মেক্সিকোর মাদক সম্রাট গুজমান দোষী সাব্যস্ত

আন্তর্জাতিক ডেস্ক, ঢাকা টাইমস
| আপডেট : ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ০৯:২০ | প্রকাশিত : ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ০৮:৫৫

মেক্সিকোর মাদক সম্রাট জোয়াকিন এল চাপো গুজমানকে দোষী সাব্যস্ত করেছে নিউইয়র্কের আদালত। তার বিরুদ্ধে আনা দশটি অভিযোগেই তাকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে। কোকেন, হেরোইন সরবরাহসহ অর্থ পাচার এবং আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহারের একাধিক অপরাধে অভিযুক্ত ছিলেন ৬১ বছর বয়সি গুজমান।

তার চূড়ান্ত সাজা ঘোষণা করা না হলেও ধারণা করা হচ্ছে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের শাস্তি পেতে পারেন গুজমান। মেক্সিকোর একটি কারাগার থেকে সুড়ঙ্গ দিয়ে পালিয়ে যাওয়ার পাঁচ মাস পর ২০১৬ সালের জানুয়ারিতে গ্রেপ্তার হন তিনি। ২০১৭ সালে তাকে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে হস্তান্তর করা হয়।

মেক্সিকোর কুখ্যাত মাদক ব্যবসায়ী চক্র ‘সিনায়োলা কার্টেল’ এর নিয়ন্ত্রকের ভূমিকা পালন করার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। রাষ্ট্রীয় কৌসুলিদের মতে যুক্তরাষ্ট্রে মাদকের সবচেয়ে বড় সরবরাহকারী এই চক্র।

এগারো সপ্তাহের বিচারিক কার্যক্রম শেষে ব্রুকলিনের একটি আদালত তাকে দোষী হিসেবে রায় দেয়। গুজমানের সহযোগীদের অনেকেই তার বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিয়েছেন।

কে এই এল চাপো?

এল চাপো মানে বেঁটে- মেক্সিকোর উত্তারঞ্চলের মাদক ব্যবসার চক্রের এই মূল হোতা একসময় বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তিদের একজন ছিলেন। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রে মাদক চোরাচালানের বৃহত্তম উৎস হয়ে ওঠে এই চক্র। সেই ধারাবাহিকতায় ২০০৯ সালে ফোর্বসের বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তিদের তালিকার ৭০১ নম্বরে জায়গা হয় গুজমানের।

যুক্তরাষ্ট্রে লক্ষ লক্ষ টন কোকেন পাচারে সহায়তাসহ হেরোইন, মেথ্যাম্ফেটামিন ও মারিজুয়ানা উৎপাদন ছাড়াও বেশ কয়েকটি হত্যাকাণ্ডের নির্দেশ দেয়ার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এছাড়াও ধারণা করা হয়, ভাড়াটে গুণ্ডা ব্যবহার করে শত শত হত্যাকাণ্ড ও সহিংসতা ঘটিয়েছেন তিনি। জড়িত ছিলেন বিরোধীদের বিরুদ্ধে সহিংসতা ও অপহরণের মত ঘটনার সঙ্গেও।

কী তথ্য প্রকাশিত হয়েছে আদালতে?

মেক্সিকোর কুখ্যাত মাদক চোরাচালানকারী গুজমানের জীবনের বিস্ময়কর অনেক দিক প্রকাশিত হয়েছে আদালতে। অভিযোগ রয়েছে- অপ্রাপ্তবয়স্ক কিশোরীদের মাদক সেবন করিয়ে ধর্ষণ করতেন তিনি।

গুজমানের সাবেক সহযোগী কলম্বিয়ান মাদক পাচারকারী অ্যলেক্স সিফুয়েন্তের ভাষ্য অনুযায়ী, গুজমান বিশ্বাস করতেন কমবয়সী মেয়েদের সঙ্গে যৌনতা তাকে জীবন দিত। তাই তার ১৩ বছর বয়সি যৌনসঙ্গীকে তিনি ভিটামিন নামে সম্বোধন করতেন।

আদালতে সিফুয়েন্তে এমন অভিযোগও করেন যে গুজমান ২০১২ সালে মেক্সিকোর তৎকালীন প্রেসিডেন্ট এনরিকে পেনা নিয়েতোকে ১০ কোটি ডলার দিয়েছিলেন। গুজমানকে আটক করার জন্য চলা অভিযান থামানোর প্রতিশ্রুতি দিয়ে ২০১২ সালে ক্ষমতা গ্রহণের পর এল চাপোর কাছে ২৫ কোটি ডলার দাবি করেছিলেন প্রেসিডেন্ট। তবে পেনা নিয়েতো এবিষয়ে কোনো মন্তব্য করেননি।

আরেকজন সাক্ষী নিজে গুজমানকে অন্তত তিনটি খুন করতে দেখেছেন বলে বিবরন দিয়েছেন। গুজমানের সাবেক দেহরক্ষী ইসাইয়াস ভালদেজ রিওস জানান, বিপক্ষের মাদক চক্রে যোগ দেয়ার কারণে দু’জনকে নৃশংসভাবে নির্যাতনের পর মাথায় গুলি করে হত্যা করেন গুজমান। এরপর তাদের মরদেহ আগুনে ছুড়ে ফেলার নির্দেশ দেন। এছাড়া আরলানো ফেলিক্স চক্রের এক সদস্যকে জীবন্ত মাটি চাপা দেয়ার আগে আগুনে পুড়িয়ে নির্যাতন করেছিলেন বলে জানা যায় রিওসের জবানীতে।

আরেক মাদক চক্রের প্রধানের ভাই তার সঙ্গে হাত না মেলানোয় ওই ব্যক্তিকে হত্যার নির্দেশ দিয়েছিলেন বলেও অভিযোগ আনা হয়েছে গুজমানের বিরুদ্ধে। ২০১৫ সালে মেক্সিকোর সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থা সম্বলিত আল্টিপ্লানো কারাগার থেকে গুজমানের পালানোর ঘটনার বিস্তারিতও উঠে এসেছে আদালতে।

সেসময় তার ছেলেরা কারাগারের কাছে জায়গা কেনে এবং গুজমানের কাছে কারাগারে একটি জিপিএস ঘড়ি পৌঁছানোর ব্যবস্থা করে যেন সুড়ঙ্গ খুঁড়ে সরাসরি তার কাছে যাওয়া সম্ভব হয়। পরবর্তীতে বিশেষভাবে তৈরি মোটরসাইকেল চালিয়ে ওই সুড়ঙ্গ দিয়ে পালান এল চাপো।

স্ত্রী এবং রক্ষিতাদের ওপর নজর রাখতে নিজের ফোনে স্পাই সফটওয়্যার ব্যবহার করতেন গুজমান। ওই সফটওয়্যারের কল্যাণে আদালতে তার পাঠানো অনেক মেসেজ প্রমাণ হিসেবে পেশ করতে সক্ষম হয় এফবিআই।

কেন গুরুত্ব পাচ্ছে এই বিচার?

যুক্তরাষ্ট্রে এখন পর্যন্ত মেক্সিকোর ড্রাগ কার্টেলের যতজন প্রধানের বিচার হয়েছে, তাদের মধ্যে সবচেয়ে কুখ্যাত গুজমান। মেক্সিকোতে পুলিশের হেফাজত থেকে দু’বার পালিয়ে এবং অসংখ্যবার গ্রেপ্তার এড়িয়ে আলোচনায় আসেন গুজমান।

তার নিজের এলাকার অনেকের দৃষ্টিতে গুজমান বীরোচিত এক ব্যক্তিত্ব। সেসব এলাকায় তাকে উৎসর্গ করে লোকগানও প্রচলিত আছে। জেল থেকে পালানোর পর ২০১৬ সালে মেক্সিকোর এক জঙ্গলে থাকার সময় হলিউড অভিনেতা শন পেনকে একটি সাক্ষাৎকার দেন তিনি।

সেখানে নিজেকে বিশ্বের শীর্ষ হেরোইন, কোকেন, মেথ্যাম্ফেটামিন ও মারিজুয়ানা সরবরাহকারী বলে দাবি করেন। কৌসুলিদের বক্তব্য অনুযায়ী, অতীতে গুজমান সাক্ষীদের ভয় দেখানো ও হত্যার সঙ্গেও জড়িত ছিলেন। সেকারণে এই বিচারের জুরিদের নাম প্রকাশ করা হয়নি এবং তাদেরকে সশস্ত্র নিরাপত্তা রক্ষীসহ ব্রুকলিনের আদালতে আনা-নেওয়া করা হয়। সূত্র: বিবিসি

ঢাকা টাইমস/১৩ফেব্রুয়ারি/একে

সংবাদটি শেয়ার করুন

আন্তর্জাতিক বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

আন্তর্জাতিক এর সর্বশেষ

নির্বাচন করার জন্য অর্থ নেই, সরে দাড়ালেন ভারতীয় অর্থমন্ত্রী

সিরিয়ার আলেপ্পোতে ইসরায়েলি হামলায় নিহত ৩৮

দ. আফ্রিকায় বাস খাদে পড়ে নিহত ৪৫, অলৌকিকভাবে বেঁচে গেল শিশু

দুই নিরস্ত্র ফিলিস্তিনিকে গুলি করে হত্যার পর বালিচাপা দিলো ইসরায়েলি সেনারা 

গাজায় যুদ্ধাপরাধে জড়িতদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করতে আইসিসির প্রতি আহ্বান

কলকাতা বিমানবন্দরে চলল গুলি, নিরাপত্তা কর্মীর মৃত্যু

ইসরায়েলের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞার আহ্বান জানিয়ে হুমকি পেলেন জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞ

মস্কোতে কনসার্টে হামলা: এখনো প্রায় ১০০ জন নিখোঁজ 

বাবা কোটিপতি, ২০ বছর ধরে জানতই না ছেলে!

গাজা যুদ্ধের ১৭৩তম দিন, প্রাণহানি বেড়ে সাড়ে ৩২ হাজার

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :