ছিনতাই করতে ভাঙা হয়েছে সড়ক বাতি
রাজধানীর মহাসড়কের লাইট ভেঙে ছিনতাইয়ের ফাঁদ পেতেছে একটি সংঘবদ্ধ চক্র। সন্ধ্যার পর সড়কে আলো না থাকায় অনায়াসেই ছিনতাইকারীরা হাতিয়ে নিচ্ছে পথচারীদের টাকাপয়সা ও মূল্যবান জিনিসপত্র।
এটি রাজধানীর গাবতলী থেকে হাজারীবাগ পর্যন্ত বেড়িবাঁধ সড়কের চিত্র। এই সড়কের পাশে স্থাপন করা সবগুলো লাইটই অকেজো। স্থানীয়রা জানান, বিভিন্ন সময় ঢিল ছুড়ে লাইটগুলো ভেঙে ফেলা হয়েছে। উদ্দেশ্য সন্ধ্যার পর ছিনতাই করা।
দিনের আলো নিভে গেলে বেড়িবাঁধ সড়কে বাড়ে গাড়ির চাপ। সৃষ্টি হয় দীর্ঘ যানজটের। অনেক সময় কয়েক ঘণ্টা স্থায়ী হয় এই যানজট। ভোগান্তি এড়াতে অনেকেই গাড়ি থেকে নেমে হেঁটে রওনা হন। আর সে সুযোগটাই নেয় ছিনতাইকারীরা। বেড়িবাঁধের সুনিবিড় হাউসিং, দ্বীপনগর, ঢাকা উদ্যান, নবীনগর, চাঁদ উদ্যান, রায়েরবাজার এলাকায় ভিন্ন ভিন্ন চক্র এই ছিনতাইয়ের সঙ্গে জড়িত বলে জানা গেছে।
ভুক্তভোগীরা জানান, বেড়িবাঁধের পাশের বিভিন্ন গলির মুখে ছিনতাইকারীরা ওত পেতে থাকে। সুযোগ বুঝে পথচারীদের ভয় দেখিয়ে গলির ভেতর নিয়ে সর্বস্ব লুটে নেয়।
স্থানীয়দের থেকে পাওয়া তথ্যমতে, বেড়িবাঁধের তিন রাস্তার মোড় ও চাঁদ উদ্যান এলাকায় ছিনতাই করে সাতজন। ঢাকা উদ্যান এলাকায় ১০-১৫ জন, সুনিবিড় হাউসিং এলাকায় ২০-২৫ জন এই ছিনতাইয়ের সঙ্গে জড়িত। তাদের বেশির ভাগই স্থানীয়। ছিনতাইয়ের সঙ্গে জড়িতরা চেনাজানা হলেও এলাকার কেউ তাদের ব্যাপারে মুখ খোলার সাহস করেন না।
স্থানীয় বাসিন্দা গোলাম মোস্তফা জানান, ছিনতাইয়ের ঘটনা তারা সবাই জানেন। আর এই এলাকায় ছিনতাই হয় অন্ধকারকে কাজে লাগিয়ে। বলেন, ‘লাইটগুলা লাগাইছে দুই বছর আগে। কয়েকদিন পরই দেখি লাইট জ্বলে না। একটু খেয়াল করেন, একটা লাইটও নষ্ট না। সব ভাঙা। কামলারা (ছিনতাইকারী) সব ইট মাইরা ভাঙছে। ছিনতাই কইরা দৌড় দেয়, কোন দিক যায় কেউ দেহে না।’
বেড়িবাঁধ এলাকার অপর এক বাসিন্দা মিলন হোসেন ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘ছিনতাই তো এইখানে প্রতিদিন হয়। কত লোকের টাকাপয়সা নিয়া যায়। কেউ কিছু কয় না, কইতে যাইয়া কেডা বিপদে পড়ে।’
বেড়িবাঁধ সড়কে লাইট না জ্বলার একই কারণ জানালেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের জোন-৫ এর সহকারী প্রকৌশলী সাইফুল ইসলাম। তিনি ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘ছিনতাইকারীরা তাদের সুবিধার্থে লাইটগুলো ভেঙেছে। ভাঙার পর আমরা বারবার লাইট লাগালেও রাখতে পারছি না’।
সমস্যা সমাধানের উদ্যোগও এর মধ্যে নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) বিদ্যুৎ বিভাগের পরিচালক রফিকুল ইসলাম। বলেন, ‘উত্তর সিটি করপোরেশনের বিদ্যুৎ বিভাগটাকে আমরা পাঁচ ভাগে ভাগ করে আমাদের কাজ পরিচালনা করছি। প্রতিটি অংশে এই একটি বিষয় আমাদের নজরে এসেছে, লাইট থাকে না। লাইট বেশ উঁচুতেই লাগানো, কেউ খুলে নিয়ে যাচ্ছে না। ভাঙা হচ্ছে।’
রফিকুল বলেন, ‘আমাদের একটি প্রকল্প প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এর মধ্যে আমরা বেড়িবাঁধসহ উত্তর সিটি করপোরেশনের যেসব স্থানে এভাবে লাইট ভাঙা হয়, বিশেষ করে বস্তি এলাকা, সেখানে এলইডি লাইট স্থাপন করব। সেই সঙ্গে লাইট যাতে কেউ ভাঙতে না পারে সে ব্যবস্থাও করা হচ্ছে।’