা জমিতে সারা বছর ধান, পাট, সবজি বা অন্য ফসলের চাষ করলে ৫০ হাজার টাকার বেশি পাওয়া যায় না। এ থেকে উৎপাদন খরচ বাদে কৃষকের লাভ খুবই কম থাকে। কিন্তু জারবেরা চাষে সমপরিমাণ জমি থেকে খরচ বাদে পাওয়া যায় প্রায় পৌনে ছয় লাখ টাকা। ফুল চাষের ৩-৪ মাস পরেই বাগান থেকে ফুল সংগ্রহ করা যায়। তারা গড়ে প্রতি মাসে প্রায় ৫০ হাজার ফুল বিক্রি করেন। কোনো কোনো মাসে তিনি বিক্রি করেছেন ৭৫ হাজারেরও বেশি।

জারবেরার পরিচিতি ও যেভাবে চাষাবাদ

জারবেরা অ্যাসটারেসি পরিবারভুক্ত একটি গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক ফুল। জার্মান উদ্ভিদতত্ত্ববিদ ও চিকিৎসক ট্রগোট জার্বারের নামানুসারে এ ফুলটির নামকরণ করা হয়েছে। এটি আন্তর্জাতিক ফুল বাণিজ্যে কাট ফ্লাওয়ার হিসেবে উল্লেখযোগ্য দশটি ফুলের একটি। বেশি দিন ফুলদানিতে সতেজ রাখতে জারবেরার জুড়ি নেই।

সাভার উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম জানান, জারবেরা সূর্যমুখী প্রজাতির। ফুল দেখতে সূর্যমুখীর মতোই। এর নান্দনিক সৌন্দর্য আলাদা মাত্রা যোগ করেছে। বাংলাদেশে সাধারণত নয়টি রঙের জারবেরার জাত আছে।

তিনি জানান, জারবেরা চাষে গ্রীষ্মকাল ছাড়া অন্যান্য সময় পূর্ণ সূর্যালোক উত্তম। সাধারণত শীতকালে গাছে খুব তাড়াতাড়ি ফুল আসে। তাপমাত্রা কখনো ২৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপর উঠতে দেওয়া উচিত নয়। চারা লাগানোর কমপক্ষে এক সপ্তাহ আগে পচা জৈবসার, ইউরিয়াসহ কিছু রাসায়নিক সার প্রয়োগ করে ভালোভাবে মাটিতে মিশিয়ে দিতে হয়। কাট ফ্লাওয়ার উৎপাদনে জমিতে ৩০-৪৫ সেন্টিমিটার উঁচু ও ১-১.২ মিটার চওড়া বেড তৈরি করতে হয়। পরিচর্যা ও অন্যান্য কাজের সুবিধার্থে জন্য দুই বেডের মাঝে ৫০ সেন্টিমিটার জায়গা খালি রাখতে হয়। এ ফুলে রোগ-বালাই কম হয়। তবে রোগ-বালাই থেকে দূরে থাকতে চারা লাগানোর আগে তৈরি বেডে রাসায়নিক ব্যবহার করে অথবা এক সপ্তাহ কালো পলিথিনে ঢেকে রেখে মাটি শোধন করে নিলে মাটিবাহিত রোগ-বালাইয়ের প্রকোপ কম হয়।

বিরুলিয়া ইউনিয়নের আইঠর গ্রামের বাগান কর্মচারী আজিবর জানান, চারদিকে পোকামাকড় থেকে রক্ষা ও সরাসরি রোদ থেকে দূরে রাখতে বিদেশ থেকে আনা বিশেষ ধরনের পলিথিন দিয়ে জারবেরা শেড তৈরি করতে হয়। এতে ছায়াযুক্ত ৫০ শতাংশ আলো-বাতাস লাগে। শেডে এক ফুট পর পর জারবেরার চারা রোপণের পর পর্যায়ক্রমে সেচ ও কীটনাশক প্রয়োগ করতে হয়। একটি পূর্ণাঙ্গ চারা থেকে দুই বছর পর্যন্ত ও একটি গাছ থেকে অন্তত ১৫০ থেকে ১৬৫টি ফুল সংগ্রহ করা যায়।

তিনি আরও জানান, ফুল ফোটার পর গাছেই একটি ফুল অন্তত ৩০ দিন সতেজ থাকে। আর তা দীর্ঘায়িত লম্বা স্টিক বা ডাটার কিছু অংশ পানিতে ডুবিয়ে রাখলে ৮-১৫ দিন সতেজ থাকে।

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বাংলাদেশ এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :